ঝড়-জলোচ্ছ্বাসে অতিক্রম করলো ‘সিত্রাং’

মোংলা-পায়রা-চট্টগ্রাম সাত, কক্সবাজার ছয় নম্বর বিপদ সংকেত

নিজস্ব প্রতিবেদক »

মেঘনা মোহনার উপর দিয়েই রাতের মধ্যে ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’ উপকূল অতিক্রম করেছে। গতকাল সন্ধ্যা থেকে সিত্রাং এর প্রভাবে উপকূলীয় এলাকায় বৃষ্টিপাত শুরু হলেও মধ্যরাতের পর ঘূর্ণিঝড়ের চোখ অতিক্রম করেছে। দেশের দক্ষিণ অঞ্চল বরিশাল, পটুয়াখালী ও ভোলায় সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে।

এর প্রভাবে উপকূলীয় এলাকায় ব্যাপক জলোচ্ছ্বাস দেখা দিতে পারে বলে পায়রা, মোংলা ও চট্টগ্রাম বন্দরকে সাত নম্বর বিপদ সংকেত এবং কক্সবাজারকে ছয় নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

জানা গেছে, ১৯৭০ সালে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ের পর ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ের কথাই সবার মনে আসবে। এরপরই আসবে ২০০৭ সালের ‘সিডরের’ কথা। সেই ঘূর্ণিঝড়ের পর ধ্বংসাত্মক ঝড়ের দেখা পায়নি উপকূলের মানুষ। সোমবার রাত থেকে ভোলার উপর দিয়ে উপকূল অতিক্রম করেছে ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’। শক্তিমত্তার বিচারে ১৯৭০, ১৯৯১ কিংবা ২০০৭ সালের ঘূর্ণিঝড়ের তুলনায় তা কম।

সিত্রাং উপকূলে আঘাত করছে অমাবশ্যার সময়ে। তাই উপকূলীয় এলাকায় জলোচ্ছ্বাসের প্রভাব বেশি হবে।

এ বিষয়ে গতকাল রাতে আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্রের আবহাওয়াবিদ এস এম কামরুল হাসান বলেন, ‘উপকূলীয় এলাকায় প্রায় ২০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। আর এতেই উপকূলে বেশি ক্ষয়-ক্ষতি হবে।’

এতো বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস কেন হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখন অমাবশ্যা চলছে। এ কারণে স্বাভাবিকভাবেই জোয়ারের উচ্চতা ১৪ থেকে ১৫ ফুট হয়ে থাকে। এই অমাবশ্যার সাথে ঝড় যুক্ত হওয়ায় জোয়ারের উচ্চতা বেড়ে ২০ ফুটে উন্নীত হতে পারে।’

তবে বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১১০ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে উল্লেখ করে আবহাওয়া অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সানাউল হক ম-ল বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়টি তেমন শক্তিশালী নয়। তবে অমাবশ্যার সময়ে উপকূলে আঘাত করবে বলে এর প্রভাবে উপকূলীয় এলাকায় জলোচ্ছ্বাস হবে। একইসাথে বৃষ্টিপাত ঘটাবে।’

সারাদেশে কি বৃষ্টি হবে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘দেশের মধ্যাঞ্চল থেকে উপকূলের দিকে বৃষ্টিপাত ঘটাবে।

উপকূল অতিক্রম করতে কত সময় নেবে? এ বিষয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তরের এস এম কামরুল হাসান বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রভাগের প্রভাবে গতকাল বিকেল থেকেই উপকূলীয় এলাকায় বৃষ্টি হচ্ছে। তবে প্রধান কেন্দ্র তথা ঘূর্ণিঝড়ের চোখ মেঘনা মোহনা (বরিশাল, ভোলা) দিয়ে অতিক্রম করবে সোমবার দিবাগত মধ্যরাতে। এছাড়া পুরো ঝড়টি রাতের মধ্যেই উপকূল অতিক্রম করবে।’

তিনি আরো বলেন, এর প্রভাবে দেশের পুরো উপকূলীয় এলাকায় জোয়ারের উচ্চতা যেমন বাড়বে তেমনিভাবে বৃষ্টিপাতও ঘটাবে।

এদিকে ঝড়ের প্রভাবে চট্টগ্রাম বন্দরে সকাল থেকে পণ্য খালাস বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ নিয়ন্ত্রণ কক্ষ চালু করেছে। এছাড়া মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যেতে উপকূলীয় এলাকার আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত করা হয়েছে। স্বেচ্ছাসেবকরা মাইকিং করছে লোকজনকে নিরাপদে সরে আসতে। এছাড়া সন্ধ্যার পর থেকে নগরীতে ঝড় ও বৃষ্টি বেড়েছে।

উল্লেখ্য, এপ্রিল-মে এবং সেপ্টেম্বর-অক্টোবর ঘূর্ণিঝড়ের মৌসুম। বর্ষার বিদায় ও শীতের আগমনের পূর্বে বঙ্গোপসাগরে এমন ঝড়ের সৃষ্টি হয়ে থাকে। এছাড়া গ্রীষ্মের শেষ ও বর্ষার শুরুর পূর্বেও ঘূর্ণিঝড় হয়ে থাকে। দেশে বড় ধরনের সকল ঘূর্ণিঝড় এই সময়ে সৃষ্টি হয়েছিল।