এই করোনায়

বিশ্বজিত পাল :

রিনি কেমন যেনো উদাস হয়ে থাকে আজকাল। কোন কথা বলে না। একদম চুপচাপ। ভেতরে ভেতরে গুমরে মরছে। সেদিনের পর থেকে রিনির মুখে আর কথার খই ফুটে না। অথচ আগে হৈ চৈ করে পুরো বাড়ি মাত করতো। ভার্সিটিতে ও ছিল সে কথার শিরোমণি। কেউ কথা না বললেও রিনি ফরফর করে বলতেই থাকতো, বলতেই থাকতো।

এইতো সেদিন খুব বৃষ্টি হচ্ছিল। আকাশ কালো রঙে সেজেছিল। আর থেকে থেকে বৃষ্টি। সে বৃষ্টি উপেক্ষা করে রিনি – রজত ও তাদের বন্ধুরা মিলে লকডাউনে কষ্টে থাকা মানুষগুলোকে  এই করোনাকালে সুরক্ষা সামগ্রী ও কিছু খাবার বিতরণ করতে গিয়েছিল। লকডাউনের পর থেকে  ওরা সবার থেকে টাকা তুলে এই মহৎ কাজটি চালিয়ে যাচ্ছিল। সেদিন তারা গিয়েছিল গুজরা গ্রামের দুঃখী মানুষের হাতে কিছু খাদ্য ও সুরক্ষা সামগ্রী পৌঁছে দিতে।

বৃষ্টি যেনো থামছিল না। আকাশের বুক ভর্তি কান্না সেইদিন ঢেলেছিল ধরণীর পরে। রজত-রিনি ভিজে চুপসে গেছে। ভিজে গেছে তাদের বন্ধুরাও।

তারপরও বিতরণের কাজটি ভালো ভাবে সম্পন্ন করেছে। রজত- রিনি ভালো বন্ধু। একই ক্লাসে পড়ে। একে অপরকে দারুণ ভালোবাসে। বাড়ি ফেরার পথে একটি বন্ধ টঙ দোকানের ছাউনিতে বসে আলাপ করছিল পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে।

কোথায় যাবে, কোন গ্রামে সেইসব কথা বলতে বলতে সেইদিন যে যার মতো বাড়ি ফিরে গেলো।

রাত আটটার দিকে রজতের প্রচ- জ্বর আসে। সাথে কাশি। তিন দিন পার হয়ে গেলেও জ্বর কমার নাম গন্ধ নেই। অবশেষে টেস্ট করায়। টেস্টে করোনা পজিটিভ আসে। সবাই চিন্তিত। রজতকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হলো। কিন্তু ডাক্তার আর নার্সরা ঠিকমতো আসে না। দিনে একবার আসলেও দূর থেকে ওষুধ দিয়ে চলে যায়। রজত দিন দিন অবনতির দিকে চলে যায়।

একদিন রজত, রিনিকে ফোন করে। বলে.রিনি আমি বোধয় আর….. তোমরা সব কাজ ঠিকমতো চালিয়ে যেও। রিনি হু..হু.. করে  কেঁদে ওঠে। হাসপাতালে ছুটে যেতে চায়। কিন্তু বাড়ির সবাই রিনিকে আটকে দেয়। প্রচ- জ্বরের সাথে সাতদিন লড়ে গত ২৪ জুলাই রজত চিরদিনের মতো ঘুমিয়ে পড়ে। সেই থেকে রিনি ডিপ্রেশনে চলে গেছে। ঠিকমতো খায় না, কথা বলে না। যেনো জীবিত থেকেও মৃত!

গত ১০ অক্টোবর বিকেলে রিনি বাড়ি থেকে বের হয়ে  আর বাড়ি ফিরে আসেনি। থানা পুলিশ করেছে। কেউ কেউ বলেছে সমুদ্রের দিকে যেতে দেখেছে। সেই থেকে সমুদ্রের পাড়ে রোজ বসে থাকে রিনির বাবা-মা। রিনিকে ফিরে পাবার আশায়। আর কাঁদে অঝোর ধারায় শ্রাবণ ধারার মতো।