নদীর মাঝখানে বর্জ্য শোধনাগার কীভাবে হয়

কর্ণফুলী নদীর মাঝখানে বর্জ্য শোধনাগার স্থাপন করার উদ্যোগ নিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। নগরীর কল্পলোক আবাসিক এলাকার পূর্ব পাশে এবং বোয়ালখালী ও শিকলবাহার পশ্চিম পাশে কর্ণফুলীর মাঝখানে জেগে ওঠা ৩৫ একর ভাসমান চরে এই প্রকল্প স্থাপনের জন্য জেলা প্রশাসনের কাছে অনাপত্তিপত্র চেয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এটি বাকলিয়ার চর নামে পরিচিত। এ ধরনের নদী ও পরিবেশ বিধ্বংসী পদক্ষেপের সংবাদে সে স্থানে অবস্থান ধর্মঘট করেছে কর্ণফুলী রক্ষায় জনগণের প্রতিবাদ মঞ্চ।
ঢাকার কাছে তুরাগ নদকে দখল ও দূষণ থেকে বাঁচানোর উদ্যোগের অংশ হিসেবে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করেছিলো পরিবেশবাদী একটি সংগঠন। এ প্রেক্ষিতে দেয়া আদেশে হাইকোর্ট তুরাগ নদকে ‘জীবন্ত সত্তা (লিভিং এনটিটি)’ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছিলেন।
সে রিটের আইনজীবী মনজিল মোরশেদ সে সময় বলেছিলেন, আদালতের ঘোষণা অনুযায়ী তুরাগসহ নদ-নদীগুলো এখন থেকে মানুষ বা প্রাণী যেমন কিছু আইনি অধিকার পায় তেমনি অধিকার পাবে। নদীর কিছু আইনি অধিকার তৈরি হবে এ রায়ের ফলে। ফলে নদী নিজেই তার ক্ষতির বা দখলের বিষয়ে আদালতের দ্বারস্থ হতে পারবে। তবে নদী তো আর নিজে যেতে পারবেনা। সেক্ষেত্রে কেউ তার প্রতিনিধি হয়ে ক্ষয়ক্ষতিগুলো আদালতকে জানালে তার প্রতিকার পাবে আদালতের রায়ে আমাদের দেশের নদীগুলোকেও জীবন্ত সত্তা, জুরিসটিক পারসন বা লিগ্যাল পারসন হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে এবং মূলত এর মাধ্যমে মানুষের মত নদীর মৌলিক অধিকার স্বীকৃত হল।’ এখন নদ-নদীর ক্ষতি করলে যে কেউ নদীর পক্ষে মামলা করতে পারবেন।
আমরা চাই নদীর পক্ষ নিয়ে নদী রক্ষায় কেউ মামলা করুক। তাতেও যদি রক্ষা পায় নদীটি। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না মানবসভ্যতার ইতিহাসে নদীর ভূমিকা বড় অংশ জুড়ে আছে। আদিকাল থেকে মানববসতি ও সভ্যতা গড়ে উঠেছে নদীকে কেন্দ্র করে। এই নদী মানুষের তৃষ্ণার পানি যুগিয়েছে, কৃষিকাজ থেকে শুরু করে প্রাত্যহিক কাজে পানির জোগান দিয়েছে। মাছের মধ্য দিয়ে আমিষের জোগান দিয়েছে। কিন্তু সে নদীকে দখলে-দূষণে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে মানুষই।
কর্ণফুলীকে হত্যা করার পরিকল্পনা যারা নিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া মানুষ হিসেবে আমাদের অন্যতম দায়িত্ব। এটি অন্য দশটির মতো নদী নয়, এটি আমাদের অর্থনীতির লাইফলাইন। কাজেই পরিবেশ রক্ষার পাশাপাশি অর্থনীতিকে রক্ষার খাতিরেও কর্ণফুলী নদীকে বাঁচাতে হবে।