আমিরাত থেকেই আমদানি হচ্ছে সেই দেশের মানসম্পন্ন বিটুমিন

ল্যাবটেস্টে মান উত্তীর্ণ ও খালাসের অনুমতি কাস্টমসে

ইরানি অরিজিন বলে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা

নিজস্ব প্রতিবেদক »
দীর্ঘ প্রায় ২০ বছর ধরে মধ্যপ্রাচ্যের শারজাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে শিল্পের কাঁচামাল হিসাবে বাল্ক পেট্রোলিয়াম বিটুমিন আমদানি করছে বে-টার্মিনাল, এটি দেশের স্বনামধন্য শিল্পগ্রুপ পিএইচপি ফ্যামিলির সহযোগী প্রতিষ্ঠান। নিজস্ব কারখানায় প্রসেসিং করে বাজারে সরবরাহের মাধ্যমে বাংলাদেশের উন্নয়ন কাজের চাহিদার যোগান দিচ্ছে। দেশের প্রচলিত আইন, আমদানি নীতি আদেশ এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বিধি-বিধান মেনে আমদানি করা হচ্ছে মানসম্পন্ন বিটুমিন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সরকারের জারি করা আদেশ অনুযায়ী জাহাজ থেকে খালাসের আগে ইস্টার্ন রিফাইনারি বা বুয়েট থেকে ল্যাব টেস্টের মাধ্যমে মান নিশ্চিত করা হচ্ছে। সকল প্রক্রিয়া সম্পন্নের পরই খালাসের অনুমতি দেয় কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এসব বিটুমিন অত্যন্ত সুনামের সাথে দেশের সড়ক উন্নয়ন কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যের শারজাহ থেকে এই বিটুমিন আমদানি করছে বে-টার্মিনাল।
এদিকে বিধি-বিধান মেনে বিটুমিন আমদানির পরও আমদানিকারক হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে জানালেন বে-টার্মিনাল অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের কর্মকর্তারা। তারা জানান, সাম্প্রতিক সময়ে ব্যবসায়িক ইর্ষা থেকে একটি পক্ষ মিথ্যা তথ্য দিয়ে সরকারি বিভিন্ন সংস্থা এবং ভোক্তাদের বিভ্রান্ত করার ষড়যন্ত্র মূলক চেষ্টা করে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে পিএইচপি ফ্যামিলির বে-টার্মিনালের বিরুদ্ধে ইরানের বিটুমিন আমিরাতের নামে খালাসের ভিত্তিহীন অভিযোগ তোলা হয়েছে।
পিএইচপি ফ্যামিলির জেনারেল ম্যানেজার (সাপ্লাই চেইন) মোহাম্মদ এরশাদুল মোস্তফা বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর ও কাস্টম কর্তৃপক্ষের সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে পণ্য খালাস নেওয়ার পর উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে, বিভ্রান্তিমূলক এবং প্রতিষ্ঠানের সুনাম ক্ষুন্ন করতে এমন অভিযোগ তোলা হয়েছে।
জানা গেছে, মূলত বে-টার্মিনাল সম্প্রতি দুবাইয়ের শারজা অঞ্চলের ভেরাজকো এফজেডই প্রতিষ্ঠান থেকে বিটুমিন আমদানি করেছে। ইস্টার্ন রিফাইনারির ল্যাব টেস্টে ঘোষিত মানে উত্তীর্ণ হয়েছে। দুবাই শারজা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ ওই প্রতিষ্ঠানকে কান্ট্রি অফ অরিজিন সার্টিফিকেট দিয়েছে। ফলে ইরানের বিটুমিন আমিরাতের হয়ে বাংলাদেশ আসার কোন সুযোগ নেই। মিথ্যা ঘোষণায় চট্টগ্রাম বন্দর থেকে খালাস নেওয়ারও সুযোগ নেই। অথচ দুবাইতে বিটুমিনের প্ল্যান্ট নেই এমন মিথ্যা তথ্যও প্রচার করে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে।
এরশাদুল মোস্তফা বলেন, বে-টার্মিনালের আমদানিকৃত শিল্পের কাঁচামাল বাল্ক পেট্রোলিয়াম বিটুমিনের চালান গত ১৯ মে চীনের পতাকাবাহী ‘গোয়াং ঝু ওয়ান’ জাহাজে করে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে আসে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বিধান অনুযায়ী ইস্টার্ন রিফাইনারি ল্যাবের পরীক্ষায় মান উত্তীর্ণ হয়। এরপর বারবার তাগাদা দিলেও জাহাজটি জেটিতে ভিড়ছিল না। তখন আমরা মহামান্য আদালতের শরণাপন্ন হই। গত ১৬ জুন আদালত জাহাজ থেকে বিটুমিন খালাসের আদেশ জারি করেন। এর প্রেক্ষিতে বিগত ১৭ জুন থেকে বিটুমিন খালাস শুরু হয়ে ১৮ জুন শেষ হয়। বর্তমানে জাহাজ জেটিতে অবস্থান করছে। মহামান্য আদালতের আদেশ পাওয়া সাপেক্ষে জেটি ত্যাগ করতে পারবে। বন্দরে আটকা পড়াতে আমাদের গ্রাহকদের কাছে সময়মতো বিটুমিন যোগান দিতে না পারায় ব্যবসায়ীক ক্ষতি হয়েছে। মূলত পণ্যগুলো খালাস হওয়ার পর থেকেই আমাদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করার চেষ্টা চলছে। তবে আমরা যেহেতু শতভাগ সঠিকভাবে পণ্য আমদানি করেছি সেখানে কোন অসত্য তথ্য পাবে না বলে দৃঢ়ভাবে বলতে পারি।
বাংলাদেশ নৌবাণিজ্য দপ্তারের প্রিন্সিপাল অফিসার ক্যাপ্টেন গিয়াস উদ্দিন বলেন, মহামান্য আদালতের আদেশ পেয়ে গোয়াং ঝু ওয়ান জাহাজ আটক করা হয়েছিল। আদালতের আদেশ না পাওয়া পর্যন্ত জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দর ত্যাগ করতে পারবে না। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পণ্য আমদানি করায় বাংলাদেশি টাকা বাইরে চলে গেছে। পণ্য বুঝে না পেলে এতে বাংলাদেশের ক্ষতি। তাই দেশের এবং আমদানিকারকের স্বার্থ রক্ষায় আদেশ দিয়েছেন আদালত।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা জানান, সমস্ত বিষয় বিবেচনা ও দরকারি ডকুমেন্টস, ঘোষিত মান উত্তীর্ণ টেস্ট রিপোর্ট দেখেই বিটুমিন খালাসের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে কিছু তথ্য যাচাই বাছাই করছেন তারা। প্রাথমিকভাবে আমদানিকারক বে-টার্মিনালের কোন ধরনের তথ্য গোপন বা অন্য কোন সমস্যা তারা পাননি।
অভিযোগ রয়েছে, সকল বিধি-বিধান মেনে আমদানির পর খালাসের অনুমতি দিলেও একটি পক্ষ মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করে পিএইচপি ফ্যামিলিকে হয়রানি ও সুনামক্ষুন্নের চেষ্টা চালাচ্ছেন। গত কয়েকদিন ধরে কাস্টমম কর্মকর্তাদের বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। যাতে দেশের গুরুত্বপূর্ণ বিটুমিন আমদানি ব্যহত হয়। কিন্তু কাস্টমস কর্মকর্তারা এসব বিষয় আমলে না নিলেও এ বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা নেওয়ার চেষ্টা করছেন। তাদের মতে, আমদানি নিষিদ্ধ না হলে যে কোন পণ্য আমদানি করার অধিকার বাংলাদেশের সকল নাগরিকের রয়েছে।