জেলায় জেলায় মৃত্যুর মিছিল : চট্টগ্রামে পরিস্থিতির অবনতি

কয়েকদিন ধরে করোনায় মৃত্যু ও সংক্রমণ রেকর্ড করে চলেছে, রাজধানী ঢাকা ত আছেই, সারা দেশের জেলায় জেলায় মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘতর হচ্ছে। হাসপাতালে শয্যাসংখ্যা বাড়িয়েও পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাচ্ছে না। হাসপাতালের মেঝেতে, চত্বরে রোগীদের চিকিৎসা চলছে, এটি তো চিকিৎসা নয়, রোগীর স্বজনদের সান্ত¦না দেয়া। অক্সিজেন, আইসিইউ এর ব্যবস্থা না হওয়ায় স্বজনরা মৃত্যুপথযাত্রী আপনজনের অসহায় দৃষ্টি অবলোকন করছে-গণমাধ্যমে এসব খবর, ছবি দেশবাসীকে যেমন আকুল করে চলেছে তেমনি আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার সীমাবদ্ধতা, দুর্বলতা, অদক্ষতা স্পষ্ট করে তুলেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনার তৃতীয় ঢেউ আছড়ে পড়ছে। এখন সরকার, প্রশাসন, রাজনৈতিক দল সর্বশক্তি, সর্ব উপায় নিয়ে জাতীয় প্রতিরোধ প্রচেষ্টায় যদি সামিল না হয় তবে এই সর্বগ্রাসী বিপদ থেকে পরিত্রাণ এক প্রকার অসম্ভব।
গত বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সরকারি হাসপাতালগুলিতে শয্যাসংখ্যা বাড়ানো ও অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করতে বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউসের সভাপতিত্বে ভার্চুয়াল সভায় বেসরকারি হাসপাতালগুলিকে করোনা রোগীদের চিকিৎসা সেবা বাড়াতে বলা হয়। করোনা উপসর্গদের আইসোলেশনে রাখা এবং টিকা নিতে জনসাধারণকে উদ্বুদ্ধ করতে সামাজিক তৎপরতা জোরদার করতে বলা হয়। আমরা মনে করি এসব সিদ্ধান্ত দ্রুত বাস্তবায়ন করতে জেলা সরকারি প্রশাসন ও স্বাস্থ্যবিভাগ পদক্ষেপ নেবে। করোনার সর্বগ্রাসী থাবা রুখতে জাতীয় পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিশেষজ্ঞ, স্বাস্থ্যবিদ ও নাগরিক সমাজ সমন্বয়ে জাতীয় প্রতিরোধ কমিটি গঠন করা হোক, এতে করোনা প্রতিরোধে সকল দফতরের সমন্বয় প্রচেষ্টা জোরদার হবে, জনগণকে সম্পৃক্ত করার প্রচেষ্টাও জোরদার হবে।
চট্টগ্রামে করোনায় মৃত্যু ও সংক্রমণ বেড়ে চলেছে, গত বৃহস্পতিবার ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত সর্বোচ্চ ৭১৩, মৃত্যু ৯ জনের। ৮৫ শতাংশ মৃত্যু উপজেলায়। অথচ সেখানে জরুরি সেবায় পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। পত্রিকান্তরে প্রকাশ, চট্টগ্রাম মহানগরের ৫টি হাসপাতালের ৩টি ও ১৪ উপজেলার মধ্যে ৫টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেন্ট্রাল অক্সিজেন ব্যবস্থা নেই। উপজেলা হাসপাতালগুলিতে সিলিন্ডার সংকটও রয়েছে। গ্রামের রোগীরা চিকিৎসা না পেয়ে শহরে ছুটছে শেষ অবস্থায়, কিন্তু সেখানেও ঠাঁই নেই অবস্থা। তাই মৃত্যুই তার নিয়তিনির্দিষ্ট হয়ে পড়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ১৫ মাসেও করোনা চিকিৎসা সেবার জরুরি প্রয়োজন মেটাতে স্বাস্থ্য অধিদফতর ব্যর্থ হয়েছে। সংবাদপত্রে তাদের দেয়া সাফল্যের বিজ্ঞপ্তি জনগণের সাথে তামাশাপূর্ণ আচরণ।
আমরা চাই চট্টগ্রামের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলি অবিলম্বে শয্যা সংখ্যা বাড়িয়ে, নতুন কেন্দ্র খুলে করোনা রোগীদের সেবা, আইসিইউ, হাইফ্লো নাজাল ক্যানুলার ব্যবস্থা করবে। উপজেলায় ফিল্ড হাসপাতাল চালু, অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হোক।
চট্টগ্রামের মন্ত্রী, এমপি ও সকলস্তরের জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব হবে এ সকল কাজে সাহায্য করতে এগিয়ে আসা। ওয়ার্ড-ইউনিয়ন-গ্রামে স্বেচ্ছাসেবী তৎপরতা বাড়তে ছাত্র-তরুণদের সম্পৃক্ত করুন। লকডাউনের সময় শহরেও গ্রামে বিধিনিষেধ মেনে চলতে শৈথিল্য দেখা যাচ্ছে। বিপদ আমরাই ডেকে আনছি, কঠিনতর সময় এখন-তা জেনেও আমরা বিপদ সম্পর্কে উদাসীন, আমাদের বোধোদয় কবে হবে।