নগরীতে আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়েছে তরুণদের মধ্যে

মনোবিজ্ঞানীরা মনে করেন, তরুণদের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা এবং কোনো একটা চাপের মধ্যে পড়লে তখন হয়তো তারা আত্মহত্যার চেষ্টা করে। বলা যায়, তরুণদের মধ্যে আবেগ নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতাটা কমে যাচ্ছে, যেটা আশঙ্কার কথা। আত্মহত্যার কারণ সব সময় একটা হয় না, বহুমাত্রিক বিষয়। স্কুল-কলেজে পড়ুয়া তরুণদের মধ্যে এই হারটা বেশি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, বিশ্বব্যাপী নারীদের তুলনায় পুরুষেরা দ্বিগুণ সংখ্যায় আত্মহত্যা করছে। চট্টগ্রামেও আত্মহত্যায় নারীর চেয়ে পুরুষরা এগিয়ে। বন্দরনগরীতে ২০২২ সালে ২৫৯ ঘটনার মধ্যে ১৪২ পুরুষ ও ১১৭ নারী স্বেচ্ছায় জীবন দিয়েছেন। একের পর এক আত্মহত্যার ঘটনা- ভাবাচ্ছে পুলিশকেও।
একটি জাতীয় দৈনিকের প্রতিবেদন থেকে জানা যায় নগরে আত্মঘাতী হওয়ার প্রবণতা বেশি বন্দর-ইপিজেড এলাকায়। এখানে এক বছরে ৪৩ পুরুষ ও ৩৪ নারী এ পথে হেঁটেছেন। তবে এর বিপরীত ছবি নগরের খুলশীতে। অভিজাত এ এলাকাটিতে এক বছরে আত্মহননের ঘটনা ঘটেছে মাত্র একটি। তাদের এ পথে পা বাড়ানোর পেছনে খুঁজে পাওয়া গেছে ১১ কারণ। এর মধ্যে রয়েছে- পারিবারিক কলহ, স্বামী-স্ত্রী ঝগড়া, আর্থিক অনটন, জীবিকার সংকট ও অনিশ্চয়তা, ঋণ পরিশোধ, প্রেমঘটিত বিবাদ, মা-বাবার সঙ্গে অভিমান, হতাশা, যৌতুক ও মানসিক বিষাদ। গেল বছরের আত্মহত্যাবিষয়ক বিভিন্ন থানার নথি ও পুলিশের সূত্র থেকে এসব তথ্য মিলেছে।
নগরের বন্দর এলাকায় খুব তুচ্ছ পারিবারিক বিষয় নিয়ে এসব ঘটনা ঘটছে। এখানে মূলত পারিবারিক অশান্তি তথা স্বামী-স্ত্রী ঝগড়া, আর্থিক টানাপোড়েন, ঋণ পরিশোধ করতে না পারার কারণেই আত্মহত্যার ঘটনা ঘটছে।
আত্মহত্যা নিয়ে চট্টগ্রামের এক এনজিওর পরিচালিত সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, পারিবারিক সমস্যায় ৪১ দশমিক ২ শতাংশ, পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়া ১১ দশমিক ৮ শতাংশ, বৈবাহিক সমস্যায় ১১ দশমিক ৮ শতাংশ, ভালোবাসায় প্রতারিত হয়ে ১১ দশমিক ৮ শতাংশ, বিবাহবহির্ভূত গর্ভধারণ ও যৌন সম্পর্ক নিয়ে ১১ দশমিক ৮ শতাংশ, স্বামীর নির্যাতনে ৫ দশমিক ৯ শতাংশ এবং অর্থকষ্টে ৫ দশমিক ৯ শতাংশ নারী-পুরুষ আত্মহত্যা করেন।
চট্টগ্রাম নগরে ১৬ থেকে ২৫ বয়সের তরুণদের হতাশা বেশি। পিছিয়ে নেই তরুণীরাও। শুধু এক বছরেই ১৬ থেকে ২৫ বছর বয়সী ৬৫ তরুণ এবং ৫৮ তরুণী আত্মহননের পথ বেছে নেন। এছাড়া ১০ থেকে ১৫ বছরের আট কিশোর ও ১৪ কিশোরী, ২৬ থেকে ৩৫ বছরের ২৬ পুরুষ, ২৮ নারী, ৩৬ বছরের ঊর্ধ্বে ৪৩ পুরুষ ও ১৭ নারী নিজের প্রাণ নিজেই হরণ করেন।
আত্মহত্যা কখনো স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া নয়। আমাদের জীবনে চাপ থাকবেই, নানা অনিয়ম-অবিচার থাকবে, অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা থাকবে। এসব ঘটনা মোকাবিলা করেই সামনে এগোতে হবে। প্রত্যেক মানুষ বেঁচে থাকার প্রবণতা নিয়েই জন্মগ্রহণ করে। বহু চাপ মোকাবিলা করার দক্ষতা থাকতে হয়।