জোয়ারের পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত উপকূল

ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’

নিজস্ব প্রতিবেদক  >
ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে জোয়ারের পানিকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উপকূল। অস্বাভাবিক জোয়ারে অরক্ষিত উপকূলে পানি প্রবেশ করেছে। তবে ঝড়ের গতিবেগ ও বৃষ্টির মাত্রা কম ছিল। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত আকাশ মেঘলা থাকার পাশাপাশি গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হয়েছে। গতকাল সকাল থেকে দুপুরের মধ্যে ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ উড়িশ্যা ও পশ্চিমবঙ্গ উপকূলের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করে।
এদিকে গতকাল দুপুরে দক্ষিণ কাট্টলী রাসমনি ঘাট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সাগরের পানি আউটার রিং রোড পর্যন্ত চলে এসেছে। আর সাগরের বিশাল ঢেউ আচড়ে পড়ছে রিং রোডের ব্লকগুলোতে। জেলে পাড়ার জেলেরা তাদের নৌকা আটকে রাখার চেষ্টা করছে। লতিফপুর এলাকার বেড়িবাঁধের কাছে দেখা যায়, অনেকে জাল দিয়ে মাছ ধরার চেষ্টা করছে। আর বেড়িবাঁধের উপর দর্শনার্থীদের ভিড়, সবাই সাগরের রূপ দেখতে এসেছে। একই চিত্র ছিল পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতেও।
ঝড় ও জোয়ারে কেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জানতে চাইলে আবহাওয়া অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা জানান, উপকূলীয় এলাকায় যে বাড়তি জোয়ার হবে তা বারবার বলে আসছিল আবহাওয়া অধিদপ্তর। প্রতিটি বুলেটিনে বাড়তি জোয়ারের কথা বলা হয়েছে। প্রথমে দুই থেকে চার ফুট উচ্চতার কথা বলা হলেও পরবর্তীতে তা বাড়িয়ে ছয় থেকে নয় ফুট পর্যন্ত বলা হয়েছে। স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে এই বাড়তি উচ্চতার জোয়ারে অরিক্ষত উপকূলীয় এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর এতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশের দক্ষিণাঞ্চল। কারণ এই এলাকায় সাগরের বেড়িবাঁধ প্রায় নেই বললেই চলে। এতে বাড়তি জোয়ার এলে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে এবং মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
ঝড়ের অবস্থা সম্পর্কে আবহাওয়া অধিদপ্তর পতেঙ্গা কার্যালয়ের আবহাওয়াবিদ বিশ্বজিৎ চৌধুরী বলেন, ঝড়টি যে বাংলাদেশ উপকূলে প্রভাব ফেলবে না তা আমরা আগেই অনুধাবন করেছি। আর এজন্য কিন্তু এবার সংকেত বাড়ানো হয়নি। তবে জোয়ার যে বাড়তি হবে তা বলা হয়েছিল।
তিনি আরো বলেন, পূর্ণিমার কারণে স্বাভাবিকভাবেই চার ফুট অধিক উচ্চতার জোয়ার হয়ে থাকে। এখন পূর্ণিমার জোয়ার ও ঘূর্ণিঝড় উভয়ের মিলিত প্রভাবে বাড়তি উচ্চতার জোয়ারের সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে চট্টগ্রাম বন্দর সূত্রে জানা যায়, গতকাল সকাল ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত বন্দরের এনসিটি ও সিসিটি জেটিতে হালকা পানি ছিল। জোয়ারের পানি প্রবেশ করলেও তা পায়ের পাতা পর্যন্ত সীমাবদ্ধ ছিল। দুপুর ১২টার পর এ পানি নেমে যায়। এতে ইয়ার্ডের কনটেইনারগুলোর ক্ষতি হয়নি।
ঘূর্ণিঝড় চলে যাওয়ার পর গরমের মাত্রা আবারো বাড়বে কিনা জানতে চাইলে আবহাওয়া অধিদপ্তর পতেঙ্গা কার্যালয়ের সহকারী আবহাওয়াবিদ ফরিদ আহমেদ বলেন, মৌসুমী বায়ু প্রবেশের সময় আগামী মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে। এই ঝড়ের কারণে তা আগাম চলে আসবে এবং এতে গরমের মাত্রা যেমন কমে আসবে তেমনি বৃষ্টিপাতও হবে।
উল্লেখ্য, চলতি মাসের আবহাওয়ার দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে বঙ্গোপসাগরে এক বা একাধিক নিম্নচাপ সৃষ্টির কথা বলা হয়েছে। এসব নিম্নচাপ থেকে একটি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির সম্ভাবনাও বলা হয়েছিল। বছরের এ সময়ে সাগরে নিম্নচাপ ও ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়ে থাকে। এপ্রিল-মে ও সেপ্টেম্বর-অক্টোবর ঘূর্ণিঝড়ের মৌসুম।