টিকা নিন, চিকিৎসা সুবিধা বাড়ান : নিষেধাজ্ঞা মানতে কঠোর হোন

করোনা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারা যাচ্ছে না-হতাশার সুরে এমন কথাই বললেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালিক। করোনা সংক্রমণ এখন প্রতিদিনই রেকর্ড গড়ছে। রোগের ধরণও আগের চাইতে মারাত্মক, এতসব জানা সত্ত্বেও জনগণের মধ্যে সচেতনতা গড়ে উঠছেনা বরং নিষেধাজ্ঞা না মানতে অনেকে প্রতিবাদ-বিক্ষোভে নেমেছেন। বিশেষজ্ঞরা এবং স্বাস্থ্যবিদগণ স্বাস্থ্যবিধি মানার বিকল্প নেই বলছেন, এমতাবস্থায় জনগণকে স্বাস্থ্যবিধি এবং সরকার ঘোষিত সকল নির্দেশনা মানতে প্রশাসনের কঠোর হওয়া ছাড়া উপায় নেই। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গ্রামাঞ্চলে সংক্রমণ কম, গ্রামে সামাজিক দূরত্ব রয়েছে অবস্থানগত কারণে, শহরে মাস্কপরা এবং সামাজিক দূরত্বের বিষয় ভয়ানকভাবে উপেক্ষা করায় সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে ফলে বিদ্যমান চিকিৎসা সেবায় চাপ পড়েছে। মানুষ এক হাসপাতাল থেকে আর এক হাসপাতালে ছুটছেন। টেস্ট বাড়লেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে রোগীদের। পত্রিকান্তরে প্রকাশ, চট্টগ্রামের উপজেলা হাসপাতালগুলিতে আগে কোভিড রোগী তেমন না থাকায় অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা এখন তেমন ভালো নেই। অন্যান্য চিকিৎসা সরঞ্জাম ও ওষুধ সামগ্রীর সংকট থাকায় রোগীরা চট্টগ্রাম মহানগরের হাসপাতালগুলিতে ছুটে আসছেন। তাই নগরে চিকিৎসাসেবা বাড়াতে সরকারিÑবেসরকারি উদ্যোগ এখনিই নিতে হবে। কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ফিল্ড হাসপাতাল চালুর কথা বলেছে, এগুলি ভাল উদ্যোগ। আগে কোভিড পরিস্থিতিতে কয়েকটি নতুন হাসপাতাল তৈরি করা হয়েছিলো, সেগুলি পুনরায় চালু করা প্রয়োজন। উপজেলা হাসপাতালগুলিতে অক্সিজেন সরবরাহ ও ওষুধ সামগ্রীর সংকট যাতে না হয় সে ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।
করোনার দ্বিতীয় ডোজের টিকাদান শুরু হয়েছে গতকাল থেকে, এর পাশাপাশি প্রথম ডোজের টিকাও চলবে। চট্টগ্রামে শুক্রবারে আরো ৩ লাখ ডোজ টিকা আসছে। তবে অধিকাংশ মানুষকে টিকার আওতায় আনতে আমাদের নানা উৎস থেকে টিকা সংগ্রহে জোর দিতে হবে। টিকা কার্যক্রম যেন ধারাবাহিক ভাবে চলে, কখনো যাতে ছেদ না পড়ে সে ভাবেই পরিকল্পনা করে এগোতে হবে। যাদের ন্যাশনাল আইডি নেই, তাদের বিশেষ নিবন্ধনের মাধ্যমে টিকাদানের আওতায় আনতে হবে। শহরাঞ্চলে মাইকিং করে নির্দেশনা মেনে চলা ও করণীয় সম্পর্কে প্রচার প্রচারণা চালাতে হবে।
আগের লকডাউনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেভাবে তৎপর ছিলো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে, এবার তা তেমন চোখে পড়ছে না। ভ্রাম্যমাণ আদালতের কিছু কাজ চলছে কিন্তু তা যথেষ্ট নয়। সামনে যদি পরিস্থিতির আরো অবনতি হয় তবে জীবনকেই প্রাধান্য দিতে হবে, মানুষকে বাঁচাতে হবে-এই প্রত্যয় নিয়ে সকলকে প্রস্তুত থাকতে হবে। এ জন্যে সরকারের যেমন বিশদ পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি থাকা চাই, তেমনি জনগণকেও সকল প্রকার নির্দেশনা এবং নিষেধাজ্ঞা মানতে হবে। সকলের সুরক্ষা হলে ব্যক্তির সুরক্ষা হবে সুতরাং স্বার্থ-সুযোগ সুবিধা এ দুর্যোগ মুহূর্তে প্রত্যাশিত নয়। সকলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে জীবন-জীবিকার সংগ্রাম একসাথে চলবে। কিন্তু দুর্ভাগ্য, তার লক্ষণ এই ভয়াবহ বিপদেও পরিলক্ষিত হচ্ছে না। এটি সমাজ ও দেশের জন্য অশনিসংকেত।