উপজেলায় সংক্রমণ ও মৃত্যু বেড়েছে : স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ছাড়া গত্যন্তর নেই

করোনাকালে গ্রামাঞ্চল কিছুটা নিরাপদ থাকলেও বর্তমানে উপজেলা তথা গ্রামীণ এলাকায় করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু বেড়ে চলেছে যা ভয়াবহ বিপদের ইঙ্গিত দিচ্ছে। সিভিল সার্জন, চট্টগ্রাম কার্যালয়ের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, চলতি মাসে চট্টগ্রাম নগরে ২৫ জন এবং উপজেলায় ৩৮জনসহ মারা গেছেন মোট ৬৩ জন। এর মধ্যে গতকাল রোববার ৭ জনসহ ১০ দিনেই মারা গেছে ৩১ জন। গত ১০ দিনে নগরে ১৩ জনের মৃত্যুর বিপরীতে উপজেলায় মারা গেছেন ১৮ জন। এ সময়ে চট্টগ্রাম মহানগরের তুলনায় উপজেলায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। নগরে ২ হাজার ৯৭ জন, উপজেলায় আক্রান্ত ২ হাজার ২০৪ জন।
এপ্রিল থেকে লক ডাউন সীমিত আকারে শুরু হওয়ায় মৃত্যু ও আক্রান্ত কিছুটা কমে এলেও সীমান্তবর্তী জেলা সমূহে সংক্রমণ এবং ভারত থেকে লোকজন বৈধÑঅবৈধ পথে দেশে ঢুকায় ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট সামাজিক সংক্রমণের রূপ নিয়েছে, এর ফলে দেশের সকল জেলায় সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়ছে। গত রোববার দেশে মৃত্যু হয়েছে ১১৯ জনের যা এ যাবতকালের সর্বোচ্চ। গত কয়েকদিনে আক্রান্ত গড়ে ৫ হাজারের বেশি।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ গ্রামাঞ্চলকে ধাক্কা দিয়েছে বেশি। করোনা উপসর্গ নিয়ে মানুষ গ্রামের হাটেÑবাজারে, দোকানে সর্বত্র ঘুরে বেড়াচ্ছে, তাতে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে। গ্রামের মানুষের মধ্যে করোনার ভয়াবহতা নিয়ে সচেতনতাও কম। তদুপরি গ্রামাঞ্চল কিংবা উপজেলায় করোনা স্বাস্থ্যসেবা একেবারেই অপ্রতুল ও অপর্যাপ্ত। উপজেলা হাসপাতালগুলিতে অক্সিজেন ঘাটতি প্রবল। রোগির অবস্থা খারাপ হলেও উপায় নেই। যাদের আর্থিক সামর্থ আছে তারা জেলার হাসপাতালে ছুটছেন।
ফটিকছড়িতে সংক্রমণ বাড়ায় লকডাউন দেয়া হলে সংক্রমণ কিছুটা কমেছে। হাটহাজারী উপজেলায় পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে তবে এখন সংক্রমণ সীতাকু-Ñমিরেরসরাইর দিকে বেশি, এমনই জানালেন চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি। চিকিৎসক এবং বিশেষজ্ঞরা স্বাস্থ্যবিধি মানার ওপর গুরুত্ব দিলেও গ্রামাঞ্চলের মানুষ তা মানছেন না ঠিক মতো। এ জন্য ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রতিনিধি ও ছাত্র যুব সমাজ নিয়ে স্বেচ্ছাসেবী ব্রিগ্রেড করে জনগণকে সচেতন করার উদ্যোগ নিতে হবে। উপজেলা প্রশাসনকে গ্রাম ভিত্তিক লকডাউন কার্যকরে পদক্ষেপ নিতে হবে। দেশব্যাপী গতকাল থেকে কঠোর লকডাউন এবং ১ জুলাই থেকে ৭দিনের সর্বাত্মক লকডাউনের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। কেবল প্রশাসন আর আইনশৃঙ্খলাবাহিনী দিয়ে লকডাউন কিংবা সংক্রমণ বিস্তার রোধ সম্ভব হবে না গ্রাম বা শহরের কমিউনিটি পর্যায়ে যদি মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা না যায়। ঢাকাকে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টায় সরকারি পদক্ষেপ তেমন কাজ দেয়নি। সামনে ঈদÑউলÑআযহায় কিভাবে জন চলাচল পরিস্থিতি সামাল দেয়া যাবে সে ব্যাপারে বিশেষ পরিকল্পনা নেয়া বাঞ্ছনীয়। এর পাশাপাশি নগর ও উপজেলায় স্বাস্থ্যসেবা উন্নত করার প্রতি দৃষ্টি দিতে হবে, স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারেনি। টিকা কার্যক্রম যাতে বাধাগ্রস্ত না হয় সে ব্যাপারে সরকারকে টিকা সংগ্রহে সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।