সড়কের অভাবে ১৪ কোটি টাকার গাটিয়াডেঙ্গা সেতু অকেজো

সাতকানিয়ায় ১৪ কোটি ব্যয়ে নির্মিত গাটিয়া ভাঙ্গা সড়ক কোনো কাজে আসছে না- সুপ্রভাত

সাতকানিয়া

জনভোগান্তি চরমে

নিজস্ব প্রতিনিধি, সাতকানিয়া :

সড়ক ও জনপথ বিভাগ এবং স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) রশি টানাটানিতে নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার ৩ বছর পরও এ্যাপ্রোচ সড়কের অভাবে চালু করা যায়নি ডলু খালের উপর নির্মিত গাটিয়া ডেঙ্গা সেতু।

ফলে জন সাধারণের কোন কাজে না আসায় অকেজো হয়ে পড়ে আছে সেতুটি। সাতকানিয়ার নলুয়া ইউনিয়নের পূর্ব গাটিয়াডেঙ্গা ও আমিলাইষ ইউনিয়নের হিলমিলি অংশে ডলু নদীর উপর নির্মিত গাটিয়াডেঙ্গা সেতুটি প্রায় ১৪ কোটি টাকা ব্যয় হলেও পার্শ্ববর্তী ৫ ইউনিয়নের প্রায় ৩০ হাজার লোক ব্রিজের কোন সুফল ভোগ করতে পারছেন না। ফলে খালের উভয় তীরের বাসিন্দারা অতীতের মত এখনও চরম ভোগান্তিতে রয়েছেন।

দোহাজারী সড়ক বিভাগ বলছে এলজিইডি এ্যাপ্রোচ সড়ক করে দেয়ার কথা। অন্যদিকে, এলজিইডি বলছে সড়ক বিভাগের নির্মিত ব্রিজের জন্য এলজিইডি এ্যাপ্রোচ সড়ক করে দিবে, এটা কিভাবে সম্ভব?

এলাকাবাসী জানান, কোন বিভাগ কি ভাবছে তা বুঝার বিষয় নয়। এ্যাপ্রোচ সড়ক তৈরি করে ব্রিজটিকে যাতায়াত উপযোগী করে দেয়াই প্রাণের দাবী।

সরেজমিন পরিদর্শনে এলাকাবাসীর সাথে আলাপকালে জানা গেছে, এক সময় নলুয়া ইউনিয়নের পূর্ব গাটিয়াডেঙ্গা, কাঞ্চনা, আমিলাইষ, এঁওচিয়া ও পশ্চিম ঢেমশা ইউনিয়নের অধিকাংশ স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার শিক্ষার্থী, সাধারণ লোকদের দৈনন্দিন কাজ, উৎপাদিত কৃষিপণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের একমাত্র যাতায়াত ব্যবস্থা ছিল ডলু নদী পার হয়ে ছোট্ট পরিসরের এ সড়কটি। যাতায়াতের জন্য পূর্বে নদী পারাপারের একমাত্র মাধ্যম ছিল নৌকা। এ মাধ্যম শুষ্ক মৌসুমে কোন রকমে চললেও বর্ষায় পাহাড়ি ঢলে নদীতে খর¯্রােতের কারণে মৃত্যু ঝুঁকি নিয়ে পার হয়ে চলাচল করত এ এলাকার বাসিন্দারা। বিষয়টি উপলব্ধি করতে পেরে নলুয়া ইউনিয়নের পূর্ব গাটিয়াডেঙ্গা এলাকার বাসিন্দা ফ্লোরা লিমিটেডের সাবেক চেয়ারম্যান মরহুম মো. নুরুল ইসলাম (ইসলাম সাহেব) ও আমিলাইষ ইউপি চেয়ারম্যান মো. সোলাইমান তৎকালীন যোগাযোগ মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর নিকট তদবির করে বেইলি ব্রিজ নির্মাণের জন্য বরাদ্দ আনেন। পরবর্তীতে সংসদ সদস্য শাহজাহান চৌধুরী বেইলি ব্রিজের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। এরপর কাজ শুরু হয়ে ২টি সম্পূর্ণ ও ২টি অর্ধনির্মিত মোট ৪টি পিলারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে ব্রিজ। পিলারগুলো পরে পানির তোড়ে প্রায় ক্ষয়ে যায়। পরবর্তীতে ঢালাই সেতু নির্মাণের জন্য বরাদ্দ হলে ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে স্থানীয় সাংসদ অধ্যাপক ড. আবু রেজা নদভী ব্রিজটির নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন। চন্দনাইশ উপজেলার কাজলি-কাশেম এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ২০১৭ সালের শেষের দিকে ব্রিজের নির্মাণ কাজ শেষ করেন। অন্যদিকে ব্রিজটি নির্মিত হওয়ায় এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের আশা পূরণ হলেও শুধুমাত্র এ্যাপ্রোচ সড়কের অভাবে যাতায়াত নির্বিঘœ না হওয়ায় এখনও পর্যন্ত সিঁড়ি দিয়ে পায়ে হেঁটে অনেক ভোগান্তি সয়ে ব্রিজের উপর দিয়ে চলাচল করছে ওই এলাকার লোকজন।

ব্রিজ নির্মাণের পর জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এ্যাপ্রোচ সড়কের জন্য বিভিন্ন স্থানে দেন দরবার করেও কোন লাভ হয়নি। এভাবেই পার হয়ে যায় কয়েক বছর। বর্তমানে এ্যাপ্রোচ সড়ক তৈরির বিষয়ে সড়ক ও জনপদ এবং এলজিইডি একে অপরকে দোষারোপ করছেন। দুই বিভাগের রশি টানাটানির কারণে এ্যাপ্রোচ সড়ক তৈরি না হওয়ায় দুঃখ ঘুচেনি এলাকাবাসীর।

এ ব্যাপারে আমিলাইষ ইউপি চেয়ারম্যান এএইচএম হানিফ ও সাবেক চেয়ারম্যান মো. সোলাইমান বলেন, অনেক প্রত্যাশার পর ব্রিজটি নির্মাণ হয়েছে। এলজিইডি নাকি সড়ক বিভাগ কারা এ্যাপ্রোচ সড়ক তৈরি করবে সেটা এলাকাবাসীর দেখার বিষয় নয়। অতি শিগগিরই যাতায়াতের সুবিধার জন্য এ্যাপ্রোচ সড়কটি খুবই জরুরি এবং এটি আশপাশের ৫ ইউনিয়নের বাসিন্দাদের প্রাণের দাবী।

দোহাজারী সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সুমন সিংহ ব্রিজটি তাদের বিভাগ নির্মাণের কথা স্বীকার করলেও এ্যাপ্রোচ সড়ক তৈরির কাজ তাদের নয় উল্লেখ করে বলেন, এ্যাপ্রোচ সড়কের জায়গাটি হচ্ছে এলজিইডির। সেজন্য এ্যাপ্রোচ সড়কের কাজটিও এ বিভাগের করে দেয়ার কথা।

যোগাযোগ করা হলে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের সাতকানিয়া উপজেলা প্রকৌশলী পারভেজ সরওয়ার হোসেন বলেন, এ ব্রিজটির এ্যাপ্রোচ সড়ক যে জায়গায় হবে ওই জায়গার মালিক এলজিইডি নয়। এছাড়া সড়ক বিভাগের কাছ থেকে ভূমি অধিগ্রহণের জন্য কোন লিখিত প্রস্তাবও পাইনি। আর সড়ক ও জনপদ বিভাগের তৈরি ব্রিজের এ্যাপ্রোচ সড়ক এলজিইডি করে দিবে, এটা কিভাবে সম্ভব?