ড্রেনের পানি যাবে কোথায়!

আনোয়ারায় পিএবি সড়কে পানি নিষ্কাশনের নালার কাজ করলেও ব্যবস্থা রাখেনি-সুপ্রভাত
আনোয়ারায় বিকল্প সড়ক ছাড়াই বন্ধ ৬ মাস, এখনো শেষ হয়নি কাজ
উন্নয়ন কাজে অনিয়মের অভিযোগ স্থানীয়দের

সুমন শাহ্‌, আনোয়ারা:

চট্টগ্রামের আনোয়ারা থানার মোড় থেকে জয়কালী বাজার পর্যন্ত (আনোয়ারা-পটিয়া-বাঁশখালী) পিএবি সড়কের প্রায় দেড় কিলোমিটার অংশ সংস্কারকাজের জন্য গত জানুয়ারিতে সব ধরনের যানবাহন চলাচলের উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে বন্ধ করে দেয় সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ)। উন্নয়ন কাজে স্থানীয়দের নানা অনিয়মের অভিযোগের মধ্যে কাজ চললেও দীর্ঘ ৬ মাসে শেষ করতে পারেনি সড়কের কাজ বিসমিলস্নাহ্‌ এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। পানি নিষ্কাশনের নালার কাজ করলেও ব্যবস্থা রাখেনি পানি যাওয়ার। অপরিকল্পিতভাবে কাজ করছে বলেও অভিযোগ স্থানীয়দের।

সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) এ সড়কের উন্নয়ন কাজের জন্য ১ মাসের সময় নিয়ে ১৮ জানুয়ারিতে কোন বিকল্প সড়ক ব্যবস্থা না করেই বন্ধ করে দেয় সড়ক। তবে ১ মাসের কথা বলে দীর্ঘ ৬ মাস পার হলেও শেষ হয়নি সড়কের উন্নয়ন কাজ। বন্ধ রয়েছে সড়ক। নেই কোনো বিকল্প ব্যবস্থা, যার ফলে ভোগানিত্মতে আনোয়ারা, চন্দনাইশ, সাতকানিয়াসহ কয়েকটি উপজেলার হাজারো মানুষ।

রোববার  দুপুরে স্থানীয়দের সড়কের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পেয়ে পরির্দশনে যান উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ জোবায়ের আহমেদ, থানার অফিসার ইনচার্জ দুলাল মাহমুদ ও উপজেলা প্রকল্প বাসত্মবায়ন কর্মকর্তা জামিরম্নল ইসলাম। সরেজমিনে গিয়ে ও স্থানীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এখনো সড়কের উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে। ইতিমধ্যে সড়কের ৭০-৮০% উন্নয়ন কাজ শেষ করেছে ঠিকাদার।

নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক স্থানীয় এক ব্যবসায়ী জানান, প্রায় ৯ কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত দেড় কিলোমিটার সড়কে উন্নয়ন কাজে নিম্নমানের ইট ও খোয়া ব্যবহার, মাত্রাতিরিক্ত বালু দেওয়াসহ দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। এছাড়াও সড়কে আরসিসি ঢালাই কাজ শেষে দেওয়া হচ্ছে না পানি। পানি চলাচলের জন্য নালা নির্মাণ করলেও অনেক স্থানে এসে বেধে দিয়েছে বাঁধ। নেই কোনো পানি চলাচলের ব্যবস্থা, নালা দিলে এসে পানি যাবে কোথায় এমন প্রশ্নও স্থানীয়দের। অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরম্নদ্ধে কেউ কথা বলতে গেলে ঠিকাদার কারো কথাও শুনে না বলেও জানান। উন্নয়ন কাজের তদারকি নেই সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) কেউ। এ অনিয়মের বিরম্নদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য স্থানীয় সাংসদ ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এমপির হসত্মড়্গেক কামনাও করেন তারা।

স্থানীয় মো. রিফাতুল ইসলাম নামে এক কলেজ শিক্ষার্থী বলেন, সড়কের সংস্কারকাজ দীর্ঘায়িত হওয়ায় আমাদের ভোগানিত্ম শেষ নেই। আজ ৬ মাস ধরে সংস্কারের কথা বলে বন্ধ রেখেছে সড়কটিও। আমাদের বিকল্প সড়ক দিয়ে যেতে হয় প্রায় কয়েক কিলোমিটার বেশি দূরপথ। এতে বাড়তি ভাড়া ছাড়াও সময় নষ্ট হচ্ছে। অনেক সময় অনেকটায় পথ পায়ে হেঁটে গাড়িতে উঠতে হচ্ছে। এজন্য ঠিক সময়ে পৌঁছাতে পারছি না।

এলাকাবাসী বলছেন, বেশি লাভের আশায় নির্মাণ খরচ কমাতে নিম্নমানের ইট-খোয়া ব্যবহার করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ইটের খোয়ার পরিমাণ কমিয়ে মাত্রাতিরিক্ত বালু ব্যবহার করা হচ্ছে। এ নিয়ে কয়েকবার উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে অভিযোগ করলে তিনি পরির্দশনও করেছিলেন। তাছাড়াও এ সড়কের উন্নয়ন কাজে  অনিয়মের অভিযোগ শুনে ভূমিমন্ত্রীর একান্ত সহকারী সচিব রিদোয়ানুল করিম সায়েম ভূমিমন্ত্রীর পড়্গে পরির্দশন করে ঠিকাদারকে কঠোর নির্দেশ দিয়ে যান। কিন’ ঠিকাদার তা না মেনে তাদের ইচ্ছে মত কাজ করছে বলেও জানা গেছে।

সড়ক নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করে  ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান বিসমিলস্নাহ্‌ এন্টারপ্রাইজের দায়িত্বরত সুপারভাইজার সুঞ্জীব বলেন, ওই সড়কে কোনো অনিয়ম হচ্ছে না। সবসময় কাজ পরিদর্শন করা হচ্ছে।

আনোয়ারা থানার অফিসার ইনচার্জ দুলাল মাহমুদ বলেন, সড়কের পাশে নালার কাজ শেষ করেছে। থানার গেইট পর্যন্ত এসে নালার শেষ করে দিয়েছে। পানি যাওয়ার জন্যও রাখেনি কোনো ব্যবস্থা। এবিষয়ে ঠিকাদারকে জানালে তারা কাজের নিয়ম অনুযায়ী নালার কাজ এখানে শেষ বলে জানায়। সড়কের এরকম কাজ হলে পানি জমে থাকা জটিলটা থেকেই যাবে।

আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ জোবায়ের আহমেদ বলেন, আনোয়ারা উপজেলাসহ কয়েকটি উপজেলার জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক, সংস্কারের কাজের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে যানচলাচল। একটু  তো কষ্ট করতেই হবে সবাইকে। তিনি আরো বলেন, স্থানীয়রা এ সড়কের উন্নয়ন কাজে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ জানিয়েছে আমাকে। দুইবার সরেজমিনে গিয়ে কঠোর নির্দেশ দিয়ে এসেছি। যদি আবারো এরকম অভিযোগ আসে তাহলে ঠিকাদারের বিরম্নদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া জন্য ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষ বরাবর লিখিত জানানো হবে। এ বিষয়ে জানতে দোহাজারী সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রকৌশলী সুমন সিংহের সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার কথা বলার চেষ্টা করলেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।