আমি যদি মরে যাই সেটা হত্যা হবে, আত্মহত্যা নয়: পরীমণি

নিজ বাসায় কথার ফাঁকে কাঁদছিলেন পরীমণি

সুপ্রভাত ডেস্ক»

রবিবার (১৩ জুন) রাত ৮টার দিকে ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রী বরাবর বিচারের দাবি চেয়ে একটি পোস্ট দেন পরীমণি। অভিযোগ করেন, তাকে এক প্রভাবশালী ধর্ষণ হত্যাচেষ্টা করেছিল চারদিন আগে, ঢাকা বোট ক্লাবে।

এমন বিস্ফোরক অভিযোগের ঠিক দুই ঘণ্টার মাথায় নিজ বাসায় বসে সাংবাদিকদের কাছে সেই অভিযুক্তর নাম প্রকাশ করেন পরী। নাম নাসির ইউ মাহমুদ। যিনি উত্তরা ক্লাবের সাবেক প্রেসিডেন্ট এবং বর্তমানে ঢাকা বোট ক্লাবের এন্টারটেইনমেন্ট এন্ড কালচারাল অ্যাফেয়ার্স সেক্রেটারি পদে আছেন।

রবিবার (১৩ জুন) রাতে পরীমণি নিজ বাসায় পুরো ঘটনার বর্ণনা করতে গিয়ে বার বার কান্নায় ভেঙে পড়েন। সাংবাদিকদের কাছে বার বার বলেন, ‘আমি যদি মরে যাই সেটা হত্যা হবে, আত্মহত্যা নয়। কারণ, আমি আত্মহত্যা করার মতো মেয়ে নই। আমি এই অন্যায়ের বিচার চাই। এর বিচার দেখে মরতে চাই। আর যদি আমাকে কেউ হত্যা করে, তখন আপনাদের কাছে সেই বিচারের ভার দিয়ে গেলাম। আবারও বলছি, আজ যদি আমি মরে যাই, তো সেটি আত্মহত্যা হবে না। ধরে নেবেন আমাকে হত্যা করা হয়েছে।’

আরও বলেন, ‘আমি এখন খুব বিশ্বাস করি, একজন সাধারণ মেয়ে যদি ভিকটিম হয়, আত্মহত্যা ছাড়া তার আর কোনও পথ খোলা থাকে না। সাধারণ মেয়ে হিসেবে গত ৪ দিন ধরে অনেকের দারে দারে ঘুরেছি, কেউ সহযোগিতা করেনি। একজন পরীমণি হিসেবে ফেসবুকে যখন স্ট্যাটাস দিলাম তখনই মিডিয়া এসেছে।’

পরীমণি জানান, সেদিন রাতে বোট ক্লাবে কী ঘটেছিল। পরীর মুখ থেকে পুরো ঘটনার সংক্ষেপ টাইমলাইন এমন- বুধবার (৯ জুন) রাতে পূর্বপরিচিত অমির সঙ্গে উত্তরার বোট ক্লাবে যান তিনি। সেখানে গিয়ে দেখেন নাসির ইউ মাহমুদসহ চার-পাঁচজন টেবিলে বসে আছেন। তাদের সঙ্গে পরীমণির পরিচয় করিয়ে দেন অমি নামের একজন। মূলত এই অমির সূত্র ধরেই সেদিন বোট ক্লাবে যান পরী। তো বোট ক্লাবে সেদিন টেবিলে মদের বোতল ছিল। পরীকে নাসির ইউ মাহমুদ মদপানের প্রস্তাব দিলে সেটি নাকচ করেন তিনি। এরপর তাকে কফি খেতে দেওয়া হয়।

পরী জানান, কফির কাপে তিনি আনন্দ নিয়ে চুমুক দিলেও স্বাদ খানিক অস্বাভাবিক মনে হয় তার। তাই তিনি কফি পান আর করেননি। এমনকি টেবিলে থাকা ঠাণ্ডা পানীয়তেও তিনি মুখ দেননি। বিপরীতে বার বার এগুলো পান করার জন্য তাগিদ দিচ্ছিলেন নাসির ইউ মাহমুদ। সেটি না শোনায় পরীর ওপর ক্ষিপ্ত হন নাসির ইউ মাহমুদ। এরপর পরীমণি টেবিল থেকে উঠে ওয়াশরুমে যেতে চাইলে বাধা দেওয়া হয়। এরপর বাসায় যেতে চাইলেও বাধা দেওয়া হয়।

পরীমনি পরীর অভিযোগ, নাসির ইউ মাহমুদ তাকে লাথি মেরে চেয়ার থেকে ফেলে দেন এবং মুখের ভেতর জোর করে মদের বোতল ঢুকিয়ে দেন। এতে তার দাঁতে আঘাত লাগে এবং কিছু মদ গলায় যায়। এতে তার গলা ও বুক জ্বলে। তিনি তখনই খানিক অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরীমণি ও তার সঙ্গে থাকা জেমী তখন চিৎকার ও কান্না শুরু করলে তাদের ধর্ষণ করার হুমকি দেওয়া হয় এবং অকথ্য ভাষায় গালাগালি করা হয়।

একটা সময় তারা সেখান থেকে ছাড়া পেলে সঙ্গে সঙ্গে বনানী থানায় লিখিত অভিযোগ জানান পরী। তার অভিযোগ, থানা তার অভিযোগ গ্রহণ করেনি।

এদিকে পরীমণির এসব অভিযোগের বিষয়ে বার বার ফোন করেও পাওয়া যায়নি অভিযুক্ত নাসির ইউ মাহমুদকে। অন্যদিকে পুলিশ বলছে, তারা পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন।

 

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরীমণির এই স্ট্যাটাসের পরই সাংবাদিকরা ছুটে যান তার বাসায়, প্রশ্নের পর প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে পরী কখনো কেঁদেছেন, কখনও মৃত্যুর প্রসঙ্গটি এনেছেন। এসময় তার পাশে ছিলেন পরিচালক চয়নিকা চৌধুরী। পরীর অশ্রুযুক্ত আলাপে তিনিও চোখ মুছেছেন অনেকবার।

রবিবার রাতে বাংলা ট্রিবিউনকে পুলিশের গুলশান বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, গত ৮ জুন রাত সাড়ে তিনটার দিকে পরীমণি বনানী থানায় গিয়েছিলেন। থানায় গিয়ে তিনি দায়িত্বরত কর্মকর্তাকে তার সঙ্গে অশোভনীয় আচরণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ দায়ের করতে চান। কিন্তু এসময় তিনি কিছুটা ‘অপ্রকৃতিস্থ’ ছিলেন। সুনির্দিষ্টভাবে অভিযোগ বলতে না পারা এবং ‘এলোমোলো কথাবার্তা’ বলায় দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তারা তাকে সুস্থ হয়ে দিনের বেলায় আসতে বলেন।

পুলিশের এই কর্মকর্তা জানান, থানায় পরীমণির আচরণ ‘অসংলগ্ন’ হওয়ায় পুলিশের একটি দল তাকে সেখান থেকে এভার কেয়ার হাসপাতালে পৌঁছে দেয়। পরের দিন তিনি আর থানায় যাননি। এমনকি থানার ওসি বা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কারও সঙ্গে কথা বলেননি। তবে ওই রাতে তিনি কেন অসংলগ্ন আচরণ করেছিলেন সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

পুলিশের সূত্রটি জানায়, নায়িকা পরীমণি যার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন তার নাম নাসির ইউ মাহমুদ। তিনি একজন ব্যবসায়ী ও উত্তরা ক্লাবের সাবেক সভাপতি। বর্তমানে তিনি ঢাকা বোট ক্লাবের পরিচালক (কালচার অ্যান্ড এন্টারটেইনমেন্ট) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে নাসির ইউ মাহমুদের দুটি মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এক পর্যায়ে দুটি নম্বরই বন্ধ পাওয়া যায়।

সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন