থার্টিফাস্ট নাইট প্রস্তুত কক্সবাজার

দীপন বিশ্বাস, কক্সবাজার »

একদিন পরেই শেষ হচ্ছে ২০২২ সাল। ২০২৩ সালকে স্বাগত জানাতে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের কক্সবাজারে চলছে জোরেসোরে প্রস্তুুতি। হোটেল-মোটেল এবং পর্যটন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো আলাদা করে, যে যার মত করে প্রস্তুুতি নিতে দেখা গেছে। নববর্ষ বরণে তারকামানসহ বিভিন্ন হোটেলে থাকছে ইনডোর আয়োজন। গত কয়েক বছর ধরে করোনা পরিস্থিতির কারণে বন্ধ হওয়া কক্সবাজারের বিভিন্ন আউটডোর প্রোগ্রামগুলো এখনও বন্ধ। এবারও সমুদ্র সৈকতসহ আউটডোরে কোনো আয়োজন নেই।

অন্যদিকে বছরের শেষ সূর্যাস্ত দেখতে ও নতুন বছরকে স্বাগত জানিয়ে বরণ করতে বরাবরের মতো এবারও কক্সবাজারে বিপুল পরিমাণ পর্যটকের আগমন ঘটবে বলে জানিয়েছেন পর্যটক সংশ্লিষ্টরা। ইতিমধ্যে হোটেল বুকিং দিয়ে তারা তাদের আগমন নিশ্চিত করেছেন। তবে গত চলতি সপ্তাহের শুরুতে টানা ছুটি থাকায় অতীতের মতো এবারের থার্টিফার্স্ট নাইটে অগ্রিম বুকিং হয়নি। তারপরও কয়েক লাখ পর্যটক আসার প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাইরে বড় কোন অনুষ্ঠান না থাকলেও বিভিন্ন হোটেলের ইনডোরে বিভিন্ন আয়োজনের মাধ্যমে এবং বিশাল সমুদ্র সৈকতে ঘুরে বেড়িয়ে ইংরেজি নতুন বছর ২০২৩ সালকে বরণ করতে থাকছে নানা আয়োজন।

কক্সবাজার হোটেল-মোটেল গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার জানান, কক্সবাজারের নান্দনিক সৌন্দর্য্য উপভোগে প্রতিবছরই দেশি ও বিদেশি পর্যটকরা ছুটে আসেন। বছরের সব বিশেষ বিশেষ দিন ও সরকারি ছুটিতে পর্যটকদের ঢল নামে কক্সবাজারে। সব হোটেল-মোটেলের কক্ষগুলো কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। এমনকি হোটেল কক্ষ খালি না পেয়ে অনেকেই আত্মীয় স্বজনের বাসা বাড়িতে ওঠেন। অনেকেই সাগর পাড়ে নির্ঘুম রাত কেটে চলে যান।

তিনি আরও বলেন, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের লোনা জলে গা ভাসানো আর বালুকা বেলায় দাঁড়িয়ে নতুন বছরের নতুন সূর্যের রোদে নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে এবারও লাখো পর্যটকের সমাগম ঘটতে পারে। তাই হোটেল-মোটেল ও গেস্টহাউস গুলো যে যার যার মত করে প্রস্তুুতি নিয়েছে। নববর্ষের সাজ-সজ্জাসহ নানা ধরণের কারুকার্য করছে।

হোটেল দি গ্র্যান্ড সেন্ডি ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুর রহমান জানান, নববর্ষ উপলক্ষে হোটেল বুকিংয়ের ক্রমান্বয়ে সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। ইতিমধ্যে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত কক্ষ বুকিং হয়েছে। তবে চলতি সপ্তাহে একটি টানা ছুটি হয়ে যাওয়ায় সেভাবে সাড়া মিলছে না। আজ-কালের মধ্যে আরো সাড়া মিলতে পারে।

স্বপ্নালয় স্টুডিও এ্যাপার্টম্যান্টের ইনচার্জ কুতুব উদ্দীন জানান, তাদের হোটেলে থার্টি ফাস্ট নাইটের জন্য ৩০ শতাংশ পর্যন্ত অগ্রিম কক্ষ বুকিং হয়েছে। যা আশানুরূপ নয়। প্রত্যাশা ছিলো অন্তত ৮০ শতাংশ কক্ষ অগ্রিম বুকিং হবে। অন্যান্য হোটেল-মোটেলেও খোঁজ নিয়ে এমন তথ্য মিলেছে।
তবে তারকা মানের হোটেলকে গুলোতে বরাবরের মতোই পুরোপুরি বুকিংয়ের প্রত্যাশা রয়েছে। সবকটি তারকা হোটেলে থার্টিফাস্ট নাইটের বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রস্তুুতি নিচ্ছে। এসব অনুষ্ঠানের জন্য অগ্রিম টিকিটও বিক্রি শুরু করেছে।

ইনানীর তারকা হোটেল রয়েল টিউলিপের এজিএম নাভেদ চৌধুরী বলেন, ১জানুয়ারি পর্যন্ত আমাদের হোটেল শতভাগ অগ্রিম বুকিং রয়েছে। থার্টিফাস্ট নাইট ও ইংরেজী নববর্ষ বরণের নানা অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে। দুইজন তারকা শিল্পী অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করবেন।
একইভাবে তারকামানের হোটেল ওশ্যান প্যারাডাইস, কক্স টুডে, সায়মন বীচ ও লংবিচেও নানা জমকালো আয়োজন থাকবে জানা গেছে। এছাড়াও আরো কিছু বড় মানের হোটেলেও নানা অনুষ্ঠান থাকবে।

জেলা প্রশাসন ও টুরিস্ট পুলিশ জানিয়েছে, নতুন বছর বরণকে কেন্দ্র করে আগত পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যাপক প্রস্তুুতি নিয়েছে। একইভাবে জেলা প্রশাসন বিশেষ মনিটরিং সেল গঠন করেছেন। শৃঙ্খলা রক্ষায় নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার থাকবে বলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবু সুফিয়ান জানান, সরকারিভাবে জানিয়ে দেয়া হয়েছে এবারও উন্মুক্ত স্থানে থার্টি ফাস্ট নাইটের কোন আয়োজন করা যাবে না। তাই কক্সবাজারেও কাউকে উন্মুক্ত স্থানে অনুষ্ঠান আয়োজনের অনুমতি দেয়া হয়নি।

কক্সবাজার টুরিস্ট পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকতা দেলোয়ার হোসেন জানান, কক্সবাজারে সাড়ে ৪’শ আবাসিক হোটেলে প্রায় দেড় লাখ লোক রাত্রিযাপন করতে পারেন। নিরাপত্তার স্বার্থে প্রতিটি হোটেলে সিসিটিভি ক্যামেরা নিশ্চিত করা হয়েছে। ১ জানুয়ারি থেকে সেন্টমার্টিনে জাহাজ চলাচল শুরু হলে সেখানেসহ হিমছড়ি, ইনানী ও পাটুয়ারটেকে জোনে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হবে। একইসাথে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে বিচকর্মী ও লাইভগার্ডের সাথে সমন্বয় করে পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তায় কাজ করবে ট্যুরিস্ট পুলিশ।

জেলা প্রশাসক মো. শাহীন ইমরান বলেন, ‘কক্সবাজার শুধু দেশের নয় পৃথিবীর একটি আকর্ষণীয় পর্যটন স্পট। তাই যে কোন বিশেষ দিন উপলক্ষে কক্সবাজারে পর্যটকের ভিড় থাকে। এবারও পর্যটকরা থার্টি ফাস্ট নাইট উপলক্ষে কক্সবাজারমুখী হবে বলে প্রত্যাশা করছি। তাই পর্যটকদের সেবার মান বাড়াতে এবং সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। মনিটরিং কমিটি সার্বক্ষণিক মাঠে থেকে পর্যবেক্ষণ করবেন। কোন রকম অসংগতি দেখা গেলে সাথে সাথেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে’।