ইফতারে বিষ খাইয়ে চতুর্থ স্ত্রীকে হত্যার চেষ্টা

নিজস্ব প্রতিবেদক »

সাগর পাড়ে বেড়াতে গিয়ে টিকটকারের সাথে পরিচয়। এরপর ধর্মান্তরিত হয়ে পরিণয়। অতঃপর নওমুসলিম স্ত্রীকে ইফতারের সাথে বিষ মিশিয়ে হত্যার চেষ্টা। এ ঘটনায় স্বামী ফজলুল করিম সুমনসহ সহযোগী দ্বিতীয় স্ত্রী’র বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে আদালতে।

গতকাল বুধবার চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম মোহাম্মদ অলি উল্লাহ’র আদালতে মামলাটি দায়ের করেন ইসরাত জাহান তোহা। আদালত মামলাটি গ্রহণ করে বায়েজিদ থানার ওসিকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে তদন্ত করে রিপোর্ট দাখিলের আদেশ দিয়েছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আইনজীবী গোলাম মাওলা মুরাদ।

ঘটনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কাট্টলী সাগর পাড়ে বেড়াতে গিয়ে পিতৃহীন পিংকি রানী দে’র সাথে পরিচয় হয় টিকটকার ফজলুল করিম সুমনের সাথে। এসময় পিংকির রূপ বর্ণনা করে টিকটক করে টাকা উপার্জনের প্রস্তাব দেয় সুমন। পিংকিও সরল মনে প্রস্তাব গ্রহণ করে শুরু করেন টিকটক। এরই ধারাবাহিকতায় তাদের মধ্যে ভাব জমে, গড়ে উঠে প্রেমের সম্পর্ক, তা রূপ নেয় পরিণয়ে।’

এরআগে তাদের প্রেমের সম্পর্ক চলাকালীন পিংকিকে ধর্মান্তরিত হওয়ার প্রস্তাব দেন সুমন। পিংকিও সরল বিশ্বাসে সেই প্রস্তাবে রাজী হয়ে যান ইসরাত জাহান তোহা। সুমনের সাথে শুরু করেন জীবনের নতুন অধ্যায়। সংসার জীবনে সুমনের কার্যকলাপ ও বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পারেন নওমুসলিম তোহা তার ৪র্থ স্ত্রী। চার স্ত্রীর বাইরেও বেশ কিছু নারীর সাথে রয়েছে তার বিবাহ বহির্ভূত অবৈধ সম্পর্ক। সুমনের কাছ থেকে এসব জানতে চাইলেই বেরিয়ে আসে টিকটকার সুমনের আসল রূপ। দফায় দফায় সে তোহার উপর শারীরিক নির্যাতন চালায়।
তারপরও সংসারের হাল ধরতে তোহা তার সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যান। বিয়ের পর সামাজচ্যুত তোহা শ্বশুর বাড়িতে নিয়ে তোলার জন্য সুমনকে চাপ দিতে থাকেন। কিন্তু সুমন তা না করে জঙ্গী শাহ মাজার এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় তোহাকে তুলে দিয়ে রাতেই পালিয়ে যান। পরে অনেক খোঁজাখুঁজির পর বায়েজিদ এলাকার মোহাম্মদনগর বাস্তুহারা কলোনিতে সুমনকে খুঁজে পান। স্থানীয়দের বিচার-শালিসের মাধ্যমে আরেক স্ত্রীর ভাড়াঘরে তুলে দেয় সুমন। এরপর থেকে নির্যাতানের মাত্রা দ্বিগুণ হারে বেড়ে যায়।

তারপরও সংসারের হাল ছাড়ার মানুষ নন তোহা। শ্বশুরবাড়িতে নিয়ে যেতে স্বামী সুমনের কাছে আবদারের পর আবদার জানাতে থাকেন তোহা। এরই মধ্যে সুমনের অন্য স্ত্রীরা জেনে যান তাদের বিয়ের বিষয়টি। এদিকে তোহাকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য সুমনের সাথে চক্রান্তে যোগ দেন তার ২য় স্ত্রীর ভাই ও মা। এদিকে সুমনকে সুপথে ফেরাতে পবিত্র রমজানে রোজা রাখতে শুরু করেন তোহা। তার রোজা রাখাকে পুঁজি করে তাকে সরিয়ে দেওয়ার পথ সুগম করতে চান ষড়যন্ত্রকারীরা। রোজা রাখার সুবাদে ইফতারের সময়কে মোক্ষম সময় বানিয়ে শরবতের সাথে বিষ মিশিয়ে তোহাকে হত্যার উদ্দেশ্যে পান করান। কিন্তু বিষপানে তোহা অজ্ঞান হয়ে পড়েন। এ সময় তোহাকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে রেখে পালিয়ে যায়। কর্তব্যরত চিকিৎসকদের সহায়তায় তোহাকে হাসপাতালে চিকিৎসা করানো হয়। এসব বিষয়ে থানায় মামলা না নেওয়ায় আদালতে আইনের আশ্রয় নেন নির্যাতিতা নারী ইসরাজ জাহান তোহা।