ধানজুড়ি : নান্দনিক মাটির ঘরের জন্য বিখ্যাত গ্রাম

সুপ্রভাত ডেস্ক :
গ্রামের নাম ধানজুড়ি। নাম শুনেই হয়তো চোখের সামনে ভেসে উঠবে দিগন্ত জোড়া ধানের মাঠ। আদতে গ্রামটিতে গেলে মাটির ঘরই সবচেয়ে বেশি নজর কাড়বে। এ গ্রামের বিশেষত্বই এটি। প্রতিটি ঘরেই রয়েছে নান্দনিকতার ছোঁয়া। ধানজুড়ির অবস্থান দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার খানপুর ইউনিয়নে। এটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠি সাঁওতাল অধ্যুষিত একটি গ্রাম।
গ্রামটিতে রয়েছে ১১৫টি বসতঘর, অধিকাংশই মাটির বাড়ি। প্রতিটি বাড়ি বিভিন্ন ধরনের আলপনা দিয়ে করা রয়েছে সুসজ্জিত। সেই সঙ্গে পুরো গ্রামটিই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, ছিমছাম ও সুন্দর করে সাজানো। দৃষ্টিনন্দন এসব ঘর থেকে প্রতিদিনই বিভিন্ন এলাকা থেকে ওই গ্রামে ভিড় করেন দেশ-বিদেশের পর্যটকরা।
স্থানীয় আদিবাসী যুবক নরেন কিসকু জানান, ধানজুড়ি গ্রামটিতে বিভিন্ন ধরনের ফুল ও ফলের গাছ লাগিয়ে সাজিয়ে তোলা যায়, তাহলে এটিও হতে পারে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষনীয় একটি স্থান।
ধানজুড়ি গ্রামের বাসিন্দা কেরোবিন হেমব্রম বলেন, ধানজুড়ি গ্রামের সব বাড়িই মাটি দিয়ে তৈরি। আমাদের জনগোষ্ঠির ঐতিহ্যের ধারক হিসেবে পূর্বপুরুষদের আমল থেকেই এ মাটির বাড়ি নির্মাণ করে ওই ঘরে পরিজন নিয়ে বসবাস করে আসছি। এখনও মাটির বাড়িতে পরিবার পরিজন নিয়ে থাকছি। এছাড়া মাটির ঘরের তলার ওপরে বর্ষাকালে ধান রাখা যায়। এই মাটির বাড়িগুলোতে যেমন আদ্রতা থাকে না তেমনি বাড়ি তৈরিতে খরচও কম হয়।
গ্রামটিতে ঘুরতে এসেছেন ইয়াসমিন সরকার। তিনি বলেন, বিরামপুর উপজেলার ধানজুড়ি গ্রামটি জেলার অন্য গ্রামগুলোর তুলনায় ভিন্ন। এখানকার ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষ অত্যন্ত পরিপাটি করে গ্রামটিকে সাজিয়েছেন। সড়কের দুই পাশে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে তারা বাড়ি নির্মাণ করেছেন। সাধারণত গ্রামগঞ্জে এখন আর মাটির বাড়ি চোখে পড়ে না। কিন্তু এখানকার প্রত্যেকটি বাড়িরই আলাদা বৈশিষ্ট্য রয়েছে।
এ গ্রামের মেয়েরা ছোটবেলা থেকেই মাটির বাড়ির কাজ শিখে। প্রতিটি মাটির বাড়িতে বিভিন্ন ধরনের আল্পনা তৈরি করে আরও সুন্দর করে তোলেন। দেয়াল থেকে শুরু করে, জানালা, দরজা, সবজায়গায় সুন্দর আলপনা আঁকেন। বছরে দু’বার রঙ ও আল্পনায় সাজানো হয় বাড়ি। এছাড়াও বিভিন্ন উৎসবের আগে বাড়িগুলোকে সাজিয়ে তোলা হয়।
গৃহবধূ বাসন্তি রাণী বলেন, বর্তমান সময়ে আমরা ইটের বাড়ি না করে আদিকালের সেই মাটির বাড়ি তৈরি করেছি। এর কারণ এগুলো সহজেই লেপ দিয় সুন্দর করে তোলা যায়। নিজেদের মতো করে সাজাতে পারি। সেজন্য আমরা ঐতিহ্য হিসেবে মাটির বাড়ি এখনও ধরে রেখেছি।
বিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পরিমল কুমার সরকার জানান, সব ঠিক থাকলে ধানজুড়ি গ্রাম ও ঝলুন্ত ব্রিজের সমন্বয়ে একটি পর্যটন স্থান গড়ে তোলা সম্ভব হবে। খবর : ডেইলিবাংলাদেশ’র।