কর্ণফুলীসহ সব নদী রক্ষায় কঠোর হতে হবে

কর্ণফুলী নদীর সীমানায় মাটি ভরাট, দখল ও নির্মাণকাজ বন্ধ করতে আবারও নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। নির্দেশ বাস্তবায়ন করে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ও জেলা প্রশাসককে দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। সেসঙ্গে কর্ণফুলী নদীর জায়গা দখলকারীদের তালিকা চেয়েছেন হাইকোর্ট। নদীর মূল সীমানা (জিএস/আরএস দাগ অনুসারে) বিশেষ টিমের মাধ্যমে জরিপ করে তিন মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে জরিপ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গত মঙ্গলবার বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন।
এ ছাড়া কর্ণফুলী নদীর দখল ও নির্মাণকাজ বন্ধে নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না এবং নদী রক্ষায় কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুলও জারি করেছেন হাইকোর্ট। পরিবেশসচিব, পানি উন্নয়নসচিব, পরিকল্পনাসচিব, ভূমিসচিব, অর্থসচিব, নৌপরিবহনসচিব, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান, চট্টগ্রামের পুলিশ সুপারসহ সংশ্লিষ্টদের চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
গত ৪ ডিসেম্বর রাজধানীতে মন্ত্রিসভা কক্ষে ঢাকার চারপাশের নদীগুলোর নাব্যতা রক্ষা ও দূষণ রোধে প্রণীত মহাপরিকল্পনার সমীক্ষা প্রতিবেদন উপস্থাপন এবং সংশ্লিষ্ট প্রকল্প গ্রহণের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়ে করা সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দেশকে রক্ষা করতে হলে নদীগুলোকে বাঁচাতে হবে। তিনি বলেন, আমরা যদি বাংলাদেশকে রক্ষা করতে চাই তাহলে আমাদের নদীগুলোকে বাঁচাতে হবে। আমাদের ড্রেজিং করতে হবে এবং নাব্যতা বজায় রাখতে হবে। নদী ভাঙন রোধকল্পে আমাদের ড্রেজিং করতে হবে। নদীতে ময়লা ফেলা বন্ধ করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা যাই করি না কেন, প্রথমেই বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কথা আমাদের মনে রাখতে হবে।
এ বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি তুরাগ নদ রক্ষায় মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের করা এক রিটের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে এক যুগান্তকারী রায় দেন হাইকোর্ট। বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চের দেওয়া পূর্ণাঙ্গ রায়ে ১৭ দফা নির্দেশনা রয়েছে। তাতে আদালত বলেছেন, নদীর বাঁচা-মরার ওপর বাংলাদেশের অস্তিত্ব জড়িত। বাঁচলে নদী বাঁচবে দেশ, বাঁচবে প্রিয় বাংলাদেশ।
রায়ের নির্দেশনায় বলা হয়, নদী রক্ষা কমিশনকে তুরাগ নদসহ দেশের সব নদ-নদীর দূষণ ও দখলমুক্ত করে সুরক্ষা, সংরক্ষণ ও উন্নয়নের নিমিত্তে আইনগত অভিভাবক ঘোষণা করা হলো। নদ-নদীসংশ্লিষ্ট সব সংস্থা অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় আজ থেকে বাংলাদেশের সব নদ-নদীর দূষণ ও দখলমুক্ত করে স্বাভাবিক নৌচলাচলের উপযোগী করে সুরক্ষা, সংরক্ষণ, উন্নয়ন, শ্রীবৃদ্ধিসহ যাবতীয় উন্নয়নে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন বাধ্য থাকবে। নদ-নদীসংশ্লিষ্ট সব সংস্থা অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে নদী কমিশনকে সঠিক এবং যথাযথ সাহায্য-সহযোগিতা দিতে বাধ্য থাকবে। রায়ে বলা হয়, ‘আগাম প্রতিরোধের নীতি এবং দূষণকারী কর্তৃক ক্ষতিপূরণ প্রদানের নীতি আমাদের দেশের আইনের অংশ হিসেবে ঘোষণা করা হলো।’
উচ্চ আদালতের রায় এবং প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পরেও কীভাবে নদী দখল-দূষণ হয়। সে দখলমুক্ত করার কাজটি কেন বারবার বাধাগ্রস্ত হয় তা আমরা বুঝতে পারছি না। আর কতভাবে বলার পর নদী-খাল সুরক্ষায় প্রশাসন কঠোর হবে জানি না!