চট্টগ্রামে প্রথমবারের মতো চাষ হচ্ছে কিনোয়া

ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী

মিরসরাইয়ে চাষী দিলীপ নাথকে সঙ্গে নিয়ে ক্ষেত পরিদর্শন করছেন কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্র রায়-সুপ্রভাত।

রাজু কুমার দে, মিরসরাই »

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে প্রথমবারের মতো চাষ হচ্ছে সুপার ফুড খ্যাত কিনোয়া। উপজেলার মঘাদিয়া ইউনিয়েনর তিনখরিয়াটোলা এলাকায় দিলীপ নাথ নামে এক কৃষক ২৪ শতক জমির ওপর কিনোয়া চাষ করছেন। এতে সহযোগিতা করেছে মিরসরাই কৃষি অফিস।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশে নতুন ফসল হিসেবে পরিচিত পেলেও এই ফসলের বেশ চাহিদা রয়েছে ইউরোপ আমেরিকায়। সুপার ফুড নামে খ্যাত এই পণ্যটিতে একই সাথে রয়েছে হাইপ্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেল, আয়রন ও এন্টিঅক্সিডেন্ট। তবে ডায়াবেটিস  রোগীদের জন্য বেশ উপকারী। তাই বৈশ্বিক বাজারে এর জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। কম খরচে মাত্র ৭৫ থেকে ৮০ দিনের মধ্যে এই ফসল ঘরে তোলা সম্ভব। এছাড়া অন্যন্য ফসলের তুলনায় সময়ও কম লাগে।

কৃষিবিদরা জানান, প্রতি শতাংশ জমিতে কিনোয়া চাষ করতে ৫০০-৬০০ টাকা খরচ হয় এবং এতে ফসল উৎপন্ন হবে ৪-৬  কেজি কিনোয়া। কৃষকদের দিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে কিনোয়ার চাষ করে সুফল পাওয়া গেছে।

বাংলাদেশে কিনোয়ার চাষের অনুকূলে পরিবেশ রয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে কিনোয়ার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তবে বাংলাদেশের মানুষ কিনোয়ার ব্যাপারে এত বেশি অবগত নন। যে কারণে এখনো পর্যন্ত এখানে কিনোয়ার মার্কেট গড়ে ওঠেনি। তবে সীমিত পর্যায়ে কিনোয়ার চাহিদা রয়েছে। সুপারশপে কিনোয়া পাওয়া যাচ্ছে। আগ্রহীরা সুপার শপগুলো থেকে কিনোয়া সংগ্রহ করে থাকেন। বর্তমানে বাংলাদেশে বিদেশ থেকে কিনোয়া আমদানি করে কিনোয়ার চাহিদা পূরণ করা হচ্ছে। আমদানিকৃত কিনোয়ার প্রতি কেজির দাম হচ্ছে ১ হাজার ৬০০ টাকা। দেশে ক্রমেই কিনোয়ার ক্রেতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ২৪ শতক জমিতে চট্টগ্রামে প্রথমবারের মতো পরীক্ষামূলক কিনোয়া চাষ হয়েছে মিরসরাইয়ে। তবে ভালো ফলন দেখে কৃষক সন্তুষ্ট বলে জানান কৃষি অফিস।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, গাছে গাছে ফলন এসেছে। ফলনের ভারে কিছু গাছ নুয়ে পড়েছে। এটি মূলত ধান বা গমের মতই এক ধরনের বীজ। ভাত বা রুটি খেতে খেতে মুখে যদি অরুচি চলে আসে তাহলে কিনোয়া হতে পারে উত্তম বিকল্প। আশপাশের লোকজন বিদেশি কিনোয়া দেখতে ভিড় করতে দেখা  গেছে।

চাষি দিলীপ নাথ বলেন, আমি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ রায়ের সহযোগিতায় ২৪ শতক জমিতে প্রথমবারের মতো কিনোয়া চাষ করেছি। কৃষি কর্মকর্তা বিভিন্ন সময় আমাকে বুদ্ধি পরামর্শ দিয়েছেন। উনার পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করায় ভালো ফলস হয়েছে  দেখে আমি আনন্দিত। গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর কিনোয়া বীজ বপন করি। আশা করছি অল্প কিছু দিনের মধ্যে এগুলো ঘরে তুলতে পারবো।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ রায় জানান, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক পরিমল স্যার বাংলাদেশে সর্বপ্রথম কিনোয়া নিয়ে কাজ করেছেন। আমরা স্যারের মাধ্যমে বীজগুলো  পেয়েছি। গত বছরের ডিসেম্বরের ১৭ তারিখে বীজগুলো বপন করা হয়। অনেকটা সরিষা চাষের পদ্ধতিতে হওয়ায় খরচ ও সময় দুটোই কম লাগে। ৪ থেকে ৫ দিনের মধ্যে গাছ গজাতে শুরু করে। চট্টগ্রামে এই প্রথম হলেও দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলে এটির চাষ শুরু হয়েছে। এটির পুষ্টি উপাদান অনেক ভালো। বিশেষ করে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অত্যন্ত কার্যকরী কিনোয়া।