চিকিৎসার পরেও মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি থাকে যেসব হৃদরোগীর

সুপ্রভাত ডেস্ক

হার্ট অ্যাটাক থেকে সেরে ওঠার এক বছর পরও যদি কোনো ব্যক্তি তার বুকে তীব্র ব্যথা অনুভব করেন, সেক্ষেত্রে অ্যাটাক পরবর্তী আট বছরের মধ্যে তার মৃত্যুর আশঙ্কা থাকে প্রায় শতভাগ। যুক্তরাষ্ট্রের হৃদরোগ গবেষণা সংস্থা আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাম্প্রতিক এক গবেষণায় জানা গেছে এ তথ্য।
বৃহস্পতিবার নিজেদের জার্নালে সেই গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশ করেছে অ্যাসোসিয়েশন। সেখানে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি যদি হার্ট অ্যাটাক থেকে সেরে ওঠার এক বছর পরও বুকে তীব্র ব্যথা অনুভব করেন, এমনকি সেই ব্যথা যদি সরাসরি হৃদপিন্ডের সঙ্গে সম্পর্কিত নাও হয়- সেক্ষেত্রে চিকিৎসা পরবর্তী ৮ থেকে সাড়ে ৮ বছরের মধ্যে ওই ব্যক্তির আকস্মিক মৃত্যুর সমূহ আশঙ্কা রয়েছে।
যদিও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দিন দিন হার্ট অ্যাটাক হওয়ার পর সুস্থ হয়ে ওঠা রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে, কিন্তু সেরে ওঠা পরবর্তী ব্যথার বিষয়ে এ পর্যন্ত তেমন গবেষণা হয়নি।
২০০৪ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ১৮ হাজার ৩৭৬ জন সেচ্ছাসেবকের তথ্য সংগ্রহ এবং পরে তা বিশ্লেষণের মাধ্যমে এই গবেষণা প্রবন্ধ প্রস্তুত করেছে আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন। এই রোগীদের সবারই বয়স ৭৫ বছরের কম এবং তাদের প্রত্যেকেই জীবনে অন্তত একবার হার্ট অ্যাটাকের শিকার হওয়ার পর চিকিৎসা নিয়ে সেরে উঠেছেন।
গবেষণায় অংশ নেওয়া স্বেচ্ছাসেবকদের ৬৫ শতাংশ জানিয়েছেন, চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফেরার পর ২ মাসের মধ্যেই তারা বুকে তীব্র ব্যথা অনুভব করেছেন। তবে তাদের একটি বড় অংশ এ ও জানিয়েছেন, এক বছরের মধ্যে ব্যাথার তীব্রতা হ্রাস পেয়ে তা মাঝারি ও খানিকটা সহনশীল পর্যায়ে নেমে আসে।
আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, হার্ট অ্যাটাক থেকে সুস্থতার পর যেসব রোগী প্রথমে তীব্র ও পরে মাঝারিমাত্রার ব্যথা নিয়মিত বুকে অনুভব করেন, তাদের মধ্যে ৩৫ শতাংশ আট থেকে সাড়ে আট বছরের মধ্যে যে কোনো কারণে তারা মারা যেতে পারেন। যাদের মৃত্যুঝুঁকি কম, তারা ভোগেন বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায়।
ব্যথার সঙ্গে মৃত্যুর এই সরাসরি সম্পর্কের কারণ অবশ্য এখনও স্পষ্ট নয় বিজ্ঞানীদের কাছে। যুক্তরাষ্ট্রের মাউন্ট সিনাই হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের প্রধান ড. জর্জ ড্যাঙ্গাস মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে বলেন, ‘এই ব্যথা হলো হৃদপিন্ডে প্রদাহের একটি উপসর্গ। অর্থাৎ হার্ট অ্যাটাক হওয়ার পর রোগীর দেহে এমন পরিবেশ সৃষ্টি হয়, যার জেরে কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমে গুরুতর প্রভাব পড়ে।’
‘আসলে অনেক সময় দেখা যায়, কোনো একটি বিষয়ে আমরা বিস্তর গবেষণা করছি, অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছি, কিন্তু শেষে খুব সাধারণ কিছু বেরিয়ে এলো। অর্থাৎ, এমন কোনো ফলাফল পাওয়া গেল, যার জন্য এসব গবেষণা, পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন ছিল না। আমার মনে হয় এই ব্যথার ব্যাপারটিও এরকমই।
উল্লেখ্য, ধূমপায়ীদের হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বেশি থাকে। কিন্তু আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের গবেষণায় অংশ নেওয়া স্বেচ্ছাসেবকদের মধ্যে যারা চিকিৎসার পরও বুকে তীব্র ব্যথা অনুভব করেছেন, তাদের মধ্যে কেউ নারী, কেউ বা ডায়াবেটিস রোগী। এ তালিকায় অধুমপায়ীরাও রয়েছেন। কিন্তু বিস্ময়করভাবে স্বেচ্ছাসেবকদের মধ্যে যারা ধূমপায়ী, তারা কেউ চিকিৎসার পর বুকে তীব্র ব্যাথা অনুভব করেননি বলে জানিয়েছেন।
যেহেতু এই ব্যথার উৎস ও কারণ জানা যায়নি, তাই আপাতত এর কোনো চিকিৎসাও নেই। তবে চিকিৎসকরা বলেছেন, হার্ট অ্যাটাকের চিকিৎসার পর জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি সম্ভব।সূত্র : সিএনএন