আশ্রয়হীন রোহিঙ্গারা

তুমব্রু সীমান্ত 

নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার »

বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুমের তমব্রু সীমান্তের শূন্যরেখায় আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা বর্তমানে আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছেন। সীমান্ত এলাকায় বসবাসরত বাসিন্দারা জানিয়েছেন তারা দুর্বিষহ দিনযাপন করছেন।

শুন্য রেখায় বসবাসরত রোহিঙ্গাদের একটি সূত্রে জানা গেছে, তুমব্রু সীমান্তের শূন্যরেখায় এই শিবিরে ৬২১ পরিবারের ৪ হাজার ২০০ রোহিঙ্গা বাস করতেন। বুধবার সকাল ছয়টার দিকে সেখানে সশস্ত্র গ্রুপ রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) ও রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের (আরএসও) সদস্যরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। বুধবার বিকেল থেকে রোহিঙ্গাদের ঘরে আগুন দেওয়া শুরু হয়। ওই দিন রাত নয়টা পর্যন্ত থেমে থেমে গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়।

জানা গেছে, শূন্যরেখা রোহিঙ্গা শিবিরে আগুন লাগায় নারী শিশুসহ ৩০ জনের মতো রোহিঙ্গা নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদে আশ্রয় নেন। পরে তাদের সেখান থেকে তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিয়ে যায় স্থানীয়রা। এছাড়াও অনেকেই সীমান্তের দু’টি স্কুল ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ এবং বিভিন্ন বাসাবাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। তবে কত রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছেন তার সংখ্যা সঠিকভাবে কেউ জানাতে পারেনি।

রোহিঙ্গা নেতারা দাবি করেছেন, অন্তত দুই হাজার রোহিঙ্গা কাঁটাতারের বেড়ার ওপারে (মিয়ানমার সীমান্তে) এবং বাংলাদেশ শুন্য রেখায় শতাধিক পরিবার অবস্থান করছেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার আর কোন গোলাগুলি হয়নি। তবে এই সংঘর্ষ ঘিরে যে আতঙ্ক স্থানীয় বাসিন্দা ও রোহিঙ্গাদের মধ্যে ছড়িয়েছে, তা কাটেনি। সেখানে এবং টেকনাফ ও উখিয়ার সব কটি রোহিঙ্গা শিবিরের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।

এদিকে বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের বেতবুনিয়া বাজারে তুমব্রু শূন্যরেখায় রোহিঙ্গা শিবিরে যাওয়ার পথে বিভিন্ন যানবাহনে তল্লাশি চালিয়েছেন বিজিবির সদস্যরা।

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রোমেন শর্মা জানান, শূন্যরেখায় কারো হস্তক্ষেপ করার এখতিয়ার নেই। ফলে সেখানকার প্রকৃত পরিস্থিতি জানা যাচ্ছে না। তবে যতটুকু জানা গেছে তাতে মনে হচ্ছে, আশ্রয়শিবিরে সাড়ে পাঁচ’শ এর বেশি বসতঘর পুড়ে ছাই হয়েছে। শতাধিক ঘর হয়তো রক্ষা পেয়েছে। তবে ঘরগুলোতে এখন কেউ থাকছেন না বলে জানতে পেরেছি।

উখিয়া থানার ওসি শেখ মোহাম্মদ আলী বলেছেন, হামিদ উল্লাহ (২৭) নামের এক রোহিঙ্গা নিহত হয়েছেন। তাঁর গায়ে আরএসওর পোশাক ছিল। মুহিব উল্লাহ (২৫) নামের আরেক গুলিবিদ্ধ রোহিঙ্গার অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাঁকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আরেক আহত শিশু এখনো কুতুপালংয়ে এমএসএফ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তিনি বলেন, এমএসএফ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্য মতে, একজন নিহত আর দুজন আহত ছাড়া আর কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

ঘুমধুম কোনাপাড়া রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরের বাসিন্দা হাবিবা বেগম (৪৫) বলেন, রোহিঙ্গাদের এক-তৃতীয়াংশ বসতঘর পুড়ে গেছে। ফলে দুটি বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছেন অনেকে। আমার তিন ছেলে হামিদ, হোসেন ও আলী এখন কোথায় আছে জানি না। তাদের খোঁজাখুঁজি করছি।’

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, ‘সীমান্ত পরিস্থিতি এখন শান্ত হলেও সীমান্ত এলাকার মানুষ এখনো চরম আতঙ্কে রয়েছেন’।

শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, যাতে কোনো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা না ঘটে, সে জন্য সব রোহিঙ্গা শিবিরের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।