আসন্ন বর্ষায় জলাবদ্ধতা সহনীয় থাকবে : প্রকল্প পরিচালক

৬ খাল পুনঃখনন করা হবে । কাজের অগ্রগতি ৬৫ শতাংশ

নিজস্ব প্রতিবেদক »

আগামী বর্ষায় বন্দর নগরীর জলাবদ্ধতা সহনীয় পর্যায়ে থাকবে বলে আশা প্রকাশ করছেন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

মঙ্গলবার দুপুরে নগরীর দামপাড়ায় সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড কার্যালয়ে জলাবদ্ধতা নিরসনে বর্ষাকালীন প্রাক প্রস্তুতিমূলক সমন্বয় সভায় প্রকল্পের বিস্তারিত চিত্র তুলে ধরা হয়।

সমন্বয় সভায় প্রকল্প পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফেরদৌস আহমেদ বলেন, বর্ষার আগে নগরের সংস্কার হওয়া ৬ খাল পুনঃখনন করা হবে। এরমধ্যে অগ্রাধিকার দিয়ে সংস্কার করা হবে ২ নম্বর গেট থেকে মুরাদপুর পর্যন্ত চশমা খালসহ সংলগ্ন খালগুলো।

তিনি আরও বলেন, ‘আগামী বর্ষা মৌসুমে যাতে জলাবদ্ধতা তৈরি না হয় এর জন্য আমরা কাজ করছি। বিশেষ করে যেসব খাল সংস্কার করা হয়েছে, তা পর্যায়ক্রমে পুনঃখনন করার পরিকল্পনা রয়েছে। বর্ষায় নগরবাসীকে যাতে ভোগান্তিতে পড়তে না হয়, সে জন্য নিচু এলাকাগুলোর আশেপাশের খালগুলো পুনঃখনন করা হবে। বিশেষ করে মির্জা খাল, চশমা খাল, চাক্তাই খাল, বাকলিয়া খাল ও মহেশখালে পানি প্রবাহের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত করার পরিকল্পনা রয়েছে। পাশাপাশি এ সব খালের সঙ্গে সংযুক্ত নালাগুলো যদি পরিষ্কার করা যায় তাহলে এ বছর ২ নম্বর গেট, বাদুরতলা, বহদ্দারহাটসহ বেশি জলাবদ্ধতা তৈরি হওয়া স্থানগুলোতে দুর্ভোগ সহনীয় পর্যায়ে আসবে। এছাড়া আমাদের অধীনে থাকা পাঁচটি খালে বসানো রেগুলেটরগুলো এ বর্ষার আগে পুরোপুরি চালু হবে।

তিনি আরও বলেন, ‘সেনাবাহিনী যে ৩৬ খালের কাজ করছে, এরমধ্যে ২০টি খালের রিটার্নিং ওয়ালের কাজ শেষ হয়েছে। এছাড়া ৪৫টি ব্রিজের মধ্যে ৩৫টি ব্রিজ এবং ৭০টি কালভার্টের মধ্যে ৫৮টি কালভার্টের কাজ শেষ হয়েছে। সব মিলিয়ে আমাদের প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি ৬৫ শতাংশ। এবার আমরা ২ নম্বর গেট থেকে মুরাদপুর পর্যন্ত চশমা খাল ও এ খালটির সাথে সংযুক্ত সবগুলোর খালের কাজকে অগ্রাধিকার দিয়ে করবো।

জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতার বাইরে থাকা ২১টি খাল নিয়ে কী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে জানতে চাইলে সিডিএ’র প্রকল্প পরিচালক আহমদ মঈনুদ্দীন বলেন, ‘এই মুহূর্তে এসব খাল নিয়ে কাজ করার সুযোগ সিডিএর নেই। তবে এই খালগুলো নিয়ে সিটি করপোরেশন প্রকল্প নিতে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শুরু হয়েছে।’

নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে চলমান চারটি প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১৪ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা।এর মধ্যে সবচেয়ে বড় সিডিএ’র ৩৬টি খাল ঘিরে নেয়া প্রকল্পের শুরুতে ব্যয় ধরা হয় ৫৬১৬ কোটি টাকা। গত বছরের নভেম্বরে সংশোধনের পর প্রকল্প ব্যয় আরো ৩ হাজার ১০ কোটি টাকা বেড়েছে। প্রকল্পটির পূর্ত কাজ করছে সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড।

এছাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে ‘চট্টগ্রাম মহানগরীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ, জলমগ্নতা/জলাবদ্ধতা নিরসন ও নিষ্কাশন উন্নয়ন’ প্রকল্পে খরচ হচ্ছে ১ হাজার ৬২০ কোটি টাকা। এই প্রকল্পটিও বাস্তবায়নের করছে সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড।

মঙ্গলবারের সমন্বয় সভায় এই প্রকল্পের প্রকল্প কর্মকর্তা মেজর সুজাউদ্দিন পাঠান বলেন, প্রকল্পের অগ্রগতিতে বড় সীমাবদ্ধতা অর্থ বরাদ্দ। এখন পর্যন্ত ২৮০ কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। যদি ঠিকভাবে অর্থ বরাদ্দ পাওয়া যায় তাহলে নদীর পাশে বন্যা প্রতিরোধক দেয়াল এবং রেগুলেটর নির্মাণ দ্রুত করা সম্ভব হবে।

‘জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পগুলোর আওতায় নগরের খালগুলো থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। এসব খালে যাতে কেউ পুনরায় অবৈধ স্থাপনা করতে না পারে সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

নগরীর ৩৬টি খাল নিয়ে সিডিএর প্রকল্পের আওতায় এখন পর্যন্ত খাল পাড়ের তিন হাজারের বেশি স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে।

সভায় চট্টগ্রাম বন্যা সংরক্ষণ বাঁধ নির্মাণে প্রকল্প কর্মকর্তা মেজর সুজাউদ্দীন পাঠান এবং জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশল মোহাম্মদ মাঈনুদ্দীন উপস্থিত ছিলেন।

জলাবদ্ধতা নিরসনে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) ৮৬২৬ কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হবে ২০২৬ সালের জুনে।