আবারো সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণ

শিল্প নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্বের সাথে ভাবতে হবে

আবারো সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণ। আবারো একটি বড় ধাক্কা। সীতাকু-ের কদমরসুল এলাকায় শিল্পে ব্যবহৃত অক্সিজেন উৎপাদনের কারখানা সীমা অক্সিজেন লিমিটেডে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণে ছয়জন নিহত হয়েছেন। গুরুতর আহত ২৫ জন। গত ৪ মার্চ শনিবার বিকেলে এই ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে।
কারখানাটি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে অবস্থিত। বিস্ফোরণে কারখানার আশপাশের অন্তত এক বর্গকিলোমিটার এলাকা কেঁপে ওঠে। এমনকি বিস্ফোরণস্থল থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার দূর পর্যন্ত উড়ে যায় লোহার পাত। এই লোহার পাতের আঘাতে দুজন মারা যান।
বিস্ফোরণের পর চারদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে টিন ও লোহার টুকরা। আশপাশের অনেক ভবনের দেয়াল ফেটে গেছে। উড়ে গেছে টিনের চালা। ভেঙে গেছে অনেক ঘরের কাচ।
সুপ্রভাতের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, পুরো কারখানার স্টিলের ছাদ উড়ে গিয়ে ধ্বংসস্তূপ হয়ে আছে। তিনতলা বিশিষ্ট অফিস ঘরটির কোনো দরজা-জানালা নেই, সব উড়ে গেছে। পাশের সীমানা প্রাচীর দেয়ালটি ফাটল দিয়ে পশ্চিমে হেলে পড়েছে। ধসে পড়া দেয়াল ও লোহার বিশাল আকৃতির অ্যাঙ্গেলের ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে লাশ উদ্ধার করছে দমকল বাহিনী, গাউছিয়া কমিটির লোকজন ও স্থানীয়রা।
এই অক্সিজেন প্লান্টের এক কিলোমিটারের মধ্যেই বিএম কন্টেইনার ডিপোতে গত বছরের ৪ জুন রাতে বিস্ফোরণে অন্তত ৫০ জন নিহত ও দুই শতাধিক মানুষ আহত হয়েছিলো।
যে সব মর্মান্তিক ঘটনার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের শিল্প নিরাপত্তার প্রকৃত অবস্থা এখন প্রকাশ্য হচ্ছে, এই মর্মঘাতী ট্রাজেডি সে তালিকায় যোগ হয়ে গেল। আমাদের শিল্প নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্বের সাথে ভাবতে হবে।
বাংলাদেশের শিল্প-বাণিজ্যের জন্য অবকাঠামোগত ও প্রাতিষ্ঠানিক প্রস্তুতি দুর্বল এবং এটি বিকশিত হওয়ার প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। এই বক্তব্য আইএলও বা আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার।
দুর্বলতার কারণে এ ধরনের অগ্নিকা-ের ঘটনা প্রায় অনিবার্য হয়ে উঠে। শেষ পর্যন্ত এর মূল্য হিসেবে এসব ঝুঁকিপূর্ণ কর্মস্থলে নিয়োজিত শ্রমিকদের জীবন দিতে হয়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় আশেপাশের সর্বসাধারণ।
আমরা এই হৃদয়বিদারক ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করার এবং এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে শিল্পসংশ্লিষ্ট সব স্থাপনায় প্রয়োজনীয় সংস্কার আনার আহ্বান জানাই। আমরা আশা করব নিহতরা যাতে ক্ষতিপূরণ পায়। এ ছাড়া, যারা এ ঘটনায় বেঁচে ফিরেছেন এবং যারা দগ্ধ ও আহত হয়েছেন তাদের সঠিকভাবে চিকিৎসা ও পুনর্বাসন নিশ্চিত করতে হবে। তাদের ও তাদের পরিবারের যে ক্ষতি হয়েছে তা অপূরণীয়।
প্রশাসনকে অবশ্যই যা যা করা দরকার সব করতে হবে।