এসপিএম দেশের জ্বালানি নিরাপত্তাকে নিয়ে যাবে নতুন উচ্চতায়

বাংলাদেশের জ্বালানি খাতে যুগান্তকারী মেগা প্রকল্প এসপিএম বা সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিংয়ের নির্মাণ কাজ শেষ। প্রকল্পটির আওতায় ১১০ কিলোমিটার লম্বা দুটি সমান্তরাল পাইপলাইন সাগরের তলদেশে বসানো হয়েছে। একটি পাইপলাইন দিয়ে তেলবাহী ট্যাংকার থেকে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল খালাস শুরু হয়েছে গতকাল থেকে। সৌদি আরব থেকে ৮২ হাজার টন অপরিশোধিত জ্বালানি তেল নিয়ে আসা এমটি হোরাই ট্যাংকার থেকে রোববার (২ জুন) পরীক্ষামূলকভাবে এ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। অন্য পাইপলাইন দিয়ে শীঘ্রই পরিশোধিত ডিজেল খালাস শুরু হবে।
প্রকল্পের আওতায় ২২০ কিলোমিটার পাইপলাইনের পাশাপাশি তৈরি করা হয়েছে ৬টি বিশালাকার স্টোরেজ ট্যাঙ্ক, যা বাংলাদেশের তেল মজুদ সক্ষমতাকে নিয়ে যাবে নতুন উচ্চতায়।
৯০ একর জায়গায় নির্মিত ট্যাংকগুলোর মধ্যে তিনটি পরিশোধিত তেলের জন্য ও তিনটি অপরিশোধিত তেলের জন্য। প্রতিটি পরিশোধিত স্টোরেজ ট্যাংকারের ধারণক্ষমতা ৫০ হাজার ঘনমিটার। অপরিশোধিত স্টোরেজ ট্যাংকারের ধারণক্ষমতা ৩০ হাজার ঘনমিটার।
মহেশখালীর কালারমারছড়া ইউনিয়নে উপকূল থেকে ছয় কিলোমিটার পশ্চিমে বঙ্গোপসাগরে ভাসমান জেটি বা সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং স্থাপন করা হয়েছে। এই ভাসমান জেটি থেকে ৩৬ ইঞ্চি ব্যসের দুটি আলাদা পাইপলাইনের মাধ্যমে জাহাজ থেকে প্রথমে তেল নিয়ে আসা হবে কালারমারছড়ায় পাম্প স্টেশন ও ট্যাঙ্ক ফার্মে। সেখানে দুই লাখ টন ধারণক্ষমতার ছয়টি ট্যাংক রয়েছে। সেখান থেকে ৭৪ কিলোমিটার লম্বা পাইপলাইনের মাধ্যমে তেল আনা হবে আনোয়ারার সমুদ্র উপকূলে। সেখান থেকে ৩৬ কিলোমিটার পাইপলাইন পাড়ি দিয়ে তেল নেয়া হবে পতেঙ্গার ইস্টার্ন রিফাইনারিতে।
বাংলাদেশ ও চীন সরকারের মধ্যে জিটুজি ভিত্তিতে ৭ হাজার ১২৫ কোটি টাকায় এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড। কর্ণফুলী নদীতে তেল খালাসের বিশেষায়িত জেটিতে বড় ট্যাংকার ভিড়তে না পারায় জ্বালানি তেল নিয়ে আসা বড় ট্যাংকারগুলো সনাতন পদ্ধতিতে প্রথমে সাগরে নোঙর করে রাখা হতো। এরপর ছোট ট্যাংকারের মাধ্যমে তেল স্থানান্তর করে জেটিতে এনে পাইপের মাধ্যমে খালাস করা হতো। এতে এক লাখ টন তেলবাহী একটি ট্যাংকার থেকে তেল খালাসে ১০ দিন বা তারও বেশি সময় লাগতো। তেল খালাসে খরচ ও সময় বেশি লাগায় ২০১৫ সালে ‘সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং’ নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। নতুন প্রকল্পের আওতায় পাইপলাইনের মাধ্যমে মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় প্রায় এক লাখ টন জ্বালানি তেল খালাস সম্ভব হবে।
জ্বালানি তেল খালাসের জন্য ভাসমান জেটিতে ট্যাংকার ভেড়ানো, টাগবোটসহ যাবতীয় সহায়তা দিচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।
বর্তমানে দেশের একমাত্র রাষ্ট্রায়ত্ত তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারি বছরে ১৫ লাখ টন অপরিশোধিত জ্বালানি তেল পরিশোধন করতে পারে। এর দ্বিতীয় ইউনিট চালু হলে পরিশোধন ক্ষমতা ৩০ লাখ বেড়ে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত হবে। জ্বালানি মন্ত্রণালয় বলছে, এসপিএম প্রকল্পটি ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করবে। ফলে জ্বালানির তেলের মজুদ ও সংরক্ষণ ক্ষমতা এবং জোগানের নিরাপত্তা বাড়বে।