ইতিহাস বদলাতে পারলো না বাংলাদেশ

সুপ্রভাত ডেস্ক »

চেন্নাইতে মাঠে নামার আগে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অতীত পরিসংখ্যান চোখ রাঙাচ্ছিল। আগের বিশ্বকাপের পাঁচ দেখায় প্রতিবারই যে হারের তেতো স্বাদ পেতে হয়েছিল বাংলাদেশকে। এবারও ইতিহাস বদলাতে পারেনি সাকিব আল হাসানরা। বাজে ব্যাটিংয়ের খেসারত দিয়ে ৮ উইকেটে হারতে হলো তাদের। টপ অর্ডার ব্যর্থ হওয়ার পরও সাকিব-মুশফিকের ব্যাটিংয়ে স্কোরবোর্ডে ২৪৫ রান তুলেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু নিউজিল্যান্ডের শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপের বিপক্ষে এই সংগ্রহ মোটেও স্বস্তিদায়ক কিছু না। ম্যাচেও সেটাই দেখা গেছে। ৪৩ বল আগে ২ উইকেট হারিয়ে দাপুটে জয় তুলে নিয়েছে কিউইরা।

১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের ময়দানে খেলার সুযোগ পায়। ওই সময় থেকে ২০১৯ বিশ্বকাপ পর্যন্ত ছয় আসরে পাঁচবার কিউইদের মুখোমুখি হতে হয়েছে। ২০১১ বিশ্বকাপে কেবল দুই দলকে মুখোমুখি হতে হয়নি। পাঁচবারের লড়াইয়ের মধ্যে শুধু ২০১৯ বিশ্বকাপে জয়ের সম্ভাবনা তৈরি করতে পেরেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু ২৪৪ রান করেও দেখে পঞ্চম হার। মুশফিক রান আউট করতে গিয়ে ওমন ভুল না করলেও হারের বৃত্তটা হয়তো গত আসরেই ভাঙা যেত। কিন্তু সেবার হয়নি; হলো না এবারও শুধু মাত্র টপ অর্ডারে ব্যর্থতায়।

ভারত বিশ্বকাপকে সামনে রেখে কোচিং স্টাফে নতুন করে নিয়োগ দেওয়া হয় শ্রীধরন শ্রীরামকে। প্রত্যাশা করা হচ্ছিল তার অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে পারবে বাংলাদেশ। কিন্তু কিছুই হচ্ছে না। চেন্নাইতে তার জন্ম, এখানেই বড় হয়ে উঠা। এই মাঠে খেলেই তিনি ক্রিকেটার হয়ে উঠেছেন। এখানকার সব কিছু তার হাতে তালুর মতোই চেনা। ফলে এখানকার কন্ডিশন-উইকেট সম্পর্কে তার কাছ থেকে ধারণা নিয়ে নিউজিল্যান্ডকে হারানোর স্বপ্ন নিয়েই মাঠে নেমেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু বাস্তব বড় কঠিন, টপ অর্ডারের ব্যর্থতার জয় তো দূরে থাক, সামান্যতম প্রতিরোধও করতে পারেনি বাংলাদেশ।

বিশ্বকাপে প্রথম দুই ম্যাচেই ওপেনাররা জুটি গড়তে ব্যর্থ হয়েছেন। কিউইদের বিপক্ষে মাঠে নামার আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে ওপেনিং জুটি নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই শান্ত স্পষ্ট করে বলেছিলেন, ‘ওপেনিং নিয়ে চিন্তাই না করি।’ শান্ত এভাবে কেন বলেছিলেন? তাহলে কি সতীর্থরাই ওপেনারদের ওপর ভরসা রাখতে পারছেন না! রাখবেনই বা কি করে, গত ১২ মাসে ওয়ানডেতে বাংলাদেশের হয়ে ওপেন করেছেন ১০ জন। কেউই সফল হননি। এই অবস্থায় ওপেনিং নিয়ে ভাবনটা হয়তো টিম ম্যানেজমেন্টে ইচ্ছে করেই করছে না!

শুক্রবার চেন্নাইতে টস হেরে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ পেয়েছিলেন সাকিব। এদিন দুই ওপেনার লিটন দাস ও তানজিদ তামিম ক্রিজে নেমেছিলেন নতুন কিছু করার প্রত্যয় নিয়ে। কিন্তু প্রথম বলেই লেগ স্টাম্পের বাইরে বল। লিটনের জন্য যুতসই বল হলেও ঠিকঠাক খেলতে না পারায় ডিপ মিডউইকেটে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন লিটন (০)। তার পর তিন নম্বরে ব্যাটিংয়ে পাঠানো হয় মেহেদী হাসান মিরাজকে। জুনিয়র তামিমকে নিয়ে পাল্টা আক্রমণ করেন এই অলরাউন্ডার। যদিও সেটি বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। ধারাবাহিকভাবে ব্যর্থ হচ্ছেন জুনিয়র তামিম। ৫, ১ রানের পর তৃতীয় ম্যাচে খেলেলেন ১৬ রানের ইনিংস।

এদিকে আফগানিস্তানের বিপক্ষে মিরাজ তিন নম্বরে নেমে করেছিলেন হাফ সেঞ্চুরি। শুক্রবার কিউইদের বিপক্ষে তৃতীয় ম্যাচেও একই পজিশনে খেলে ইনিংস বড় করতে পারেননি তিনি। লকি ফার্গুসনের বলে পুল শট খেলতে গিয়ে ডিপ ফাইন লেগে ম্যাট হেনরিকে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন তিনি। ৪৬ বলে ৩০ রান আসে তার ব্যাট থেকে। এরপর ১৩তম ওভারে গ্লেন ফিলিপসের বলে কনওয়েকে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন নাজমুল হোসেন শান্ত। ৭ রান এসেছে তার ব্যাট থেকে। ৫৬ রানে টপ অর্ডারের চার ব্যাটারকে হারানোর পর পাহাড় সমান চাপ নিয়ে মিডল অর্ডার দুই ব্যাটার সাকিব ও মুশফিক ইনিংস মেরামতের চেষ্টা করেন। সাকিব কিছুটা অস্বস্তি নিয়ে ব্যাটিং করলেও মুশফিক ছিলেন সাবলীল। ২৮তম ওভারের প্রথম বলে ফার্গুসনকে চার মেরে এবারের বিশ্বকাপের টানা দুই হাফ সেঞ্চুরি করেন মুশফিক। যেভাবে খেলেছিলেন, মনে হচ্ছিল সেঞ্চুরি সহজেই পেয়ে যাবেন। কিন্তু হেনরির স্লোয়ার ডেলিভারি বুঝতেই পারেননি উইকেটকিপার এই ব্যাটার। তাতেই সব শেষ। ৭৫ বলে ৬ চার ও ২ ছক্কায় ৬৬ রানের ইনিংস খেলে বোল্ড হন তিনি। খবর বাংলাট্রিবিউন।

মুশফিকের আউটের আগে অবশ্য সাকিব সাজঘরে ফেরেন। কিছুটা ধীর গতিতে শুরু করলেও সময়ের সাথে সাথে আগ্রাসী হয়ে উঠছিলেন বাঁহাতি এই ব্যাটার। ২৯তম ওভারের চতুর্থ ও পঞ্চম বলে রাচিন রবীন্দ্রকে ছক্কা ও চার মারেন সাকিব। বাংলাদেশ অধিনায়ক একটু বেশি আগ্রাসী হতে গিয়েই যেন উইকেটটা হারিয়েছেন। ৩০তম ওভারের চতুর্থ বলে ফার্গুসনের লাফিয়ে ওঠা বল ছক্কা মারেন সাকিব। পরের বলে আবারও শট খেলতে গিয়ে টপ এজ হন তিনি ৪০ রান করে। তার আউটের মধ্য দিয়ে ১০৮ বলে ৯৬ রানের গুরুত্বপূর্ণ জুটিটাও ভাঙে।

শেষ দিকে দারুণ দুটি কার্যকরী ইনিংস খেলেছেন মাহমুদউল্লাহ ও তাসকিন আহমেদ। ১৯ বলে ১৭ রান করে আউট হন তাসকিন। দুটি করে ছক্কা ও চারে ৪৯ বলে ৪১ রানে অপরাজিত থাকেন মাহমুদউল্লাহ। আর তাতেই ৯ উইকেটে ২৪৫ রানের সংগ্রহ পায় লাল-সবুজ জার্সিধারীরা।
নিউজিল্যান্ডের বোলারদের মধ্যে ফার্গুসন ৩টি, ২টি করে উইকেট নিয়েছেন বোল্ট ও হেনরি।

নিউজিল্যান্ডের জন্য ২৪৬ রানের লক্ষ্য মামুলিই হওয়ার কথা। খুব বেশি চাপ না থাকায় ধীরস্থিরভাবেই শুরু করেছিল কিউইরা। যদিও পাওয়ার প্লেতে বাংলাদেশের বোলাররা চাপ তৈরি করতে পেরেছিল। ব্যক্তিগত ৯ রানে রাচিন রবীন্দ্রকে সাজঘরে ফেরালেও ডেভন কনওয়ে ও কেন উইলিয়ামসন মিলে গড়েন ৮০ রানের জুটি। দারুণ এক ডেলিভারিতে সাকিব কনওয়েকে (৪৫) ফিরিয়ে জুটি ভাঙেন। এদিকে লিগামেন্টের চোট কাটিয়ে সাড়ে সাত মাস পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ফিরেই বাজিমাত করেছেন কিউই অধিনায়ক। অবিশ্বাস্য কিছু না করেও নিজের স্বাভাবিক ক্রিকেট খেলেই দলকে জয়ের পথটা তৈরি করে ফেলেন। যদিও চোট নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয়েছে তাকে। ফেরার ম্যাচে দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে ১০৭ বলে আট চার ও এক ছক্কায় খেলেন ৭৮ রানের ইনিংস।