চট্টগ্রামের চাওয়া-পাওয়া

চট্টগ্রাম বন্দরের ছবিটি তুলেছেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আলোকচিত্রী শোয়েব ফারুকী।

রুশো মাহমুদ »

দেশের প্রধানতম সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম। এই বন্দরের নানা উন্নয়ন কার্যক্রম চলছে। হচ্ছে আউটার রিং রোড। তার কোল ঘেঁষে হবে আগামীর বন্দর বে-টার্মিনাল। আউটার রিং রোড টানেল দিয়ে যুক্ত করেছে ওপারের আনোয়ারাকে। টানেলের মাধ্যমে তৈরি হয়েছে এক নতুন সম্ভাবনা।

টানেলের সুবিধা কাজে লাগিয়ে কর্ণফুলির অপর পাড়ে আমরা একটি নতুন শহর যেমন পেতে পারি তেমনি নতুন নতুন জেটি তৈরি করে চট্টগ্রাম বন্দরকেও পরিকল্পিতভাবে সম্প্রসারণ করা যেতে পারে।

নগর ও বন্দর  থেকে অনতিদূরে মিরসরাইয়ে তৈরি হচ্ছে দেশের সবচেয়ে বড় ও পরিকল্পিত অর্থনৈতিক শিল্পাঞ্চল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর। উপমহাদেশেরও অন্যতম বড় অর্থনৈতিক অঞ্চল হতে যাচ্ছে এটি। এই অঞ্চলকে কেন্দ্র করে দেশের ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ট এনে দেবে অপার সম্ভবনা।

মিরসরাই থেকে আউটার রিং রোডে যুক্ত হবে সুপার ডাইক। সাগরের পাশ ঘেঁষে ডাইক চলে যাবে কক্সবাজার হয়ে টেকনাফ। মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর মহেশখালী প্রান্তে যুক্ত থাকবে এই মেরিন ড্রাইভ।

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইনের কাজও অনেকদূর এগিয়েছে। নতুন কালুরঘাট সেতু সময়মতো না হওয়াটাই এখন কেবল সমস্যা। এ সেতুর দ্রুত বাস্তবায়ন জরুরি। এটা ছাড়া নতুন রেলপথ পূর্ণতা পাবে না।

সরকারের পরিকল্পনায় আছে ঢাকা-লাকসাম কর্ডলাইন। ঢাকা-চট্টগ্রাম রেল যোগাযোগ উন্নয়নে সবচেয়ে ভালো বিকল্প হচ্ছে কর্ডলাইন। পাশাপাশি ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথ ইলেকট্রিক ট্র্যাকশনে রূপান্তর। এতে ব্যয় হবে হাইস্পিড রেলপথ নির্মাণের পাঁচ ভাগের এক ভাগ। অল্প খরচে ও অল্প সময়ে কর্ডলাইন নির্মাণ সম্ভব। এ দুই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে মাত্র দুই থেকে আড়াই ঘণ্টায় ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাওয়া যাবে।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক। কিলোমিটারের হিসেবে ২৬৪। দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক রুট। দেশের অর্থনীতির মেরুদ- হিসেবে বিবেচনা করা হয় ঢাকা-চট্টগ্রাম করিডোরকে। দেশের অর্থনৈতিক কার্যক্রম বাড়ছে। বিদ্যমান চার লেনের মহাসড়ক দিয়ে এ চাহিদা কোনভাবেই মেটানো সম্ভব নয়।  লেন বাড়িয়ে ছয় বা আট লেনের সড়ক নয়, ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য এ রুটে এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা জরুরি। সারাবিশ্বেই এক্সপ্রেস ধারণা এসেছে ব্যবসা-বাণিজ্যকে ফ্যাসিলিটেট করার জন্য।

বৃহত্তর চট্টগ্রাম ঘিরে সরকারের মেগা প্রজেক্টগুলোর ভার বহনে চট্টগ্রাম মহানগর কি আদৌ প্রস্তুত? নগরকে বিশ্বমানে নিয়ে যেতে হলে পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে কোন ঘাটতি রাখা যাবে না। নগরকে গড়ে তুলতে হবে আগামী দিনের জন্য।

একটি বিশ্বমানের শহরের জন্য আধুনিক সুয়্যারেজ সিস্টেম ও ভালো ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট অত্যাবশ্যক। চট্টগ্রাম ওয়াসা একটি সুয়্যারেজ প্রকল্প হতে নিয়েছে এবং কাজও শুরু করে দিয়েছে। প্রতিটি বাসা থেকে পয়ঃবর্জ্য সরাসরি পাইপের মাধ্যমে চলে যাবে সুয়্যারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টে। ফলে শহরের কোন ভবনের নিচে আর সেপটিক ট্যাংক রাখার প্রয়োজন হবে না।

বাস্তবায়নের পথে ও পরিকল্পনাধীন প্রজেক্টগুলো শেষ হওয়ার আগেই চট্টগ্রাম মহানগরীকে প্রস্তুত করতে হবে। নগরের পরিসর বাড়াতে হবে সবদিকে। এখন নগর বাড়ার প্রবণতা সীতাকু- ও হাটহাজারীমুখী। ওয়ান সিটি টু টাউন কনসেপ্টে টানেল হচ্ছে, কালুরঘাটে রেল কাম সড়ক নতুন সেতু হবে। শহরকে তাই বিস্তৃত করার সুযোগ তৈরি হয়েছে আনোয়ারা, পটিয়া, বোয়ালখালী, সীতাকু- ও হাটহাজারী পর্যন্ত। এসব এলাকায় উপশহর গড়ে তুলে কমিউটার ট্রেন, মেট্রোরেল ও বাস র‌্যাপিড ট্রানজিটের মাধ্যমে মূল নগরের সাথে যুক্ত করে দিতে হবে।

পৃথিবীতে কিছু শহরকে নগরবিদরা বলেন ‘গ্লোবাল সিটি’। নিউইয়র্ক, লন্ডন, টোকিও, হংকং, সিঙ্গাপুর যার উদাহরণ। বিশ্বব্যাপী প্রভাব-প্রতিপত্তি ওসব শহরের। এই প্রভাব প্রধানত অর্থনৈতিক।

চট্টগ্রামকেও সেভাবে গড়ে তোলার সুযোগ আছে। ভূ-কৌশলগত অবস্থান ও অর্থনৈতিক সম্ভাবনা বিবেচনায় চট্টগ্রাম সবচেয়ে এগিয়ে। আধুনিকায়ন, সংস্কার, পরিবর্তন, পরিবর্ধন এসবই হচ্ছে নগর রসায়ন। প্রয়োজনবোধে চট্টগ্রাম নগরকে ওভারহোলিং করে গ্লোবাল সিটির মর্যাদায় নিয়ে যাওয়া সম্ভব।