জরায়ুর ক্যান্সার রোধে টিকা পাচ্ছে কিশোরীরা

চট্টগ্রামে মিলবে এপ্রিলে

নিলা চাকমা

নারীদের যত ধরনের ক্যান্সার হয় তারমধ্যে জরায়ুমুখের ক্যান্সার অন্যতম। সঠিক সময়ে হিউম্যান প্যাপিলোমাভাইরাস (এইচপিভি) টিকা নিলে এ জটিল রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এতদিন সরকারিভাবে শুধুমাত্র জরায়ু মুখ স্ক্রিনিং করানো যেত। তবে এবার প্রথমবার বড় পরিসরে দেশের কিশোরীদের জরায়ু ক্যান্সারের টিকা দেওয়া হবে। পরের মাস সেপ্টেম্বরে ঢাকায় এবং আগামী বছর এপ্রিলে চট্টগ্রামে কিশোরীদের এ টিকা দেওয়া হবে জানান স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টরা।

সম্প্রতি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ‘জরায়ুমুখের ক্যানসার প্রতিরোধে হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি) টিকা প্রদান সম্পর্কিত এক সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন সেপ্টেম্বর থেকে জরায়ু ক্যান্সার টিকা দেওয়া হবে।
স্কুলপর্যায়ের ১০ থেকে ১৪ বছর মেয়েদের টিকা আগে দেওয়া হবে। টিকাদানের আওতায় প্রাথমিকভাবে দেশের ১ কোটি ১১ লাখ ১৮ হাজার ৩৫ কিশোরীকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যাদের বয়স ১০ থেকে ১৪ বছর অথবা ৫ম থেকে ৯ম শ্রেণিতে লেখাপড়া করছে। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে ২৫ লাখ ৫৯ হাজার ১৯৫ জন, চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগে ২৫ লাখ ৮১ হাজার ৩৩৪ জন এবং রাজশাহী, খুলনা, রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগে ৪৯ লাখ ৭৭ হাজার ৫০৬ জন।

চট্টগ্রামে টিকা কর্মসূচি শুরু হওয়া নিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, প্রথম ধাপে সেপ্টেম্বরে ঢাকা বিভাগে দেওয়া হবে। দি¦তীয় ধাপে আগামী বছরের এপ্রিলে চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগের সব জেলা, উপজেলা, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার কিশোরীদের টিকার আওতায় আনা হবে। তৃতীয় ধাপে রাজশাহী, খুলনা, রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেটে অঞ্চলে এইচপিভি টিকা দেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে ২০০৮ সাল থেকে এ টিকা প্রয়োগ শুরু হয়। ওই সময় ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের অনুমোদনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এ কর্মসূচি চালাতে বাংলাদেশ সার্ভাইক্যাল ক্যান্সার ভ্যাকসিনেশন প্রোগ্রাম নামে একটি কমিটি করা হয়। তখন ১০ বছরের ৭০ শিশুকে এইচপিভি টিকা দেওয়া হয়। পরে গ্যাভির সহযোগিতায় ২০১৬ সালে গাজীপুরে একই বয়সী আরও ৩০ হাজার শিশুকে এ টিকা দেওয়া হয়। এর ছয় মাসের মধ্যে দুই ডোজের টিকা দেওয়ার মাধ্যমে প্রকল্পটি শেষ হয়।
এরপর ২০১৯ সালে এইচপিভি টিকা ব্যবহারের অনুমোদন চেয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) কাছে আবেদন করে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। ২০২১ সালের ১২ মার্চ এর অনুমোদন দেয় গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিন ইনিমিয়েটিভ (গ্যাভি)। এর প্ররিপ্রেক্ষিতে সারা দেশে সেপ্টেম্বর থেকে এ টিকা দেওয়া হবে।

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন ডা. ইলিয়াস চৌধুরী বলেন, ‘আগে টিকা দেওয়া হতো না। শুধু স্ক্রিনিং করানো হতো। এবার টিকার আওতায় আনা হবে কিশোরীদের। তবে আমদের এখনো কোনো নির্দেশনা আসেনি। নির্দেশনা আসলে কাজ শুরু হবে।’
টিকা নেওয়া প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ ( চমেক) হাসপাতালের অধ্যাপক ডা. আলী আজগর চৌধুরী বলেন, জরায়ুমুখ ক্যান্সারে টিকাটি যেকোনো বয়সী নারীরা নিতে পারবেন। কিন্ত ১০-১৪ বছর বয়সে নিলে ক্যান্সার প্রতিরোধে ৭০-৮০ শতাংশ কাজ করে। কিন্তু প্রাপ্ত বয়সে নিলে তা তেমন কার্যকর হয় না। তখন তাদের নিয়মিত জরায়ুমুখ স্ক্রিনিং করা হবে। একই সাথে অল্প বয়সে বিয়ে না দেওয়া, ধূমপান না করা, অধিক সন্তান নেয়া পরিহার করতে হবে।

এ দিকে প্রতিবছর গড়ে আড়াই থেকে ৩ হাজার ক্যান্সার আক্রান্ত রোগী শুধু চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়। এর মধ্যে গত বছর চার শতের বেশি রোগী জরায়ু ক্যান্সারের চিকিৎসা নিয়েছেন। জরায়ু ক্যান্সার ৮০ শতাংশ রোগীদের ব্র্যাকি থেরাপি দিতে হয়। চট্টগ্রামে কেবল চমেক হাসপাতালে ব্র্যাকি থেরাপি দেওয়া যায়। কিন্ত গত বছরের ৬ জুন থেকে মেশিনটি অচল হয়ে পড়ে আছে। এতে ব্র্যাকি থেরাপি নেওয়া রোগীদের বাড়তি টাকা খরচ করে ঢাকা যেতে হচ্ছে। পড়তে হচ্ছে ভোগান্তিতে।
এ প্রসঙ্গে ক্যান্সার বিভাগের প্রধান ডা. সাজ্জাদ মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, ‘ব্র্যাকি থেরাপি সচল করার চেষ্টা চলছে। কয়েকদিন আগে সরবরাহ প্রতিষ্ঠান থেকে প্রকৌশলী এসে দেখে গেছেন। আশা করি দ্রুত ঠিক করা হবে।’