দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে গেলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা: হানিফ

সুপ্রভাত ডেস্ক :
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দল মনোনীত প্রার্থীর বিপক্ষে অবস্থানকারীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ। শনিবার চট্টগ্রামের ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে বঙ্গবন্ধু শিশু-কিশোর মেলা আয়োজিত কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, ইতোমধ্যে আমরা শুনেছি কিছু কিছু জায়গায় বিদ্রোহী প্রার্থী আছেন। বিদ্রোহীদের বিষয়ে আমাদের দলের অবস্থান একেবারে কঠোর। অতীতে যারা বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে দলের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন, তাদের আর নৌকা প্রতীক দেওয়া হয়নি। খবর বিডিনিউজ।
পদে থেকে যাদের বিরুদ্ধে দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে অবস্থান নেওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে তাদেরও দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। যারা দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনে অংশ নেবেন তাদের তাদের ভবিষ্যতে নৌকা প্রতীক এবং দলীয় সমর্থন না দেওয়ার কথাও জানান হানিফ। পাশাপাশি দলীয় প্রার্থীদের জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী বলেও জানান তিনি। এসময় তার পাশে ছিলেন আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী। এ বছরের ২৯ মার্চ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের কথা ছিল। কিন্তু করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে নির্ধারিত তারিখের এক সপ্তাহ আগে ভোট স্থগিত করা হয়। নির্ধারিত সময়ে ভোট করতে না পারায় আগস্টের শুরুতে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রশাসক নিয়োগ দেয় সরকার। গত ১৪ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশন আগামী বছরের ২৭ জানুয়ারি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ভোটের তারিখ ঘোষণা করে। ২৭ জানুয়ারি সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ইলেকক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে ভোট হবে। বিএনপি দেশের নির্বাচনকে নানাভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করছে এবং ইভিএম নিয়ে কোনো বিতর্কের সুযোগ নেই বলেও মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক হানিফ।
এর আগে শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, বাংলাদেশের মতো স্বাধীনতার জন্য এত ত্যাগ পৃথিবীর আর কোনো জাতির তাদের স্বাধীনতার জন্য করতে হয়নি। আমরা বীরের জাতি, আত্মত্যাগ করেই স্বাধীনতা অর্জন করেছি। এ স্বাধীনতা আমাদের অহঙ্কার। এটাকে সম্মান করতে হবে। এ স্বাধীনতার ওপর কোন আঁচড় বা কটাক্ষ বরদাস্ত করার কোনো সুযোগ নেই। এটা মাথায় রাখতে হবে। স্বাধীনতার আন্দোলন হয়েছিল বাঙালি জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা- এ চার মূল নীতির ওপর ভিত্তি করে। এর ওপর ভিত্তি করেই সংবিধান রচিত হয়েছে। এ চারটা স্তম্ভের ওপর সংবিধান দাঁড়িয়ে। বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ ও সংবিধান এ তিনটিকে অসম্মান করার কোনো সুযোগ নেই। এ তিনটি নিয়ে আপস চলবে না। আওয়ামী লীগ নেতা হানিফ আরও বলেন, আজকে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যে আঁচড় লেগেছে, এটা দুঃখজনক। ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে ভাস্কর্য অপসারণের কথা বলছে। যারা ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে কথা বলছেন তারা ‘ধর্ম ব্যবসায়ী’।
একাত্তর সালে তারাই ধর্মের দোহাই দিয়ে গণহত্যা করেছিল। এরাই বলেছিল নারীরা গণিমতের মাল, যুদ্ধের সময় নারীদের ভোগ করা জায়েজ। এত জঘন্য কথা ইসলামে থাকতে পারে না। আমরা বলি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ধর্ম ইসলাম। এ ধর্মে এ ধরনের নোংরা কথা থাকতে পারে না।
তিনি আরও বলেন, ইসলামের কোথাও কি ভাস্কর্য ভাঙ্গার কথা আছে? পৃথিবীর প্রত্যেক মুসলমান রাষ্ট্রে ভাস্কর্য আছে। ভাস্কর্যের সঙ্গে ইসলাম ধর্মের কোনো সাংঘর্ষিক অবস্থান নেই। এটা মনের ব্যাপার। আমাদের দেশের তথাকথিত ধর্ম ব্যবসায়ী মৌলবাদীরা সমাজের মানুষের মধ্যে ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে বিভ্রান্ত করে ফায়দা লুটতে চায়। এ ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। তরুণ প্রজন্মকে পড়াশোনার উপদেশ দিয়ে হানিফ বলেন, “কিছু শুনে ধর্মের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত না নিয়ে নিজে পড়ে জেনে সিদ্ধান্ত নিলে আমার বিশ্বাস দেশে ধর্ম নিয়ে এ ধরনের বাড়াবাড়ি, অশান্তি এসব থাকবে না।
বঙ্গবন্ধু শিশু-কিশোর মেলা চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি সাজ্জাদ হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাঈনুদ্দীন হাসান চৌধুরী, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক লুবনা হারুণ।