ছিদ্দিকুল ইসলাম আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করেছেন

নাগরিক শোকসভায় আবদুল্লাহ আল নোমান

সাবেক মন্ত্রী ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএপি)’র ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান বলেছেন, ছিদ্দিকুল ইসলাম ছিলেন একজন শ্রমিকনেতা, সেবক ও দেশপ্রেমিক রাজনীতিবিদ। তিনি ছিলেন সেই পরীক্ষিত নেতা যিনি শ্রমিক স্বার্থরক্ষায় নিজের স্বার্থ কখনও দেখেননি। তাঁর মৃত্যুর পর বোঝা গেছে শ্রমিকদের অন্তরে তিনি কত বড় ভালবাসার নেতা ছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে এদেশের শ্রমজীবী মানুষের অপূরণীয় হয়েছে যা পূরণ করা সম্ভব নয়। তিনি আমাদের মাঝে তাঁর চারিত্রিক মাহাত্ম্য ও অমায়িক গুণাবলির দ্বারা এমন স্মৃতি রেখে গেছেন, যা ভুলে যাবার মতো নয়। ছিদ্দিকুল তাঁর ৭৮ বছরের জীবনে বিচরণ করেছেন রাজনীতি আর সমাজকল্যাণমূলক কাজে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই তিনি সাফল্য পেয়েছিলেন এবং নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছিলেন। অমায়িক ব্যবহার, দেশপ্রেম ও কর্তব্যনিষ্ঠা, কঠোর পরিশ্রম আর সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন ছিল তাঁর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। আর এ কারণেই তিনি জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে সবার শ্রদ্ধা অর্জনে সমর্থ হন। তিনি এলাকার নদী ভাঙনরোধ, ইপিজেড প্রতিষ্ঠা, যোগাযোগ ব্যবস্থা ও শিক্ষার উন্নয়নসহ চট্টগ্রামের উন্নয়নে নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন। তিনি স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিম-লে তাঁর কর্মদক্ষতার গুণে উন্নয়ন কর্মকা- বাস্তবায়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন।

নোমান আরও বলেন, ছিদ্দিকুল ছিলেন চট্টগ্রামের প্রিয়মুখ। মানুষের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তুলে ভাসানীর আদর্শের রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

আবদুল্লাহ আল নোমান গতকাল বিকাল ৪টায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব মিলনায়তনে মাওলানা ভাসানী ফাউন্ডেশনের সভাপতি, বিশিষ্ট পরিবহন ও বন্দরশ্রমিক নেতা হালিশহরের শফি কন্ট্রাক্টরের সন্তান ছিদ্দিকুল ইসলাম স্মরণে নাগরিক শোকসভা ও দোয়া মাহফিলে প্রধান আলোচকের বক্তব্যে এসব কথা বলেন।

নোমান বলেন, বর্তমানের দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ। মানুষ দুবেলা খেতে পাচ্ছে না। জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গেছে। দেশ আজ মহাসংকটের মধ্যে। আজ ক্ষমতাসীন সরকারের ব্যর্থতার কারণেই মানুষ জেগে উঠেছে। তাই আন্দোলনের মাধ্যমেই সরকারের পতন ঘটাতে হবে।

বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইলিয়াস-এর সভাপতিত্বে স্মরণসভায় বিশেষ আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীক। তিনি বলেন, ছাত্রাবস্থায় ছিদ্দিকুল ইসলাম রাজনীতিতে যোগদান করে নিজের কর্মদক্ষতা, মেধা ও গণমুখী ভূমিকার কারণে এলাকার মানুষের প্রিয়জন হিসেবে অবির্র্ভূত হন। তিনি দুঃখকষ্টে মনোবল অটুট রেখেছেন। গণতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করেছেন। নীতি ও আদর্শের সঙ্গে তিনি কখনোই আপস করেননি। দেশ ও জাতির প্রতি কর্তব্য পালনে ছিদ্দিকুল ইসলাম ছিলেন সৎসাহস ও সেবার অনন্য দৃষ্টান্ত।

সমাপনী বক্তব্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইলিয়াস বলেন, ছিদ্দিকুল ইসলামের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ছিল আকর্ষণীয়। বিনয়ী ও অমায়িক ব্যবহারসম্পন্ন মানুষ হিসেবে তিনি জনগণের ভালোবাসা অর্জনের সমর্থ হয়েছিলেন। দানশীলতা, পরোপকার আর উদারতা তার চরিত্রকে করেছিল মহিমান্বিত।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী সাবেক ছাত্রনেতা জোনায়েদ সাকি বলেন, ছিদ্দিকুল ইসলাম একজন আদর্শ রাজনীতিবিদ ছিলেন এবং দলমতনির্বিশেষে সব রাজনৈতিক নেতা ও কর্মীদের কাছে ছিলেন শ্রদ্ধাভাজন। মানুষের সেবা ছিল তাঁর জীবনের ব্রত। আর্তমানবতায় তিনি দান করেছেন অকৃপণ হস্তে। দেশের এ দুঃসময়ে ছিদ্দিকুল ইসলামের মতো ত্যাগী, নিষ্ঠাবান আর সৎনেতার আজ বড় বেশি প্রয়োজন।

ভাসানী অনুসারী পরিষদ-এরর আহবায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু বলেন, ছিদ্দিকুল ইসলাম আজ নেই। তিনি আর কোনোদিন ফিরেও আসবেন না। তবে তিনি রেখে গেছেন একজন প্রকৃত রাজনীতিবিদ, শ্রমিক সংগঠক, খাঁটি দেশপ্রেমিক, শীর্ষস্থানীয় সমাজসেবক ও নিষ্ঠাবান মনুষের আদর্শ। এ আদর্শের অনুশীলন ও মূল্যবোধচর্চার মাধ্যমেই তিনি বেঁচে থাকবেন আগামী প্রজন্মের কাছে।

স্মরণসভায় আরো বক্তব্য রাখেন দেশপ্রেমিক প্রগতিশীল রাজনৈতিক ও বিভিন্ন শ্রেণি- পেশার নেতৃবৃন্দ। নাগরিক শোকসভায় ছিদ্দিকুল ইসলামের বিদেহী আত্মার রুহের মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।