জাদুকর ফয়সালের তাক লাগানো জাদু

হুমাইরা তাজরীন »

শুরুটা হয় ২০১১ সালের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা থেকে। একজন তরুণ দর্শক বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে। এদিকে একের পর এক জাদু দেখাচ্ছেন জাদুকর। বাড়ি ফিরতে ফিরতে তরুণের মাথায় চেপে বসলো জাদু শেখার ভূত। কিছুতেই সেই ভূত আর নামে না। চট্টগ্রামের সেই ছেলে গিয়ে পৌঁছালেন ঢাকার রামপুরার জাদুকর প্রিন্স হারুনের ম্যাজিক একাডেমিতে। শিখতে শুরু করলেন নানা তাক লাগানো জাদু।

চট্টগ্রামের তরুণ জাদুকর মোহাম্মদ ফয়সাল হাওলাদার। তার পৈতৃক বাড়ি বিক্রমপুর মুন্সিগঞ্জে হলেও জন্ম ও বেড়ে উঠা পুরোটাই নগরীর ২ নম্বর গেইটের মেয়র গলিতে। বাবা মোহাম্মদ খালেক হাওলাদার এবং মা নাসিমা বেগম। ফয়সাল ¯œাতক সম্পন্ন করেছেন ওমর গণি এম ই এস কলেজ থেকে।

জাদু শেখার বিষয়টা নিয়ে তুমুল আগ্রহ থাকলেও বিষয়টি রপ্ত করা এত সহজ ছিলোনা ফয়সালের জন্য। বিশেষ করে পরিবার থেকে জাদু শেখার বিষয়টি নিয়ে শুরুতে অনীহা ছিলো। তারা কিছুতেই মানতে পারছিলেন না ছেলের জাদু শেখার বিষয়টি। কিন্তু একপর্যায়ে ফয়সালকে আর আটকে রাখা গেলো না।

ঢাকা থেকে তালিম নেয়ার পরে ফয়সাল ২০১২ সালে গড়ে তুললেন ‘হেডলাইন অ্যান্ড এক্টিভিশন’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান। নিজের প্রতিষ্ঠানে জাদুর পাশাপাশি লোকসংস্কৃতির নানা উপাদানও যুক্ত করেছেন তিনি। গড়ে তুলেছেন বিশাল ইভেন্ট অর্গানাইজেশন। বায়োস্কোপ, নাগরদোলা, রণ পা, ফেইস পেইন্টিং, সাপ খেলা, বানর নাচ, মোরগ লড়াই, লাঠিখেলা, গম্ভীরা গান ও নাচ, পুতুল নাচ , হাতি প্রদর্শনীসহ নানা গ্রাম্য খেলা ও বিনোদনের ব্যবস্থাও তিনি রেখেছেন।

বড়ো বড়ো কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান হতে শুরু করে স্কুল-কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নানা অনুষ্ঠানে ডাক পড়ে ফয়সাল জাদুকরের। বছরে স্কুল ইভেন্টই থাকে ৮০টির মতো। চিটাগাং ক্লাব , রেডিসন ব্লু, পেনিনসুলা , মেয়র গোল্ডকাপ, জাতীয় উৎসবকে ঘিরে অনুষ্ঠানগুলোই প্রথম পছন্দ ফয়সালের। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের পারফর্মারদের তিনি খুঁজে বের করে যুক্ত করেন নিজের সাথে। হারাতে বসা দেশীয় সংস্কৃতিকে নতুন প্রজন্মের সাথে পরিচিত করানোই তার উদ্দেশ্য।

এ ব্যাপারে মোহাম্মদ ফয়সাল হাওলাদার বলেন, ‘আমি কেবল জাদু দেখিয়ে মানুষকে বুঁদ করে রাখিনা। সব জাদু শেষে দর্শকদের বুঝিয়ে দেই ,জাদু কোনো তন্ত্র-মন্ত্র নয় বরং তা হলো বিজ্ঞান এবং কৌশল। সেই বিজ্ঞান এবং কৌশলটাও আমরা মানুষকে পলিসি মেনটেইন করে জানিয়ে দেই। যাতে মানুষ বুঝতে পারে সবকিছুর পেছনেই একটা যৌক্তিক কারণ থাকে। বাচ্চাদের জন্য উপকারী তথ্যগুলো পারফর্মেন্সের মাধ্যমে আমরা পৌঁছে দেই; যার ফলে বাচ্চাদের মস্তিষ্কে এটার একটা ইমপেক্ট তৈরি হয়। লোকজ সংস্কৃতি হারাতে বসায় শিশুসহ নতুন প্রজন্মের অনেকেই গ্রাম বাংলার বিভিন্ন ঐতিহ্যের ব্যাপারে জানেই না। আমরা সেগুলোকে প্রদর্শন করে এর আনন্দটা বাচ্চারা যাতে পুরোপুরি উপভোগ করতে পারে তা আয়োজনের ব্যবস্থা করি।’