এইচএসসির পর অবসরে যা করবেন

হুমাইরা তাজরিন

শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেছেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বার বার বলেছেন তরুণদের দক্ষতা বাড়ানোর জন্য। বাংলাদেশ সরকারের কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ১শ’ টি কোর্সে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা আছে। প্রয়োজন অনুযায়ী যেকোনো কোর্স করা যাবে। কেউ হয়তো ফিজিক্স নিয়ে পড়ছে , তিনি এই রিলেটেড প্রশিক্ষণ কোর্সও করতে পারেন। বাংলাদেশে এখন উচ্চশিক্ষিত হয়ে বসে থাকলে চাকরি পাওয়া যায় না। তাই কম্পিউটার শেখা, ইংরেজি শেখা, সাঁতার শেখার মতো বিষয় রপ্ত করা দরকার। কারণ কাজের জন্য নিজের দক্ষতা প্রমাণ করতে হবে। ৬০ লক্ষ চাকরি প্রার্থীর সবাই তো সরকারি চাকরি পাবেনা। তাহলে কি বেকার? এজন্য এখন কেবল উচ্চশিক্ষার সার্টিফিকেটই যোগ্যতা নয়, কাজের জন্য কতটুকু দক্ষ হওয়া গেলো সেটাই গুরুত্বপূর্ণ।’

শিক্ষা উপমন্ত্রীর এ পরামর্শের রেশ ধরেই বলা যায়, বর্তমান প্রতিযোগিতাপূর্ণ বিশ্বে ‘মানব সম্পদ’ হয়ে ওঠা অপরিহার্য। তাই এখানে সময় নষ্টের কোনো সুযোগ নেই। এইচএসসি পরীক্ষার পর শিক্ষার্থীদের হাতে থাকে তিন চারমাসের দীর্ঘ একটি সময়। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি প্রস্তুতির পাশাপাশি বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সেই সময়টিকে উপযোগিতাপূর্ণ করতে পারলে বহুক্ষত্রে এগিয়ে থাকা যায়। তাই পরিকল্পনা নিয়ে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করার বিকল্প নেই। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় কিছু প্রশিক্ষণ সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

কম্পিউটার কোর্স

শুরুতেই বলতে হয় কম্পিউটার কোর্সের কথা। কারণ বর্তমান যুগে প্রত্যেকটি তথ্যই ডিজিটাল মাধ্যমে হালনাগাদ হচ্ছে। সমগ্র বিশ্বের সকল ক্ষেত্র অচিরেই শতভাগ ডিজিটাল সিস্টেমের আওতায় চলে আসবে। তাই যেকোনো কাজেই কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কোর্সের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করা যায়। এর মধ্যে রয়েছে বেসিক কম্পিউটার হার্ডওয়্যার, মাইক্রোসফট ওয়ার্ড ,পাওয়ার পয়েন্ট, টাইপিং , গ্রাফিক ডিজাইন, সোশ্যাল নেটওয়াকিং, ফ্রিল্যান্সিং ইত্যাদি। সরকারিভাবে এই কোর্সগুলো করা যাবে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন কম্পিউটার ইন্সটিটিউট, বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল, যুব উন্নয়ন কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে। এছাড়াও বেসরকারিভাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এই কোর্সগুলো করিয়ে থাকে।

ভাষা কোর্স

যোগাযোগ দক্ষতা বাড়াতে ভাষাগত দক্ষতা অর্জন এখন অধিক গুরুত্বপূর্ণ। তাই কেবল মাতৃভাষা নয়, আন্তর্জাতিক ভাষা ইংরেজিতেও প্রয়োজন সমান দক্ষতা। এজন্য আমাদের বিভাগীয় শহরের পাশাপাশি জেলা শহরেও রয়েছে বিভিন্ন ভাষা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। সেই সাথে জার্মান ,ফরাসি, কোরিয়ান, চীনা ভাষা শেখার ঝোঁকও বর্তমানে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ব্রিটিশ কাউন্সিল বয়স ও প্রয়োজন ভেদে কয়েক লেভেলের ইংরেজি কোর্স পরিচালনা করে থাকে। এছাড়া অনলাইনে অনেক প্রতিষ্ঠান ইংরেজি ভাষা শিক্ষার কোর্স পরিচালনা করে। ফরাসি ভাষা শিক্ষার কোর্স করা যায় অলিয়ঁস ফ্রঁসেজ চট্টগ্রাম শাখায়। বাংলাদেশ-কোরিয়ান টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার চট্টগ্রাম শাখা থেকেও সম্পন্ন করা যেতে পারে কোরিয়ান ভাষা কোর্স। এছাড়া ডি স্প্রাখে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম শাখা থেকে সম্পন্ন করতে পারেন জার্মান ভাষা শিক্ষার কোর্স।

উদ্যোক্তা কোর্স

যেহেতু প্রাতিষ্ঠানিক পড়ালেখা শেষ করতে করতে আমাদের দেশে জীবনের একটা বড়ো সময় কেটে যায়। পড়ালেখা শেষ হওয়ার পর দেখা যায় সরকারি চাকরির বয়সসীমা পেরিয়ে যায়। সুতরাং প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা থেকে ক্ষণস্থায়ী বিরতির এই সময় থেকেই শিখে নেওয়া যায় উদ্যোক্তা হওয়ার সুনির্দিষ্ট কৌশলসমূহ। এজন্য রয়েছে উদ্যোক্তা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা। যেখানে শেখা যাবে ব্যবসা শুরু করা ,ব্যবসা পরিচালনা করা, মূলধন সহ প্রয়োজনীয় বিষয়। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন থেকে এই সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ নেওয়া যায়।

কুকিং কোর্স ও হোটেল ম্যানেজমেন্ট কোর্স

খাবার নিয়ে তৈরি হয়েছে নানা পেশা। উন্নত বিশ্বে হেল্পিং হেন্ড রাখার রীতি ইতোমধ্যে বিলুপ্তির পথে। তাই নারী পুরুষ ভেদে সবার রান্নার মতো বিষয়ে দক্ষতা অপরিহার্য। এই অবসরে সেরে ফেলা যায় কুকিং কোর্স। কুকিং কোর্সের পাশাপাশি হোটেল ম্যানেজমেন্ট কোর্স সম্পন্ন করলে এই সেক্টরে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া যায়। কেননা সেখানে ফুড অ্যান্ড বেভারেজ, হাউস কিপিং, পাবলিক রিলেশন, মার্কেটিং , ফিন্যান্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট, হোটেল ফ্রন্ট অফিস ম্যানেজমেন্টসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে জানা যাবে। এভাবে ভবিষ্যতে একজন উদ্যোক্তা হিসেবে নিজের হোটেল বা রেস্টুরেন্ট পরিচালনায় দক্ষ হয়ে উঠা যায়। এর মধ্যে সরকারিভাবে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের আওতায় ইয়ুথ কিচেন ট্রেনিং কোর্স শেখা যায়। এছাড়া এ অধিদপ্তরের আওতায় হাউজ কিপিং এর মতো হোটেল ম্যানেজন্টের অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন কোর্স করানো হয়। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আওতায় করে নেওয়া যায় স্কিলস ফর এমপ্লয়মেন্ট প্রোগ্রামের (সেইপ) টুরিজম এন্ড হসপিটালিটি কোর্স।

ফটোগ্রাফি কোর্স

প্রতিটি মানুষের যেকোনো বিষয়কে দেখার ভঙ্গিটাই ফুটে ওঠে তার তোলা ছবিতে। তাই একজনের তোলা ছবি আরেক জনের তোলা ছবির চাইতে ভিন্ন হয়। সময়কে ধারণ করতে ছবি একটি অন্যতম দলিল হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। তাই দিন দিন বাড়ছে এই পেশার জনপ্রিয়তা। পরীক্ষা পরবর্তী অবসরে আনন্দময় এই কাজটিতে প্রশিক্ষণ নিয়ে হয়ে উঠুন দক্ষ।

বাদ্যযন্ত্র প্রশিক্ষণ কোর্স

সম্প্রতি তরুণ-তরুণীদের মধ্যে বাদ্যযন্ত্রের প্রতি বিশেষ আগ্রহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বন্ধুদের আড্ডায় দু একজন থাকেন গানের তালে যিনি সুর তোলেন। এই প্রতিভাকে শাণিত করতে কিংবা যদি আগ্রহ থাকে তাহলে সুপ্ত ইচ্ছা বাস্তবায়নের এটিই সুযোগ। বিভিন্ন স্থানে গিটার ,তবলা, বাঁশি, পিয়ানো, ভায়োলিন, ড্রামস, কিবোর্ড ,সেতার , সারদ ইত্যাদি কোর্স করানো হয়। পছন্দের বাদ্যযন্ত্রটি বেছে নিয়ে সেরে ফেলা যায় সেই প্রশিক্ষণ।