ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়ক আট লেনে উন্নীত করা জরুরি কাজ

সমুদ্রবন্দর আছে এমন নগরকে যেকোনো দেশে প্রাধান্য দেওয়া হয় যেকোনো ক্ষেত্রে। আর যোগাযোগক্ষেত্র নিয়ে তো প্রশ্ন তোলারই অবকাশ নেই। কারণ বন্দরনগরের সঙ্গে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের যোগোযোগ ব্যবস্থা অর্থনৈতিক কারণেই প্রাধান্য পেয়ে থাকে।
কিন্তু বাংলাদেশে ঘটেছে এর বিপরীতটা। সারাদেশ তো দূরের কথা রাজধানী ঢাকার সঙ্গেই যোগাযোগ ব্যবস্থা সন্তোষজনক নয়, প্রয়োজন মেটানোর মতো নয়। শুধু সড়কপথ নয়, রেল ও আকাশপথেও যোগাযোগ ব্যবস্থা আধুনিক হয়নি।
এরমধ্যে ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কটি হচ্ছে এদেশের অর্থনীতির ‘লাইফলাইন’। কিন্তু সে সড়কটিও প্রয়োজনীয় গুরুত্ব পেলো না স্বাধীনতার অর্ধশতক পরেও। এটা যখন চার লেনের হওয়া দরকার ছিল তখন তা ছিল দু লেনের উপজেলা পর্যায়ের সড়কের মতো। যখন আট লেনের করা দরকার তখন করা হয়েছে চার লেনের। এখন এই সড়ককে করা দরকার আট লেনেরও অধিক কিছু তখন সবেমাত্র পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে এক্সপ্রেস ওয়ে না করে আট লেনে উন্নীত করার তা-ও আবার সব স্থানে নয়, কোথাও আট লেন, কোথাও ছয় লেন। এ–সংক্রান্ত একটি বিস্তারিত নকশা ও সমীক্ষার কাজ আগামী মার্চে শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।

ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে চট্টগ্রামের সিটি গেটের দূরত্ব ২৩২ কিলোমিটার। মহাসড়কটি আট লেনে উন্নীত করতে খরচ হবে ৭৩ হাজার কোটি টাকার বেশি। এর মধ্যে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছে ঋণ চাওয়া হচ্ছে ৫০ হাজার কোটি টাকা। বাকি টাকা সরকার জোগান দেবে। ২০২৪ সালে শুরু হয়ে ২০২৯ সালে কাজ শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে সড়ক ও জনপথ (সওজ)।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, পুরো কাজটি শেষ হবে তিনটি প্রকল্পের মাধ্যমে । একটি প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে বৃহত্তর ঢাকা অংশের তিনটি জেলায় (ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জ)। এ অংশে সড়কের দৈর্ঘ্য ৩৮ কিলোমিটার; যা বাস্তবায়নে খরচ হবে ৮ হাজার ২৬৮ কোটি টাকা। আরেকটি প্রকল্প হবে বৃহত্তর কুমিল্লা অংশের দুটি জেলায় (কুমিল্লা ও ফেনী)। এ অংশে সড়কের দৈর্ঘ্য ১২৫ কিলোমিটার। এটি বাস্তবায়নে খরচ হবে ৪৫ হাজার ৯৪১ কোটি টাকা। আরেকটি বাস্তবায়িত হবে বৃহত্তর চট্টগ্রাম অংশে; যেটি হবে মূলত ফেনী থেকে চট্টগ্রামের সিটি গেট পর্যন্ত। এতে খরচ হবে ১৮ হাজার ৯৪২ কোটি টাকা। এই অংশের দৈর্ঘ্য ৬৯ কিলোমিটার।

এর আগে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করতে ২০০৬ সালে একটি প্রকল্প নিয়েছিল সরকার। দুই দফা সময় বাড়িয়ে প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হয় ২০১৬ সালে। অর্থাৎ চার লেনের কাজ শেষ হওয়ার আগেই আট লেন করার প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল তা বলার অপেক্ষা রাখে না। বন্দরনগর চট্টগ্রামের সঙ্গে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হলে তা জাতীয় প্রবৃদ্ধিতে কী পরিমাণ অবদান রাখতো তা নিয়ে বিশেষজ্ঞ কমিটির মতামত নেওয়ার দরকার নেই যেকোনো ব্যবসায়ীই তা আন্দাজ করে বলে দিতে পারেন। প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর বিশেষ সংখ্যায় সাক্ষাৎকারে সদ্য নির্বাচিত এফবিসিসিআই-এর সভাপতি মাহবুবুল আলমও এই মহাসড়ককে খুব দ্রুত আট লেনে উন্নীত করার দাবি জানিয়েছেন।
এক্ষেত্রে চট্টগ্রামের জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকাও সন্তোষজনক নয়। প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রাধিকার হিসেবে উপস্থাপন করতে পারলে হয়ত এতদিনে মহাসড়কটি আট লেনে উন্নীত হয়ে যেত।