দাম কমার পরও ‘ক্রেতা কম’

খাতুনগঞ্জের বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজ

রাজিব শর্মা »

দীর্ঘ আড়াই মাস আমদানি বন্ধ থাকার পর খাতুনগঞ্জে আসতে শুরু করেছে ভারতীয় পেঁয়াজ। মঙ্গলবার রাতেই ৭ ট্রাক ভারতীয় পেঁয়াজ বাজারে আসার পর বুধবার সকাল থেকেই কমতে শুরু করেছে দাম। দেশীয় পেঁয়াজের দামও কমেছে কেজিতে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। গতকাল বুধবার খাতুনগঞ্জ ও চাক্তাই পেঁয়াজের বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে মানভেদে ২৫ থেকে ৫০ টাকায়। দেশীয় পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে কেজিতে ৫০ থেকে ৫৫ টাকায়।

ভারত থেকে হিলি, ভোমরা, সোনামসজিদসহ বিভিন্ন স্থলবন্দর দিয়ে যে পেঁয়াজ আসছে সেগুলো সীমান্তের ওপারে আড়ত থেকে সংগ্রহ করা। দেশে মূলত পেঁয়াজ আসে মহারাষ্ট্রের নাসিক থেকে। সেই পেঁয়াজ বাংলাদেশে পৌঁছবে শুক্রবার। এতে পেঁয়াজের দাম আরো কমার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান ব্যবসায়ী ও আড়তদাররা।

এদিকে, আমদানি পেঁয়াজ বাজারে আসলে দাম কমানোর পরও কোন ক্রেতা নেই বলে জানান ব্যবসায়ী ও আড়তদাররা। অথচ রোববার সারাদিন দেশীয় পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৯২ থেকে ৯৫ টাকা দরে।

চাক্তাইয়ের পেঁয়াজ আড়তদার নিউ রহমানিয়া ট্রের্ডাসের স্বত্বাধিকারী ইরফানুল ইসলাম বলেন, ভারতীয় পেঁয়াজ আসার প্রথম দিন থেকেই দেশীয় পেঁয়াজের বাজারে ধস নেমেছে। এতে ক্রেতারা খুশি হলেও আজ (বুধবার) ক্রেতার চাপ ছিল কম। হয়তো ক্রেতারা আরো কমার আশা করছেন। আজকে উন্নতমানের ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি করেছি ৫০ থেকে ৫৫ টাকায়। আর এতদিন ধরে যে দেশীয় পেঁয়াজ ৯২ থেকে ৯৫ টাকায় কিনেছি তা বিক্রি করতে হয়েছে ৫০ টাকায়। কিন্তু দেশীয় পেঁয়াজ কেউ কিনছে না।

খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস বলেন, মঙ্গলবার রাতে ৭ ট্রাক পেঁয়াজ আসার পর থেকে বুধবার সকাল থেকেই ভারতীয় পেঁয়াজ ২৫ টাকা থেকে ৫৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। কিন্তু বাজারে তেমন ক্রেতা নেই। এছাড়া, চাহিদার তুলনায় অধিক পেঁয়াজ আমদানি হওয়ায় বাজারে পেঁয়াজের মূল্যে রীতিমত ধস নেমেছে।

গত দুই দিন আগেও যেসব ব্যবসায়ীরা ৯০ থেকে ৯২ টাকায় পেঁয়াজ কিনেছে তাদের বিক্রি করতে হচ্ছে ৫০ টাকায়। এতে ব্যবসায়ীদের ভারতীয় পেঁয়াজের দামের সাথে সমন্বয় রেখে বিক্রি করতে কেজিপ্রতি ৩০ টাকা লোকসান রয়েছে বলে জানান এ ব্যবসায়ী।

চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন জানান, সরকার ব্যবসায়ীদের পেঁয়াজ আমদানির সুযোগ দিয়ে সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গতকাল আড়তে পেঁয়াজ আসার পর থেকে ক্রেতারা অনেক খুশি। তাছাড়া বর্তমান কৃষকের হাতেও কোন পেঁয়াজ নেই। যার ফলে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ আসলেও কৃষকরাও লোকসানে পড়বে না।

এদিকে পাইকারি বাজারের পাশাপাশি খুচরা বাজারেও দাম কমতির দিকে। গতকাল খুচরায় পেঁয়াজ কেজি বিক্রি হয়েছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকায়। যা এতদিন বিক্রি হয়েছিল ৯৫ টাকার উপরে।

বক্সিরহাটের মাবিয়া স্টোরের হারুন সওদাগর বলেন, পাইকারি বাজার থেকে প্রতিকেজি পেঁয়াজ কিনতে হয়েছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকার মধ্যে কেনা হয়েছে। বর্তমান পূর্বের কেনা দরেই বিক্রি করছি।

জানা যায়, পেঁয়াজ আমদানি অনুমতিপত্র দেয় সরকারের কৃষি বিভাগের উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ দপ্তর। সোমবার থেকে অনুমতি দেওয়া শুরু হলে মঙ্গলবার রাতের শুরুতে ২ লাখ ৫৪ হাজার টন পেঁয়াজের অনুমতিপত্র দিয়েছে কৃষি বিভাগ। এতে সোম ও মঙ্গলবার দুই দিনে ৪ লাখ ৩৩ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতিপত্র খোলা হয়েছে। এর মধ্যে মঙ্গলবার পর্যন্ত দেশে ১ হাজার ২৮৮ টন পেঁয়াজ দেশে পৌঁছেছে।