দাদন নিয়ে বিপাকে শতাধিক জেলে

ইলিশ ধরা পড়েছে কম

আজ থেকে ফের নিষেধাজ্ঞা

রাজু কুমার দে, মিরসরাই »
ইলিশ ধরার আশায় দাদন ও বিভিন্ন এনজিও থেকে মোটা অঙ্কের ঋণ নিয়ে নৌকা ও জাল কিনে বিপাকে পড়েছেন মিরসরাই উপজেলার সাহেরখালী ঘাটের প্রায় শতাধিক জেলে। সাগরে ইলিশ মাছ ধরা না পড়ায় দাদন ও ঋণের টাকা পরিশোধ করতে পারছেন না তারা। এছাড়া প্রতি বছরের ন্যায় চলতি বছরও আশ্বিনের অমাবস্যা ও পূর্ণিমা মাঝে রেখে ৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিন সাগরে ইলিশ মাছ আহরণ বন্ধ ঘোষণা করায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন জেলেরা।
জানা গেছে, সাহেরখালী স্লুইস গেইট এলাকায় প্রতি বছর ইলিশের মৌসুম এলে উৎসবের আমেজ থাকে। সাহেরখালী, মায়ানী ও মঘাদিয়া ইউনিয়নের জেলেরা ইলিশ মৌসুমের আগে দাদন ও বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে নতুন নৌকা তৈরি ও জাল কিনে প্রস্তুতি নিয়ে থাকে ইলিশ মাছ ধরার জন্য। পরে ইলিশ বিক্রি করে সেই ঋণের টাকা পরিশোধ করে তারা। কিন্তু চলতি বছর আশানুরূপ ইলিশ ধরা না পরায় দাদন ও এনজিও টাকা পরিশোধে বিপাকে পড়েছেন শতাধিক জেলে।
সাহেরখালী ঘাটের জেলে বলরাম জলদাশ, হরিপদ জলদাশ জানান, প্রত্যেক বছর ইলিশ মৌসুম এলে জেলেরা দাদন ও এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে নতুন নৌকা ও জাল কিনে থাকে। পরে ইলিশ মাছ বিক্রি করে ঋণের টাকা পরিশোধ করতে পারে। কিন্তু চলতি বছর সাগরে ইলিশ মাছ ধরা কম পড়ায় ঋণ পরিশোধ নিয়ে অনিশ্চয়তা মধ্যে পড়েছেন। এছাড়া ৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিন সাগরে ইলিশ মাছ ধরা বন্ধ থাকায় জেলেরা আরো বেশি সমস্যায় পড়েছেন।
আরো জানা গেছে, সাহেরখালী স্লুইচ গেইট থেকে প্রতিদিন শতাধিক নৌকা সাগরে মাছ ধরতে যায়। প্রতিটি নৌকায় কমপক্ষে ৩ জন থেকে ৫ জন জেলে থাকে। সাগরে মাছ ধরতে নামলে নৌকা প্রতি খরচ হয় ২-৪ হাজার টাকা। কিন্তু জেলেদের জালে ইলিশ মাছ ধরা না পড়ায় জেলেরা খরচের টাকাও তুলতে পারছে না।
ধনরঞ্জ জলদাশ নামে এক জেলে জানান. গত বছর ইলিশ বেশি ধরা পড়ায় সাহেরখালী জেলে পাড়ায় ৫টি নতুন নৌকা বেড়েছে। জেলেরা দাদন ও এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে ৩/৫ লাখ টাকা খরচ করে নৌকা ও জাল কেনেন। মাছ ধরার পর ওই মাছ দাদনের কাছে বিক্রি করতে হয়। দাদনের কাছে মাছ বিক্রি না করলে দাদন কেজি প্রতি ২০ টাকা কেটে রেখে দেন। কিন্তু চলতি বছর সাগরে ইলিশ মাছ ধরা না পড়ায় জেলেরা খালি হাতে ফিরে আসছে।
ইলিশ মাছ বেপারি নুরুল আবছার বাবুল জানান, সাহেরখালী স্লুইচ গেইট এলাকায় প্রতি বছর ইলিশ মৌসুমে দৈনিক ৮-১০ লাখ টাকা মাছ বিক্রি হতো। কিন্তু চলতি বছর ইলিশ মাছ কম ধরা পড়ায় সেই লেনদেন নেমেছে ৩-৪ লাখ টাকায়।
উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা নাসিম আল মাহমুদ জানান, প্রত্যেক বছরের ন্যায় চলতি বছরও আশ্বিনের অমাবস্যা ও পূর্ণিমা মাঝে রেখে মা মাছ ডিম ছাড়ার জন্য ২২ দিন ইলিশ মাছ আহরণ বন্ধ থাকবে। এসময় জেলেদের সরকারি সহযোগিতা করা হবে।