ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়ন : সমন্বিত পদক্ষেপ ও স্থায়ী পরিকল্পনা চাই

উন্নত ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা আধুনিক নগরায়ণ পরিকল্পনার অপরিহার্য শর্ত; নাগরিকদের স্বাচ্ছন্দ, স্বস্তি ও দৈনন্দিন নির্বিঘœ চলাচল, সময়মতো গন্তব্যে পৌঁছা নির্ভর করে যানজটমুক্ত ও শৃঙ্খলাপূর্ণ ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার ওপর। কিন্তু একবিংশ শতাব্দীতে এসেও আমাদের সেকেলে পদ্ধতি ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে চলতে হচ্ছে। চট্টগ্রাম মহানগরীর বিশৃঙ্খল ও সমন্বয়হীন ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার চরম খেসারত দিতে হচ্ছে নগরবাসীকে। চাকুরিজীবী, ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থীর শ্রমঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে যানজটে পড়ে, বিমান বন্দরে যেতে হলে ২/৩ ঘণ্টা আগে থেকেই বাসা থেকে বেরুতে হয়। নিত্যদিন নাগরিক দুর্ভোগের মূলে রয়েছে বিশৃঙ্খল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা। এইসব বিষয়ে পত্রপত্রিকায় লেখালেখি, আলোচনা, বিশেষজ্ঞ সুপারিশ কম হয়নি কিন্তু পরিস্থিতির কোনোরূপ উন্নতি নেই। সম্প্রতি ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়ন ও যানজট নিরসনে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসককে ২৪ প্রস্তাবনা দিয়েছে সিএমপির ট্রাফিক বিভাগ। এর মধ্যে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি প্রস্তাব রয়েছে বলে জানা গেছে। কিন্তু ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নতি কেবল চসিক এর কাজ নয় বরং নগরীর সেবা সংস্থা ও বিভিন্ন সরকারি বিভাগের নানা ভূমিকা রয়েছে, সে ক্ষেত্রে সমন্বিত পদক্ষেপও প্রয়োজন। তদুপরি এ জন্য বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ জনবল ও পর্যাপ্ত বরাদ্দ থাকা চাই।
সিএমপি ট্রাফিক বিভাগের প্রস্তাবনার মধ্যে রয়েছে ফুটপাত অবৈধ দখলমুক্ত করা, নগরীতে বাস-ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ, ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ, সিগন্যাল এর আধুনিকায়ন, সড়কে জেব্রা ক্রসিং ও রোড মার্কিং, মার্কেট ও গুরুত্বপূর্ণ মোড়, এলাকায় পার্কিং না করা, রাস্তার ওপর উপকরণ সামগ্রী না রাখা, নগরীর সড়কগুলির সংস্কার ও মেরামতসহ বেশ কিছু করণীয় নিয়ে প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে। এসব কাজ স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদের, সেভাবেই অগ্রসর হতে হবে। নগরীর ফুটপাতের ওপর দোকানের পণ্যসামগ্রী রাখা, ভ্রাম্যমাণ দোকান স্থাপন, রাস্তার ওপর অস্থায়ী দোকান ও নির্মাণ সামগ্রী ফেলে রাখা নিত্যদিনের চিত্র। এসব তো বছরের পর বছর চলে আসছে। পথচারী হাঁটবে কিভাবে-এসব অব্যবস্থাপনার কারণে যানজট তৈরি হয়, দুর্ঘটনা ঘটে। ব্যস্ত মোড়গুলোতে পার্কিং, যত্রতত্র যাত্রী উঠানামা, ছোট যানবাহনের ভিড় যানজটের কারণ, যাত্রীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিভিন্ন মোড়ে আটকে থাকতে হয়। বাস-ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ জরুরি হলেও কোন অগ্রগতি নেই।
চট্টগ্রাম মহানগরীতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের কাজ চলছে, এর মধ্যে কর্ণফুলী টানেল, বে-টার্মিনাল, বন্দরের নানা উন্নয়ন প্রকল্প রয়েছে। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আছে নানা প্রকল্পে। ফ্লাইওভার নির্মিত হচ্ছে। আমদানি রপ্তানির ৯০ ভাগ চট্টগ্রাম বন্দর মারফত ঘটে থাকে। চট্টগ্রাম মহানগরীর অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য, উন্নয়ন অগ্রগতি সুষ্ঠু ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার ওপরও নির্ভর করে।
চসিক প্রশাসক ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে যৌথ ওয়ার্কিং টিম গঠনের কথা বলেছেন, এতে সকল সেবা সংস্থা ও সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধিত্ব থাকা চাই। নগরীর সামগ্রিক ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার উন্নতির জন্য সরকারের বিশেষ বরাদ্দ প্রয়োজন যাতে বিভিন্ন মেয়াদের পরিকল্পনা নেওয়া যেতে পারে। এ লক্ষ্যে বিশেষজ্ঞ ও নাগরিক সমাজের মতামত নেওয়াও বাঞ্ছনীয়। যানজট ও বিশৃঙ্খল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নগরবাসীর জীবনকে অসহনীয় করে তুলছে, এর দ্রুত অবসান হওয়া প্রয়োজন।