করোনার চিকিৎসা দিতে নগরীর ১২ বেসরকারি হাসপাতালকে হাইকোর্টের নির্দেশ

সেই একই চিত্র! বেসরকারি হাসপাতাল থেকে হাসপাতাল ঘুরেও মিলছে না চিকিৎসা সেবা। অবশেষে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির প্রচেষ্টা, সেখানেও দুর্ভোগ পিছু ছাড়ে না। সোমবার তোলা ছবি- স্টার মেইল

আদেশে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে হলি ক্রিসেন্ট #

নিজস্ব প্রতিবেদক :
চট্টগ্রামে করোনা আক্রান্ত রোগীদের পর্যাপ্ত চিকিৎসাসেবা প্রদানের জন্য নগরীর ১২টি বেসরকারি হাসপাতালকে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। একই সাথে চট্টগ্রামের সরকারি-বেসরকারি সকল হাসপাতাল, ক্লিনিক ও মেডিক্যাল কলেজগুলোতে রোগীর সংখ্যা এবং তাদের কী কী চিকিৎসাসেবা দেয়া হচ্ছে তা উল্লেখ করে আগামী ২২ জুনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন জমা দিতে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জনকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

সোমবার (১৫ জুন) হাইকোর্টের বিচারক জে বি এম হাসান এই নির্দেশ প্রদান করেন। নির্দেশ পাওয়া ১২টি বেসরকারি হাসপাতালগুলো হল-পার্কভিউ হাসপাতাল, মেডিক্যাল সেন্টার, ইম্পেরিয়াল হাসপাতাল, সার্জিস্কোপ হাসপাতাল, ডেল্টা হাসপাতাল, সিএসটিসি হাসপাতাল, সিএসসিআর হাসপাতাল, ন্যাশনাল হাসপাতাল, এশিয়ান হাসপাতাল, রয়েল হাসপাতাল, মেট্রোপলিটন হাসপাতাল ও ম্যাক্স হাসপাতাল।
হাইকোর্টের দুই আইনজীবী মো. সাইফুল ইসলাম ও মো আজিজুল হক চট্টগ্রামের বেসরকারি হাসপাতালও ক্লিনিকগুলোতে করোনা আক্রান্ত রোগীদের ভর্তি এবং সুচিকিৎসার দাবি জানিয়ে একটি রিট পিটিশন (নম্বর-১৩৭ (এনেক্স-২৪)/২০২০) দাখিল করেন।
সোমবার (১৫ জুন) উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত এই আদেশ প্রদান করেন। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার হাসান এম এস আজিম ও সুপ্রিম কোর্ট বারের সহ-সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ বাকির উদ্দীন ভূঁইয়া। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সমরেন্দ্র নাথ।
করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের নিরবচ্ছিন্ন, কার্যকর, ইতিবাচক সেবা প্রদানের লক্ষ্যে পর্যাপ্ত আইসিইউ বেড ও ভেন্টিলেটর সুবিধা সম্বলিত উল্লেখিত ১২টি বেসরকারি হাসপাতালে দ্রুত রোগীদের পর্যাপ্ত চিকিৎসা ও সেবা চালু এবং প্রদানের জন্য আদেশে বলা হয়েছে । সোমবার রাতে বিষয়টি সুপ্রভাতকে নিশ্চিত করেন রিটের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেওয়া সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ বাকির উদ্দীন ভূঁইয়া।

হাইকোর্টের আদেশে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে হলি ক্রিসেন্ট
হাইকোর্টের এই আদেশের আগে এ ১২টি বেসরকারি হাসপাতালকে গত ৪ এপ্রিল করোনা রোগীদের চিকিৎসা দিতে লিখিতভাবে নির্দেশ দিয়েছিল চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক। চট্টগ্রামে করোনা প্রতিরোধে অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনারের নেতৃত্বে গঠিত সার্ভেইল্যান্স টিমের সভায় তখন সিদ্ধান্তটি হয়। কিন্তু ১২টি হাসপাতাল তখন করোনা রোগীদের চিকিৎসা দিতে অপারগতা প্রকাশ করে। বেসরকারি ক্লিনিক মালিকদের সংগঠন চট্টগ্রাম প্রাইভেট ক্লিনিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন নগরীর খুলশী জাকির হোসেন সড়কের চার বছর ধরে পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে থাকা হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালকে সংস্কার করে করোনার চিকিৎসার জন্য চালু করে দেওয়ার প্রস্তাব দেয়। চট্টগ্রামে করোনা প্রতিরোধে গঠিত সার্ভেইল্যান্স টিম তাদের সেই প্রস্তাবনা মেনে নেয়। চট্টগ্রামের বেসরকারি হাসপাতালগুলোর সহায়তায় গত ২১ মে হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালটি চালু করা হয়। এ হাসপাতালটিতে এখন করোনা রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
জেলা সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি সুপ্রভাতকে বলেন, সার্ভেইল্যান্স টিমের সভায় ১২টি বেসরকারি হাসপাতালের বিষয়টি মীমাংসিত হয়ে গেছে। তারা আমাদের হলি ক্রিসেন্ট চালু করে দিয়েছেন। এরপরও তারা তাদের সাধ্যমতো কোভিড, নন কোভিড রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন। যারা হাইকোর্টে পিটিশন দাখিল করেছেন তারা বিষয়টি জানে না। আমরা হাইকোর্টকে বিষয়টি অবহিত করবো।
হলি ক্রিসেন্ট চালুর পর নগরীর বেসরকারি হাসপাতালে কোভিড ও সন্দেহভাজন কোভিড রোগীদের চিকিৎসা না দিয়ে ফিরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ পায় প্রশাসন। এরপর সার্ভেইল্যান্স টিমের এক সভায় ১২টি হাসপাতালের মধ্যে যেগুলো ৫০ শয্যার তাদেরকে কোভিড ও সন্দেহভাজন কোভিড রোগীদের চিকিৎসা দিতে নির্দেশ দেয়। কিন্তু এরপরও তারা রোগীদের চিকিৎসাসেবা না দেওয়ার অভিযোগ উঠে।