মাথা আছে, ব্যথা নেই!

রোহিঙ্গা ক্যাম্প

কমিটি গঠনের ১ বছরেও শুরু হয়নি উন্নয়ন কাজ

রফিক উদ্দিন বাবুল, উখিয়া :
রোহিঙ্গা ক্যাম্পের কারণে বনভূমি, বনজ সম্পদ, জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এ ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে কমিটি গঠন করা হলেও গত এক বছরে উন্নয়ন কাজ শুরু করা হয়নি বলে জানিয়েছেন বনবিভাগ।
তাদের দাবি বন্য হাতি চলাচলের রাস্তার উপর ঝুঁপড়ি নির্মাণ করার কারণে প্রতি মাসেই রোহিঙ্গাদের বাড়িঘর ভাংচুর করা হচ্ছে। আমন ফসল নষ্ট হচ্ছে। ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে বসতবাড়ির ফলজ ও বনজ গাছগাছালি। বন্য হাতির ভয়ে অনেককে নির্ঘুম রাত কাটাতে হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
জানা গেছে, গত বছরের ৫ নভেম্বর বনবিভাগের পক্ষ থেকে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে দেয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউট অব ফরেস্ট্রি অ্যান্ড অ্যানভায়রনমেন্টাল সায়েন্সের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কামাল হোসাইনকে প্রধান করে গঠিত এই ‘বিশেষজ্ঞ কমিটি’তে রয়েছেন একই বিভাগের প্রফেসর ও বনসম্পদ অর্থনীতি বিশেষজ্ঞ ড. মো. দানেশ মিয়া, ঢাকাস্থ ইস্টওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও পরিবেশ অর্থনীতি বিশেষজ্ঞ ড. একেএম এনামুল হক। কমিটিতে চট্টগ্রাম অঞ্চলের বন সংরক্ষক আবদুল আউয়াল সরকার ছাড়াও পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রতিনিধি, বাংলাদেশ বন গবেষণা ইন্সটিটিউট (বিএফআরআই) চট্টগ্রামের প্রতিনিধি, আন্তর্জাতিক প্রকৃতি সংরক্ষণ সংস্থা (আইইউসিএন) এর প্রতিনিধি ও জেলা প্রশাসনের একজন করে প্রতিনিধিকে রাখা হয়েছে।
কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগ সূত্রে জানা গেছে, একই বছরের ১৮ অক্টোবর কক্সবাজারে অনুষ্ঠিত ‘জাতীয় সংসদে’র ‘বন ও পরিবেশ বিষয়ক সংসদীয় কমিটি’র বৈঠকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের কারণে ধ্বংস হওয়া বনজ সম্পদ এবং জীববৈচিত্র্যের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ২ হাজার ৪২০ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়। এর মধ্যে জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি ১ হাজার ৮২৯ কোটি টাকা এবং বনজ দ্রব্যের ক্ষতি ৫৯১ কোটি টাকা বলে ধরা হয়।
কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে নতুন পুরনো মিলে ৩৪টি শরণার্থী শিবিরে সরকারের হিসাব অনুযায়ী ১১ লাখ ১৯ হাজার রোহিঙ্গা বসবাস করছে। বনবিভাগের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, রোহিঙ্গাদের আশ্রয়ের কারণে ৮ হাজার একর বন ধ্বংস হয়েছে। এরমধ্যে বসতি নির্মাণ করা হয়েছে ৬ হাজার ১৬৪ একরের উপর। আর রোহিঙ্গাদের জ্বালানী কাঠ সংগ্রহের ফলে ধ্বংস হয়েছে আরো ১ হাজার ৮৩৭ একর বনভূমি। সেখানে শত বছরের প্রাকৃতিক বন ছিল ৪ হাজার ১৩৬ একর এবং সামাজিক বন ছিল ২ হাজার ২৭ একর।
এ সম্পর্কে কমিটির প্রধান ‘বিশেষজ্ঞ’, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউট অব ফরেস্ট্রি অ্যান্ড অ্যানভায়রনমেন্টাল সায়েন্সের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কামাল হোসাইন বলেন, গত বছরের নভেম্বরের শুরুতে এ কমিটি গঠনের পর থেকেই মুখিয়ে আছি কবে কাজ শুরু করব। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে বনবিভাগ বিষয়টি ঝুলিয়ে রেখেছে।
চট্টগ্রাম অঞ্চলের বন সংরক্ষক আবদুল আউয়াল সরকার বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের কারণে বনভূমি, বনজ সম্পদ, জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে গঠিত ‘বিশেষজ্ঞ কমিটি’র কর্মকা- চালানোর জন্য এখনও কোন অর্থ বরাদ্দ আসেনি। ফলে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের কাজও শুরু করা যায়নি।
কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির জানান, মহেশখালীতে বাস্তবায়নাধীন ‘ইনস্টলেশন অব সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং’ প্রকল্পে যেসব বিষয়ের উপর ভিত্তি করে বন, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি নির্ণয় করা হয়েছে, সেই পদ্ধতিতেই উখিয়া-টেকনাফে রোহিঙ্গাদের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত বনজ ও জীববৈচিত্র্যের ক্ষয়-ক্ষতি নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু ক্ষয়-ক্ষতি নিরূপণের জন্য বিশেষজ্ঞ কমিটি ব্যবহার করা হয়নি।
তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে যে প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে সেখানে সৃজিত বন, প্রাকৃতিক বন ও আর জীববৈচিত্র্যের মূলত তিনভাগে ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে।
উখিয়া বন রেঞ্জ কর্মকর্তা কাজী তরিকুল ইসলাম বলেন, উদ্ভিদ বিজ্ঞানের ভাষায় নিম গাছ হল পলিউশন ক্লিনার, যে দূষিত বাতাসকে পরিশুদ্ধ করে। আর মাত্র ১০ বছর বয়সী একটি তেঁতুল গাছ যে পরিমাণ অক্সিজেন উৎপাদন করে তা ১৫০ জন মানুষের জন্য যথেষ্ট। একজন মানুষের অক্সিজেনের জন্য ২৫ বর্গফুটের উদ্ভিদ আচ্ছাদন প্রয়োজন। বৃক্ষ শুধু অক্সিজেন উৎপাদন করেনা, দূষিত কার্বনও শোষণ করে। আর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের কারণে এই ধরনের লক্ষ লক্ষ বৃক্ষ ও হাজার হাজার প্রাণী হারিয়ে গেছে। আর হারিয়ে যাওয়া এ বনের কার্বন শোষণ ও অক্সিজেন উৎপাদন মূল্যায়ন এবং পশু-পাখিসহ অন্যান্য প্রাণীর হারিয়ে যাওয়ার পরিবেশগত ক্ষতিকর প্রভাব নিরূপণ জরুরি বলে মনে করেন পরিবেশবিদগণ।