চাক্তাই খাল, চট্টগ্রামের দুঃখই হয়ে থাকবে কি

 

চীনের হুয়াংহো নদীর সঙ্গে তুলনা করে একসময় চাক্তাই খালকে বলা হতো ‘চট্টগ্রামের দুঃখ’। সে প্রায় চার দশক আগে। এরমধ্যে চাক্তাই খাল দিয়ে অনেক পানি প্রবাহিত হয়েছে, অনেক পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, অনেক পরিকল্পনার বাস্তবায়ন হয়েছে কিন্তু এখনো সে চাক্তাই খাল চট্টগ্রামের দুঃখই রয়ে গেল।
নগরের অন্যতম সংকট জলাবদ্ধতা নিরসনের কাজ চলছে বেশ কয়েকবছর ধরে। এরপর পরিস্থিতির যে উন্নতি ঘটেছে তা বলার অবকাশ নেই। পত্রিকায় বলা হচ্ছে, শহর থেকে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ পলিথিনসহ নানা ধরনের বর্জ্য কর্ণফুলী নদীতে গিয়ে পড়ছে। সদরঘাট থেকে বাকলিয়ার চর পর্যন্ত ৮টি খাল দিয়ে বিভিন্ন ধরনের বর্জ্য ও আবর্জনা গিয়ে পড়ছে কর্ণফুলীতে। এই বর্জ্য এখন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের বড় ধরনের মাথাব্যথার কারণ হিসেবে দেখা দিয়েছে। প্রতিদিন গড়ে ২৫ টন আবর্জনা অপসারণের মাধ্যমে কর্ণফুলী নদীতে বহুল প্রত্যাশার ক্যাপিটাল ড্রেজিং প্রকল্প সম্পন্ন হয়েছে। ২০১১ সালে মালয়েশিয়ার মেরিটাইম এন্ড ড্রেজিং কর্পোরেশন নামের কোম্পানির মাধ্যমে ক্যাপিটাল ড্রেজিং প্রকল্প শুরু করা হলেও মাঝপথে কাজটি বন্ধ হয়ে যায়। কয়েকবছর বন্ধ থাকার পর ডিপিএম পদ্ধতিতে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর মাধ্যমে চীনা কোম্পানি চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডকে দিয়ে নতুন করে ড্রেজিং কাজ শুরু করে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
‘সদরঘাট টু বাকলিয়ার চর ড্রেজিং’ নামের এই প্রকল্পের আওতায় নদী থেকে ৫১ লাখ ঘনমিটার পলি উত্তোলন করা হয়। এতে ব্যয় হয় ৩শ’ কোটিরও বেশি টাকা। প্রকল্পের আওতায় সদরঘাট থেকে বাকলিয়ার চর পর্যন্ত প্রায় আড়াই কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ২৫০ মিটার চওড়া এলাকায় ড্রেজিং কার্যক্রম পরিচালিত হয়। গত নভেম্বরে এই প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। ড্রেজিং এর সুফল ধরে রাখার জন্য বর্তমানে রক্ষণাবেক্ষণের কাজ চালানো হচ্ছে। ড্রেজিং পরবর্তী তিন বছরের রক্ষণাবেক্ষণের কাজটি প্রকল্পের আওতায় রয়েছে।
কিন্তু এই রক্ষণাবেক্ষণ কাজ চালাতে গিয়ে নতুন সমস্যায় পড়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ । প্রতিনিয়ত বিপুল পরিমাণ বর্জ্য নদীতে গিয়ে পড়ায় চাক্তাই খালের মুখ নতুন করে ভরাট হতে শুরু করেছে। এই মাত্রা এত দ্রুত যে মাত্র কয়েকদিনেই খালের মুখ ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এই মাটি সরানোর জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষকে নতুন করে ড্রেজার লাগাতে হয়েছে। ড্রেজার প্রতিদিন যে পরিমাণ বর্জ্য সরাচ্ছে তার থেকে বহু বেশি খাল হয়ে নদীতে গিয়ে পড়ছে।
আসলে আমাদের পরিকল্পনাতেই প্রচুর গলদ আছে। খাল ও নালাকে সচল রাখতে হলে প্রথমে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আধুনিকতা আনতে হবে। অপচনশীল বর্জ্য যেমন পলিথিন, প্লাস্টিক যেন কোনোভাবেই খালে না যায় সে ব্যবস্থা করতে হবে। অধিকাংশ মানুষ মনে করে নালা, খাল আছে ময়লা ফেলার জন্য, এ ধারণা পাল্টাতে প্রচারণা চালাতে হবে। এরপরে নালা ও খাল পরিষ্কার রাখার কাজ সারাবছরই অব্যাহত রাখতে হবে। স্লুইস গেট দিয়ে জলাবদ্ধতা সমস্যা নিরসন কখনো সম্ভব হবে না। এটা সামনে আরও স্পষ্ট হবে তাতে সন্দেহ নেই।