টাকার অভাবে প্যারিসে মধুচন্দ্রিমার স্বাদ দার্জিলিংয়ে মিটিয়েছিলেন শাহরুখ-গৌরী

সুপ্রভাত ডেস্ক :
গৌরী ছিব্বরের সঙ্গে দিল্লির তরুণ শাহরুখ খানের যখন প্রথম আলাপ, তখনও তিনি বলিউডের বাদশা হননি। এক বন্ধুর বাড়ির পার্টিতে প্রথম দেখেছিলেন গৌরীকে। ১৪ বছরের উচ্ছল গৌরী সে সময় নাচছিলেন এক যুবকের সঙ্গে।
শাহরুখেরও নাচতে ইচ্ছে করছিল। কিন্তু গৌরীকে যে মুখ ফুটে বলবেন, তার জন্য সাহসে কুলোচ্ছিল না। বেশ কিছু ক্ষণ অপেক্ষার পরে কিছতা সাহস সঞ্চয় করে ১৮ বছর বয়সি শাহরুখ গেলেন গৌরীর কাছে। তার সঙ্গে নাচার প্রস্তাব নিয়ে।
কিন্তু প্রথমেই ধাক্কা। গৌরী মুখের উপর জানিয়ে দেন, তিনি তার বয়ফ্রেন্ডের অপেক্ষায় আছেন। আশাহত শাহরুখ ভাবলেন, কুঁড়িতেই সব সম্ভাবনা শেষ হয়ে গেল!
কিছু ক্ষণ পরে সত্যিটা পরিষ্কার হল। যার জন্য অপেক্ষায় ছিলেন গৌরী, তিনি তার বয়ফ্রেন্ড নন। বরং, ভাই! এ বার তার কাছে গিয়ে শাহরুখ বলেন, ‘আমাকেও তোমার ভাই মনে করো।’
এ ভাবেই সম্পর্কের সূত্রপাত। পরে এক সাক্ষাৎকারে স্মৃতিচারণা করেছিলেন শাহরুখ। তার স্বভাবসিদ্ধ রসিকতা এবং কথা বলার ঢঙে খুব অল্প সময়েই মুগ্ধ হয়ে যান গৌরী। বন্ধুত্ব থেকে তাদের সম্পর্ক প্রেমের চৌকাঠ পেরতে বেশি সময় নেয়নি।
প্রেমের বয়স অল্প কয়েক দিন হতেই গৌরী বুঝতে পারলেন শাহরুখ খুব অধিকারবোধ সম্পন্ন। তিনি গৌরীকে চুল খোলা রাখতে দেবেন না। অন্য কোনও পুরুষের সঙ্গে কথা বললেও রেগে যেতেন শাহরুখ।
তার ওভার পজেসিভনেসের জন্য মাঝে মাঝেই গৌরীর দমবন্ধ লাগত। এক বার শাহরুখের বাড়িতে নিজের জন্মদিন উদযাপন করার পরে গৌরী একাই মুম্বই চলে গেলেন। শাহরুখকে না জানিয়েই।
খবর পেয়ে শাহরুখ প্রথমে কিছতা দিশেহারা হয়ে পড়েন। কোনও উপায় না দেখে তিনি সব কথা খুলে বলেন মাকে। ছেলের হাতে ১০ হাজার টাকা দেন লতিফ ফতিমা। বলেন, মুম্বই গিয়ে গৌরীকে খুঁজে বার করতে।
কয়েক জন বন্ধুকে নিয়ে দিল্লি থেকে মুম্বই পৌঁছন শাহরুখ। তন্ন তন্ন করে খুঁজতে থাকেন গৌরীকে। দীর্ঘ সময় ধরে তল্লাশির পরে অবশেষে তিনি পান গৌরীকে, সমুদ্র সৈকতে। দু’জনে দু’জনকে দেখে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলেন। তখনই তারা বুঝতে পারেন দু’জনে দু’জনকে ছেড়ে থাকতে পারবেন না।
এ বার তারা বিয়ের সিদ্ধান্ত নিলেন। সেইসঙ্গে শুরু হল নতুন সমস্যা। এত দিন শাহরুখ এবং গৌরী নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। এ বার তাদের মুখোমুখি হতে হল বাড়ির লোকের।
গৌরী ছিলেন ব্রাহ্মণ পরিবারের মেয়ে। নিরামিষাশী গোঁড়া বাড়িতে ঢুকত না মাছ মাংস। কারণ বাড়িতে ইষ্টদেবতার মন্দির ছিল। ভিন্ন ধর্মের ছেলেকে বিয়ে করা নিয়ে আপত্তি আসবে। সে জন্য মানসিক ভাবে তৈরিই ছিলেন গৌরী। সেইসঙ্গে শাহরুখের আর্থিক সঙ্গতি নিয়েও প্রশ্ন তুললেন গৌরীর বাবা-মা।
গৌরীর বাড়ির লোকের সম্মতি পেতে সময় লেগেছিল বহু দিন। ৬ বছরের প্রেমপর্বের শেষে ১৯৯১ সালের ২৫ অক্টোবর দু’জনে বিয়ে করেন। তারা একে যে অন্যের জীবনের অঙ্গ, সেই উপলব্ধি থেকে এক মুহূর্তের জন্যেও সরে আসেননি।
শাহরুখকে যে সময় গৌরী বিয়ে করেছিলেন, তখন তার স্বপ্ন বলিউডের নায়ক হবেন। সেই শূন্য থেকে শীর্ষে পৌঁছনোর প্রতি ধাপে তার জীবনের ওঠাপড়ায় পাশে ছিলেন গৌরী।
বিয়ের পরেও শাহরুখের ছায়ায় মিলিয়ে যাননি গৌরী। নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন প্রথম সারির ইন্টেরিয়র ডিজাইনার হিসেবে। তিনি যে ভাবে নিজের অন্দরসজ্জার সংস্থা, প্রোডাকশন হাউস এবং সংসার সামলান, তাতে শাহরুখ মুগ্ধ।
১৯৯৭ সালে জন্ম হয় শাহরুখ-গৌরীর প্রথম সন্তান আরিয়ানের। মেয়ে সুহানার জন্ম তার ৩ বছর পরে। দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে বলিউডের পাওয়ার কাপল শাহরুখ-গৌরী অনুরাগীদের চমক দিলেন ২০১৩-এ। জানালেন, এ বার তারা সারোগেসি পদ্ধতিতে তৃতীয় সন্তান লাভ করেছেন। ছেলের নাম রাখা হয় আব্রাম।
ক্যারিয়ারের প্রথম থেকেই ইন্ডাস্ট্রির প্রচলিত নিয়ম ভেঙেছেন শাহরুখ। সম্পূর্ণ বহিরাগত হয়ে টেলিভিশনে কেরিয়ার শুরু করে পা রেখেছিলেন বলিউডে। প্রথম ছবি মুক্তির আগে থেকেই তিনি বিবাহিত। অনুরাগিণীর সংখ্যা কমে যাওয়ার ভয়ে কোনও দিন লুকিয়ে রাখেননি স্ত্রীকে।
শাহরুখ প্রথমে সই করেছিলেন ‘চমৎকার’ ছবির জন্য। ছবির পরিচালক ও প্রযোজক তাকে বলেছিলেন তার বিয়ে কিছতা পিছিয়ে দিতে। শাহরুখ রাজি হননি। তার যু্ক্িত ছিল, তিনি অভিনয়ের কেরিয়ার পিছিয়ে দিতে পারেন বরং। কিন্তু বিয়ে নির্ধারিত দিনেই করবেন।
গৌরীকে কথা দিয়েছিলেন শাহরুখ। মধুচন্দ্রিমায় প্যারিসে নিয়ে যাবেন বলে। শেষ অবধি বিয়ের ২০ দিন পরে তাদের মধুচন্দ্রিমা হয়েছিল দার্জিলিঙে। ‘রাজু বন গ্যয়া জেন্টলম্যান’ ছবির একটি গানের শুটিংয়ে শাহরুখকে যেতে হয়েছিল সেখানে।
শুটিংয়ের পাশাপাশি হয়েছিল মধুচন্দ্রিমাও। দু’জনেই দার্জিলিংকে প্যারিস বলে ভেবে নিয়েছিলেন। দিল্লির মধ্যবিত্ত পরিবারের দুই তরুণ তরুণীর কাছে তখন বিদেশ ভ্রমণ ছিল স্বপ্নের মতো।
সময়ের সঙ্গে শাহরুখের অর্ধাঙ্গিনী হিসেবে নিজেকে পাল্টেছেন গৌরী। দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে তারাই বলিউডের ফার্স্ট কাপল। সব সময় তারা বলেছেন, একে অন্যের জীবনে একমাত্র প্রেম। কিন্তু এ হেন দাম্পত্যও ধাক্কা খেয়েছে।
প্রিয়ঙ্কা চোপড়ার সঙ্গে শাহরুখের প্রেমের গুঞ্জন মোটেও ভাল ভাবে নেননি গৌরী। ইন্ডাস্ট্রির অন্দরমহলে কান পাতলে শোনা যায়, সন্তানদের নিয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন তিনি। তার পরই প্রিয়ঙ্কার সঙ্গে সম্পর্ক থেকে সরে আসেন শাহরুখ। তিনি নাকি গৌরীকে কথা দেন কোনও দিন প্রিয়ঙ্কার সঙ্গে অভিনয় করবেন না।
গুঞ্জনের পাল্লা ভারী না করে শাহরুখ বেছে নেন নিটোল পারিবারিক জীবনকেই। পাশে থাকেন সেই মেয়েটার, যার হাত ধরে দিল্লির রাজেন্দ্রনগরের মধ্যবিত্ত পাড়া থেকে তিনি হয়ে উঠেছেন তামাম ভারতের ‘এসআরকে’। খবর : আনন্দবাজার’র।