নান্দনিক সৌন্দর্যের ‘রূপসী’ ঝরনা

সুপ্রভাত ডেস্ক :
“ঝর্ণা! ঝর্ণা! সুন্দরী ঝর্ণা!
তরলিত চন্দ্রিকা! চন্দন – বর্ণা!
অঞ্চল সিঞ্চিত গৈরিকে স্বর্ণে,
গিরি – মল্লিকা দোলে কুন্তলে কর্ণে
তনু ভরি’ যৌবন, তাপসী অপর্ণা!”
সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের মতো আরো বহু কবি ঝরনার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে অসংখ্য কবিতা লিখেছেন। কাব্যিক ছন্দে ঝরনার অপরূপ সৌন্দর্যের গুণগান গেয়ে গেছেন। ভ্রমণপিপাসুদের যেমন নদীর বহমানতা, সমুদ্রের উন্মত্ততা মুগ্ধ করে; ঝরনার প্রলয়ংকারী সৌন্দর্যও অদ্ভুত আকর্ষণে কাছে টানে। তাই তো নানা প্রতিকূলতা পেরিয়েও দীর্ঘ পথ হেঁটে, কখনো বা খাড়া পথ বেয়ে হলেও ভ্রমণ পিপাসুরা ঝরনার কোলে ছুটে যায়।
ঝরনার খোঁজে অনেকেই সাম্প্রতিক সময়ে ছুটে চলেছেন ‘রূপসী’র পাদদেশে। হ্যাঁ, ঝরনার নামই রূপসী! মিরসরাই উপজেলার ওয়াহেদপুর ইউনিয়নের বড়কমলদহ পাহাড়েই এর অবস্থান।
রূপসী’র বর্ণনা হুট করেই লিখে ফেলা সহজ ব্যাপার না। পাহাড়ের গাঁ বেয়ে জলের ধারা মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য তৈরি করে নেমে আসে নিচুতে। কয়েক কিলোমিটার পাহাড়ি ঝিরিপথ পাড়ি দেওয়ার পর সেই ঠা-া জল জুড়িয়ে দেয় প্রাণ। প্রকৃতির রুক্ষতাকে কাটিয়ে ঝুম বর্ষায় পাহাড়ের রূপে অন্যরকম আবহ। চারপাশজুড়ে সবুজে সাজানো।
ঝিরিপথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে কানে ভেসে আসে পাখির কিচির মিচির, রং বাহারি প্রজাপতির আনাগোনা। পথে পথে যেতে যেতে দেখা মিলবে পাহাড় আর ঝিরিপথের নান্দনিক সৌন্দর্য। মাইল চারেক হাঁটার পর কানে ভেসে আসবে ঝরনার কলতান; তখনই হয়তো বলে উঠবেন, এইতো ‘রূপসী’!
মহাসড়ক থেকে মাত্র দেড় কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত এই রূপসী ঝরনা। এই ঝরনার সৌন্দর্যের পাশাপাশি এর যাওয়ার পথটিও মানুষকে আকর্ষণ করে। গ্রামীণ সবুজ মেঠো পথ পার হয়ে তবেই যেতে হয় এখানে। মেঠোপথ ধরে এগুলেই পাহাড়ের পাদদেশ। এখান থেকে বাম দিকে ৫০ গজ হাঁটলেই বিশাল ছড়া, যেটি রূপসীর প্রবেশপথ।
দু’পাশে মাথা উঁচু করে সগর্বে দাঁড়িয়ে আছে পাহাড়, সবুজ প্রকৃতি আর এখানে সেখানে দৃষ্টি নন্দন ছড়া। এই রূপসী ৩টি ঝরনার সংমিলিত রূপে অন্যদের থেকে নিজেকে আলাদা করে নিয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই অনেক পর্যটকের ভিড় হয় এখানে। রূপসী ঝরনার রূপ সুধায় নিজেকে উজাড় করে দিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে এর শীতল জল ধারায়। রূপসী যাওয়ার পথে সবুজ প্রকৃতির বুকে সাড়া দিয়ে উঠবে বিভিন্ন রকমের পাখপাখালি। আর ঝিঁ-ঝিঁ পোকার অনবরত ডাক তো আছেই।
যাওয়া-থাকা
চট্টগ্রামগামী যেকোনো বাসে করে সীতাকু-ের বড় দারোগাহাট যেতে হবে। এস আলম, শ্যামলী, সৌদিয়া, ইউনিক, হানিফ, ঈগল, এনা, সোহাগ টি আর প্রভৃতি এসি ও নন-এসি বাস চট্টগ্রাম যায় প্রতিদিন। এছাড়া ট্রেনে চড়েও সীতাকু- নেমে, এরপর বড় দারোগাহাট যেতে পারেন। এরপর লেগুনায় যাবেন ইটভাটা পর্যন্ত। এর পরের রাস্তা দিয়ে পূর্ব দিকে ২০-২৫ মিনিটের হাঁটা পথ। বাকি পথ ছড়া ধরে গেলেই কমলদহের ঝিরিপথ পেয়ে যাবেন।
মিরসরাইতে থাকার জন্য ভালো কোনো আবাসিক হোটেল নেই, তাই আপনাকে সীতাকুন্ডে থাকতে হবে। যদিও সীতাকুন্ডেতেও তেমন ভালো মানের আবাসিক হোটেল নেই। বাজারের ভেতরে কয়েকটি আবাসিক হোটেল আছে। খবর : ডেইলিবাংলাদেশ’র।