কারখানার কর্মপরিবেশ : নিরাপত্তাই সর্বাগ্রে বিবেচ্য

Rupganj-Fire

রূপগঞ্জে হাসেম ফুডসের কারখানায় অগ্নিকা-ে নারী, শিশুসহ ৫২জন শ্রমিকের মর্মান্তিক মৃত্যু আমাদের শ্রম ব্যবস্থাপনা আর শ্রমিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে মালিক, সরকার ও নানা কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব পালনে অবহেলা ও উদাসীনতার চিত্রটিই প্রকটভাবে সামনে এনেছে। পুড়ে অঙ্গার হয়ে যাওয়া মানুষ যে প্রশ্ন রেখে গেলো আমাদের কাছে, তার মুখোমুখি আমাদের সকলকেই দাঁড়াতে হবে। শ্রমের মর্যাদার কথা সকলে বলে থাকি, আসলে কি এর দৃষ্টান্ত কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে?
রূপগঞ্জের হাসেম ফুডসের কারখানা নির্মাণ থেকে শুরু করে কর্মপরিবেশ, শ্রমিকের নিরাপত্তা, কারখানার আপৎকালীন দুর্ঘটনা রোধ ও প্রতিকারে ন্যূনতম উপায়গুলি না থাকা, বিধিবিধান ভঙ্গ করে শিশুশ্রমিক নিয়োগÑঅগ্নিকা-ের পর এসব বিষয়গুলি সামনে এসেছে। কেবল রূপগঞ্জ নয় সারা দেশের কারখানা, বড় বড় মার্কেট, দোকান, ওয়ার্কশপ, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেও এসব অব্যবস্থা, অনিয়ম বিদ্যমান। রূপগঞ্জের কারখানায় অগ্নিনির্বাপণও উদ্ধার তৎপরতায় নিয়োজিত ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা বলেছেন, বিল্ডিং কোড মেনে ভবন নির্মাণ করা হয়নি, এত বড় ভবনে যেখানে কয়েক হাজার শ্রমিক কাজ করেন, সেই ভবনে পর্যাপ্ত সিঁড়িপথ ও জরুরি নির্গমন পথ নেই, তদুপরি গেইটে তালা লাগানো থাকায় শ্রমিকরা বেরোতে পারেনি। আগুনের লেলিহান শিখার সামনে অসহায়ভাবে তারা মৃত্যুবরণ করেছে।
সারা দেশেই কারখানা, বড় বড় স্থাপনা, আবাসিক ভবন নির্মাণ, দেখাশোনা, ছাড়পত্র, পরিদর্শন কাজে যে সকল কর্তৃপক্ষ জড়িত তারা যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন না করায় মানুষের জীবন নিরাপত্তাহীনতায় পড়েছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় তাদের অধীনস্থ দফতরগুলোর কাজে যথাযথ নজরদারি করেনি। অতীতে শিল্প কারখানায় অগ্নিকা- বা দুর্ঘটনা ঘটেছে, সে সবের তদন্তে নিয়োগ করা তদন্ত কমিটির রিপোর্টও দেশবাসী জানতে পারেনি, প্রতিকারের পথও খোঁজা হয়নি। দায়ী মালিক বা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সাজা হয়েছে, এমন দৃষ্টান্তও তেমন খুঁজে পাওয়া যাবে না ফলে মালিক কিংবা প্রতিষ্ঠান স্বস্তিতে মুনাফা করেছে, শ্রমিকদের নিরাপত্তার কথা ভাবেনি।
তৈরি পোশাক শিল্পকারখানায় বড় কয়েকটি অগ্নিকা- ও দুর্ঘটনার পর ক্রেতাপ্রতিষ্ঠান, সরকার, উদ্যোক্তা কারখানার কর্মপরিবেশের উন্নতি ও শ্রমিকদের নিরাপত্তা সাধনে অবকাঠামোগত সংস্কার কাজ করেছে, এই সেক্টরে নির্মিত বেশ কয়েকটি কারখানা সবুজ ফ্যাক্টরি হিসেবে স্বীকৃতিও পেয়েছে। কিন্তু দেশের অন্যান্য সেক্টরের কারখানা-প্রতিষ্ঠানগুলির অবকাঠামোগত সংস্কার, উন্নয়ন হয়নি। সামগ্রিক পরিদর্শন করে দেশের কারখানা-প্রতিষ্ঠানগুলির বিশদ পরিস্থিতি নিয়ে সরকারি প্রতিবেদন তৈরি করা জরুরি।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) শ্রমিকদের কর্ম পরিবেশ নিরাপদ করতে সব কারখানায় জরুরি ভিত্তিতে তদারকির গুরুত্বের উল্লেখ করে এ ক্ষেত্রে সহযোগিতা করবে বলে এক বিবৃতিতে উল্লেখ জানিয়েছে। আমরা আইএলওর এই বিবৃতিকে স্বাগত জানাই। আমাদের দাবি, পোশাক শিল্পে যেভাবে কারখানার সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, অনুরূপ প্রচেষ্টা দেশের সকল কারখানা-প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে নেওয়া হোক। কর্মপরিবেশের উন্নতি ও শ্রমিকদের নিরাপত্তায় মালিক-সরকার ও বেসরকারি সংস্থা এগিয়ে আসুক। এ ব্যাপারে দেশের শ্রমিক সংগঠনগুলিরও দায়িত্ব আছে। আমরা চাই, ভবন নির্মাণ তদারকি ও ছাড়পত্র প্রদানে সকল সংস্থা, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করবে। প্রয়োজনে প্রচলিত আইনের সংস্কার সাধনও বাঞ্ছনীয়।