জ্বালাও-পোড়াও করলে আমেরিকার ভিসা পাবে না : প্রধানমন্ত্রী

সুপ্রভাত ডেস্ক »

বাংলাদেশের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতির দিকে ইঙ্গিত করে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আজ আন্দোলন করবে, সংগ্রাম করবে। আর আমাদের উৎখাত করবে। একদিকে ভালো হয়েছে, সেটা হলো এখন যদি জ্বালাও-পোড়াও করে, অগ্নিসন্ত্রাস করে, মানুষ খুন করে তাহলে আমেরিকার ভিসা পাবে না। যাদের কথায় নাচে, তারাই খাবে। আমাদের কিছু করা লাগবে না। ওটা নিয়ে আমাদের চিন্তার কিছু নাই।

গতকাল বুধবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ঐতিহাসিক ছয় দফা দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
বিএনপির আন্দোলন কর্মসূচির দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, তারা কিছু লোক জোগাড় করবে, বসে থাকবে, আন্দোলন করবে। করতে দাও, করতে দেবেন। আমি বলে দিয়েছি যত আন্দোলন করতে চাইবে করুক। আমরা কিছু করবো না। খবর বাংলাট্রিবিউনের।

২০১৩, ১৪, ১৫-এর মতো দলটি যাতে আগুন সন্ত্রাস করতে না পারে সেদিকে নজর রাখার নির্দেশ দিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, নিজের চোখ, ক্যামেরা সবসময় ঠিক রাখতে হবে। কারণ ওদের আবার ওই দোষ আছে তো। একটা উসকানি দিয়ে তারপর ছবি উঠিয়ে ওই বাইরের কাছে কাঁদতে থাকবে।
বিএনপি জনগণের ক্ষমতায় বিশ্বাস করে না মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বাস করে কোথা থেকে এসে নাগরদোলা চাপিয়ে তাদের ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে। কেউ দেবে না। দেয় না কখনও। ব্যবহার করে। ব্যবহার করবে, কিন্তু ক্ষমতা দেবে না। এটা হলো বাস্তবতা, বাস্তব কথা। ক্ষমতা একমাত্র জনগণই দিতে পারে। জনগণের সেই অধিকার, সচেতনতা আমরাই দিতে পেরেছি।

ভোটের অধিকার কেউ যদি কেড়ে নেয়, মানুষ তাদের ছেড়ে দেয় না
তিনি বলেন, আজ গণতন্ত্রের কথা বলে, ভোটের অধিকারের কথা বলে। খালেদা জিয়া ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন করেছিল। কত ভোট পড়েছিল? ২-৩ শতাংশ ভোটও পড়ে নাই। কিন্তু ঘোষণা দেওয়া হলো সব ভোট নিয়ে তিনি তৃতীয়বারের (দ্বিতীয়বার হবে) মতো প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশের জনগণ তাদের ভোটের অধিকার নিয়ে এখন সচেতন। সেই সচেতনতা আমরা সৃষ্টি করেছি। বাংলাদেশের জনগণের ভোটের অধিকার কেউ যদি কেড়ে নেয়, মানুষ তাদের ছেড়ে দেয় না। খালেদা জিয়া ১৫ ফেব্রুয়ারি ভোট চুরি করেছিল বলেই এই দেশের মানুষ ফুঁসে উঠেছিল, আন্দোলন করেছিল। এর ফলে ৩০ মার্চ খালেদা জিয়া বাধ্য হয়েছিল পদত্যাগ করতে। এই কথাটা সবার মনে রাখা উচিত।

শেখ হাসিনা বলেন, এ ভোট চুরি ও ডাকাতি যারা করেছিল আজ তাদের মুখে ভোটের কথা শুনি, গণতন্ত্রের কথা শুনি। মিলিটারি ডিকটেটরের পকেট থেকে বের হওয়া দল থেকে গণতন্ত্রের কথা শুনতে হয়।

জনগণ ভোট দিতে পারলে আওয়ামী লীগ কোনোদিন পরাজিত হয় নাই
২০০১ সালের নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি করে আওয়ামী লীগকে হারানো হয়েছিল দাবি করে দলটির সভাপতি বলেন, আওয়ামী লীগ জনগণের ভোটে সবসময় জয়ী হয়েছে। জনগণ ভোট দিতে পারলে আওয়ামী লীগ কোনোদিন পরাজিত হয় নাই। আওয়ামী লীগ যতবার ক্ষমতায় এসেছে জনগণের ভোটেই এসেছে। তার বাইরে কখনও ক্ষমতা দখল করে নাই। আজ তারা বলে ভোটারবিহীন। কে ভোটারবিহীন? ভোটারবিহীন তো ছিল খালেদা জিয়া, জিয়াউর রহমান। ভোটারবিহীন ছিল এরশাদ। এটা তারা ভুলে গেছে? তারা তো ভোটারবিহীন হিসেবেই ক্ষমতা দখল করেছে। খালেদা জিয়াকে উপযুক্ত জবাব দিয়ে দিয়েছে এই দেশের জনগণ।

২০০১ সালের নির্বাচন পরবর্তী বিএনপি-জামায়াত জোটের কর্মকা-ের সমালোচনা করেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, যে ‍নির্বাচন (২০০৭ সালের বাতিল হওয়া নির্বাচন) ঘোষণা দিয়েছিল সেখানেও তাদের অনেকেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। বাংলাদেশের মানুষ ওই ভোট চুরি করা মানে নাই। আন্দোলন করেছে, সংগ্রাম করেছে, খালেদা জিয়ার পতন ঘটেছে। কাজেই দুই-দুইবার ভোট চুরির অপরাধে খালেদা জিয়ার পতন ঘটেছে। এই কথা দেশের মানুষকে মনে রাখতে হবে।
ওরা আবার গণতন্ত্রের কথা কয়

বিএনপির মুখে গণতন্ত্রের কথা শুনলে মনে হাসি পায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ওরা আবার গণতন্ত্রের কথা কয়। গণতন্ত্রকে সুরক্ষা করেছে আওয়ামী লীগ। শুধু গণতন্ত্র না, জনগণের ভোটের অধিকার সুরক্ষা করেছে। আওয়ামী লীগ জনগণের ভোটেই নির্বাচিত হয়ে এসেছে।

বিএনপি-জামায়াতের দুঃশাসনের কারণে দেশে ২০০৭ সালে জরুরি অবস্থা এসেছিল বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জরুরি অবস্থা এসে ভোটার তালিকা সংশোধন করেছে এটা ঠিক। আমাদের দাবিই ছিল এটা। স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স। এটাও আমাদের দাবি ছিল। নির্বাচন কমিশন যাতে নিরপেক্ষ হয় এর জন্য আমরা আইন করে দিয়েছি। তার ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন নির্বাচিত হচ্ছে, আমরা সরকার করছি না। তাদের অর্থনৈতিক স্বাধীনতাও আমরা দিয়েছি। যাতে জনগণের ভোটের অধিকার সুরক্ষিত থাকে। এই দেশে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা যাতে থাকে তার ব্যবস্থা আওয়ামী লীগই করেছে। হাইকোর্টের রায়ের ভিত্তিতে আমরা সংবিধান সংশোধন করে গণতন্ত্রকে সুরক্ষিত করেছি।
প্রত্যেকটা দেশে মুদ্রাস্ফীতি

সরকারপ্রধান বলেন, সরকার ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দিতে পারলেও দুর্ভাগ্য একদিকে করোনাভাইরাসের তিনটা বছর, সবকিছুর চলাচল বন্ধ। অর্থনীতির চালিকা স্থবির। উন্নত দেশগুলোতে মুদ্রাস্ফীতি, পরিবহন ব্যয় বেড়েছে। এরপর এলো রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। তারপর নিষেধাজ্ঞা পাল্টা নিষেধাজ্ঞায় প্রতিটি দ্রব্যের দাম বেড়ে গেলো। প্রতিটি জিনিসের দাম এমনভাবে বেড়ে গেছে সেটা কেনা, আনা, পরিবহন করা। আবার এ জাহাজে এলো কেন? সেটা আসতে দেবে না, ভিড়তে দেবে না। ওই জাহাজে এলো কেন সেটা ভিড়তে দেবে না। খালি দেশের ওপর না, জাহাজের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে বসে থাকলো আমেরিকা। যার ফলে প্রত্যেকটা দেশে মুদ্রাস্ফীতি।

বুদ্ধি বেচে জীবিকা নির্বাহ করে যারা-বুদ্ধিজীবী
বুদ্ধিজীবীদের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের যারা জ্ঞানী-গুণী আছেন বুদ্ধি বেচে জীবিকা নির্বাহ করে যারা-বুদ্ধিজীবী। অনেক পড়াশোনা জানে এটা ঠিক। অনেক কিতাব পড়ে। ওই কিতাবই পড়েছে। আমি বিদ্যুৎ দিয়েছি। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে বসে তারা বক্তৃতা করে। ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি। সেটার সুযোগ নেয়।
আমরাও জানি কখন কোন জবাবটা দিতে হয়, কখন কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়

দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে সীমিত আয়ের মানুষ কষ্ট পাচ্ছে বলে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কিছু লোক আছে সুযোগটা নেয়, মজুত করে রাখে। পেঁয়াজ উৎপাদন যখন করেছি তখন দাম হু হু করে বেড়ে গেলো। আমদানি করার কারণে অমনি দাম কমে গেছে। মজুতদাররা অপকর্ম না করলে উৎপাদিত পেঁয়াজ দিয়েই আমাদের হতো। আমরাও জানি কখন কোন জবাবটা দিতে হয়, কখন কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

লোডশেডিংয়ে মানুষের কষ্ট হচ্ছে তা স্বীকার করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষের কষ্টটা আমি উপলব্ধি করতে পারি। আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি। এই দুই একদিনের মধ্যে ৫০০ মেগাওয়াট যুক্ত হবে। ১৫ দিন পর আর কষ্ট থাকবে না। কিন্তু দুর্ভাগ্য যে অস্বাভাবিক গরম পড়েছে। বাংলাদেশে ৪১ ডিগ্রি পর্যন্ত তাপমাত্রা হবে তা আমরা ভাবতে পারি না। আর বৃষ্টি নাই। সেখানেও আরেকটা কষ্ট। এ কষ্টটা সবার হচ্ছে। তা আমরা জানি। তারপরও আমরা বারবার বসে এ কষ্টটা লাঘব করার চেষ্টা করছি।

তোরা তো ভোট ডাকাত
তিনি বলেন, যারা আজ গণতন্ত্র হরণ করে, হত্যা, ক্যু ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসে, তাদের পকেট থেকে তৈরি হওয়া দল আজকে গণতন্ত্রের কথা বলে। নির্বাচনে কারচুপির কথা বলে। আরে কারচুপি না, তোরা তো ভোট ডাকাত। তোরা তো গণতন্ত্রই জানিস না। তোরা জানিস কারফিউ গণতন্ত্র। তাদের কাছ থেকে গণতন্ত্রের ছবক শুনতে হয়। এটাই বাঙালির দুর্ভাগ্য। যারা গণতন্ত্র আনলো তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনলো। তাদের ওপর অভিযোগ দেওয়ার চেষ্টা। এটা কিছুই না। দেশের মানুষের উন্নয়ন তাদের পছন্দ না। বাঙালির হাড্ডিসার, কংকালসার শরীর দেখিয়ে বিদেশ থেকে টাকা আনে। এটাই তারা করতে চায়। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের জনগণের কাছে গিয়ে দেশের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরার নির্দেশনা দেন শেখ হাসিনা।