ছিনতাইয়ের ‘নাটক সাজিয়ে’ ১০ লাখ টাকা মেরে ধরা

সুপ্রভাত ডেস্ক »

ছিনতাইয়ের ‘নাটক সাজিয়ে’ একটি কোম্পানির টাকা তুলে ‘আত্মগোপনে’ যাওয়া অফিস সহকারীকে তার এক সহযোগীসহ গ্রেফতার করেছে চট্টগ্রামের  পুলিশ। গ্রেফতাকৃতরা হলেন ক্লিফটন গার্মেন্টসে ফিনিশিং বিভাগের অফিস সহকারী আব্দুর রহিম ওরফে রিপন (৩১) এবং তার সহযোগী মো. সেলিম (৩৫)।

কোতোয়ালি থানার ওসি নেজাম উদ্দিন জানান, গত ১২ সেপ্টেম্বর রিপনকে নগরীর কাজীর দেউড়ি ব্র্যাক ব্যাংক থেকে ১০ লাখ টাকা তুলে স্টেশন রোডের স্ট্যান্ডার্ড চ্যাটার্ড ব্যাংকে জমা দেওয়ার দায়িত্ব দিয়েছিলেন অফিসের হিসাব রক্ষক। ‘সে ব্র্যাক ব্যাংক থেকে টাকা তুললেও সেই টাকা অফিসে কিংবা স্ট্যান্ডার্ড চ্যাটার্ড ব্যাংকে জমা না দিয়ে মোবাইল ফোন বন্ধ করে আত্মগোপনে চলে যায়।’

পরদিন রাতে বাসায় ফিরে মাথায় আঘাত পাওয়ার কথা বলেন রিপন। পরিবারের সদস্যরা তাকে প্রথমে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এবং সেখান থেকে বেসরকারি ন্যাশনাল হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করান।

পরে রিপনের খোঁজ না পেয়ে ক্লিফটন গ্রপের পক্ষ থেকে কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা করা হয়। মামলা তদন্তের এক পর্যায়ে গত মঙ্গলবার ন্যাশনাল হাসপাতালে রিপনের অবস্থান শনাক্ত করা হয় বলে জানান ওসি নেজাম।

জিজ্ঞাসাবাদে রিপন পুলিশকে বলেন, নূপুর মার্কেটের কাছে ডিবি পরিচয় দিয়ে দুই লোক তাকে অটোরিকশায় তুলে নেয়। তারপর মোবাইল ও ব্যাগ কেড়ে নিয়ে তাকে বায়েজিদ লিঙ্ক রোডে নিয়ে যায়।

সেখানে পানি খাওয়ার পরে তিনি সংজ্ঞা হারান এবং চেতনা ফেরার পর নিজেকে অলঙ্কার এলাকার একটি ঝোপের ভেতর আবিষ্কার করেন বলে পুলিশের কাছে দাবি করেন তিনি। রিপন পুলিশকে বলেন, জ্ঞান ফিরে তিনি দেখতে পান, টাকার ব্যাগ আর তার মোবাইল নেই। পরে এক বৃদ্ধ লোকের সহায়তায় বাসায় ফিরে যান।

পুলিশ কর্মকর্তা নেজাম উদ্দিন বলেন, ‘রিপনের কথার সত্যতা যাচাইয়ের জন্য তার বর্ণনা দেওয়া ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনা করা হয়। কিন্তু এ ধরনের কিছু দেখতে না পেয়ে সন্দেহের মাত্রা বেড়ে যায়।’

চিকিৎসকরা রিপনের শারীরিক অবস্থা ‘ভালো’ বলায় মঙ্গলবার তাকে আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। আদালতের অনুমতি নিয়ে এক দিনের হেফাজতে এনে জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে রিপন স্বীকার করেন কোম্পানির টাকা তিনি এক বন্ধুকে রাখতে দিয়েছেন।

পরে বুধবার রাতে টাইগারপাস রেলওয়ে কলোনিতে অভিযান চালিয়ে রিপনের বন্ধু সেলিমকে আটক করে পুলিশ। তার বাসা থেকেই ১০ লাখ টাকা, রিপনের মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগ উদ্ধার করা হয়। এ মামলায় রিপনের পাশাপাশি সেলিমকেও আসামি করে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে বলে জানান কোতোয়ালি থানার ওসি।

তিনি বলেন, রিপন সাত বছর ধরে ক্লিফটন গ্রুপে চাকরি করছিলেন। আগেও তার মাধ্যমে ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন ও জমার কাজ করিয়েছিলেন কর্মকর্তারা। সে কারণে তিনি সবার কাছে বিশ্বস্ত ছিল।

‘জিজ্ঞাসাবাদে রিপন বলেছেন, তিনি অংশীদারে গ্লাসের ব্যবসা করতেন। কিন্তু সেখানে তার ১০ লাখ টাকা লোকসান হয়। সে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ছিনতাইয়ের নাটক সাজিয়েছেন।’