জয়ের সুবাস পাচ্ছে বাংলাদেশ

সুপ্রভাত ডেস্ক »

ইকরামুল নামের এক দর্শক গ্র্যান্ড স্ট্যান্ডে বসে গতকাল (দ্বিতীয় দিন) ম্যাচটি দেখেছেন। তৃতীয় দিনের খেলা শেষ হওয়ার পর মাঠ ছাড়তে ছাড়তে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া এই দর্শক বলছিলেন, ‘বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটে দেখে তৃপ্তি নিয়ে বাড়ি ফেরা যাবে এটা ছিল কল্পনাতীত।’ ইকরামুলের মতো বিস্মিত হয়েছেন অনেকেই। মিরপুরের সবুজ উইকেটে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রতিটি সেশনেই দাপট দেখিয়েছেন। স্বাগতিকদের দাপটে আফগান ক্রিকেটারদের অবস্থা যেন উত্তাল কোনও সাগরে পতিত হয়েছেন! ৬৬২ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে ৪৫ রানে হারিয়েছে দুই উইকেট। সফরকারীদের জিততে হলে আগামী দুই দিনে করতে হবে ৮ উইকেটে ৬১৭ রান।

টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে এত রান চেজ করে জেতার রেকর্ড নেই। এমনকি টাইমলেস টেস্টের যত পরিসংখ্যান পাওয়া গেছে সেখানেও বিশাল রান চেজ করে জয়ের নজির নেই। ২০০৩ সালে অস্ট্রেলিয়ার দেওয়া ৪১৮ রানের লক্ষ্য চেজ করে জিতেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বাংলাদেশের দেওয়া ৬৬২ রান চেজ করে জেতা মানে নতুন ইতিহাস তৈরি করা। কিন্তু বাস্তবে এমন কিছু এক কথায় অসম্ভব! মিরপুরে ২০৯ রান চেজ করে জেতার ইতিহাস আছে। সেখানে ৬৬২ রান টপকানো মানে রসদ ছাড়া হিমালয়ের চূড়ায় ওঠা।

২০১৯ সালে চট্টগ্রামে আফগানিস্তানের বিপক্ষে হারের পর ঢাকা টেস্ট নিয়ে বাংলাদেশ সতর্ক ছিল। বিশেষ করে কেমন উইকেটে হবে এই টেস্ট। শেষ পর্যন্ত পেসবান্ধব সবুজ উইকেটে ম্যাচ খেলার সিদ্ধান্ত হয়। ভয় ছিল নিজেদের পরিকল্পনায় না আবার হোঁচট খেতে হয়। শেষ পর্যন্ত নিজেদের পরিকল্পনায় সফল হয়েছে বাংলাদেশ। টেস্টের প্রতিটি সেশনেই ছিল লাল-সবুজের আধিপত্য। প্রথম দিনে দাপট দেখিয়ে ৭৯ ওভারে বাংলাদেশ তুলে ফেলে ৩৬২ রান। শান্ত তুলে নেন ক্যারিয়ারের তৃতীয় সেঞ্চুরি। দ্বিতীয় দিন সকালে কিছুটা হোঁচট খেলেও বল হাতেও দেখায় আধিপত্য। আফগানিস্তানকে ১৪৬ রানে অলআউট করে দ্বিতীয় ইনিংসে ১ উইকেটে ১৩৪ রান তুলে শেষ করে দ্বিতীয় দিন। তাতে বাংলাদেশের লিড দাঁড়ায় ৩৭০ রান।

সমর্থকরা অপেক্ষায় ছিলেন কত দূরে গিয়ে বাংলাদেশ তাদের ইনিংস সমাপ্ত করে। শেষ পর্যন্ত ৪ উইকেট হারিয়ে ৪২৫ রানে ইনিংস ঘোষণা করেছেন অধিনায়ক লিটন দাস। ততক্ষণে ২৬ ইনিংস পর সেঞ্চুরি খরা কাটিয়ে আপন মহিমায় ফিরেছেন মুমিনুল হক। ক্যারিয়ারের ১২তম সেঞ্চুরি তুলে নিতে বাহারি সব শট খেলে ভক্তদের আনন্দ দিতে কার্পণ্য করেননি তিনি। মুমিনুলের হতে পারতো এটাই শেষ টেস্ট! কেননা, লম্বা সময় ধরেই ব্যাটে রান নেই তার। গত ২৬ ইনিংসের মধ্যে মাত্র দুবার হাফ সেঞ্চুরি করতে পেরেছিলেন। বাকি ইনিংসগুলোর বেশিরভাগই ছিল সিঙ্গেল ডিজিট। এমন অবস্থায় খাদের কিনারাতেই ছিলেন বাঁহাতি ব্যাটার। ১৪৫ বলে ১২ চার ও ১ ছক্কায় ১২১ রানে অপরাজিত থেকেছেন।

এদিকে, নাজমুল হোসেন শান্তও মুমিনুলকে পাশে রেখে রেকর্ড ছুঁয়েছেন। টানা দুই ইনিংসে সেঞ্চুরি তুলে মুমিনুলের পাশে বসেছেন তিনি। সাবেক অধিনায়ক কাছ থেকে শান্তর নান্দনিক এই ইনিংসের উদযাপন দেখেছেন। ২০১৮ সালে চট্টগ্রাম টেস্টে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মুমিনুল হকও করেছিলেন দুই ইনিংসে ১৭৬ ও ১০৫। এবার তার একক কৃতিত্বে শান্ত ভাগ বসিয়েছেন। আগের ম্যাচে ১৪৬ রানে থামা শান্ত শুক্রবার থেমেছেন ১২৪ রানে।

শান্তর পর মুশফিক ঝড়ো ব্যাটিংয়ের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। কিন্তু বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। ৩ বলে ১ ছক্কায় ৮ রান করে আউট হয়েছেন। মুশফিক আউট হওয়ার পর অধিনায়ক লিটন ও মুমিনুল মিলে উপহার দেন অবিচ্ছিন্ন ১৪৩ রানের জুটি। আগের ম্যাচে ৯ রানে আউট হওয়া লিটন খেলেছেন ৬৬ রানের ইনিংস। মুমিনুল-লিটনের এই জুটির ওপর দাঁড়িয়েই বাংলাদেশ রেকর্ড ৬৬২ রানের লক্ষ্য আফগানিস্তানকে। এর আগে ২০২১ সালে জিম্বাবুয়েকে ৪৭৭ রানের লিড দিয়েছিল বাংলাদেশ। খবর বাংলাট্রিবিউন।

এরপর তো বিশাল রান পাহাড় দেখে শুরুতেই ভেঙে পড়ে আফগানিস্তানের টপ অর্ডার। ফিরেছেন দুই ওপেনার। শেষ পর্যন্ত দুই উইকেট হারিয়ে ৪৫ রানে অথৈ সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছে সফরকারী দল। তাতে আফগানিস্তানের ‘সলিল সমাধি’ এখন কেবল সময়ের হাতে বন্দি। তৃতীয় দিন শেষে টেস্টের যা অবস্থা, তাতে বাংলাদেশ দল আগাম উৎসবের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। দিনশেষে ৬১৭ রান এগিয়ে থাকার পর তো এমনটাই হওয়ার কথা।