আবারও রেলক্রসিং দুর্ঘটনা, ছিল না গেটম্যান

নিরাপদ ঈদযাত্রার কথা যত জোরালোভাবেই উচ্চারিত হোক না কেন কিংবা কর্তৃপক্ষ যতই আশ্বাস দিক না কেন দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। বরং একদিকে সতর্ক হলে অন্যদিকে শিথিল হচ্ছে। ফলে একটা না একটা দুর্ঘটনা লেগেই আছে। বিশেষ করে রেল দুর্ঘটনা থামানো যাচ্ছে না। এর অন্যতম কারণ অরক্ষিত রেলক্রসিং। প্রায় সময় এখানে দুর্ঘটনা ঘটে এবং প্রতিবারই এর প্রতিকারে নানা উদ্যোগের কথা শোনা যায়; কিন্তু পরিস্থিতি যে তিমির সে তিমিরেই থাকে।
আবার ফেনীতে রেলক্রসিং পারাপারের সময় একটি ট্রাকের সঙ্গে ট্রেনের সংঘর্ষে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার সকালে ফেনীর ফাজিলপুর রেলস্টেশন ও মুহুরীগঞ্জ রেলস্টেশনের মধ্যবর্তী স্থানে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী চিটাগাং মেইল ট্রেনটি ফাজিলপুর রেলস্টেশন পার হয়ে সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে মুহুরীগঞ্জের কাছাকাছি পৌঁছায়। সেখানে রেলক্রসিং পার হওয়ার সময় একটি ট্রাক চলন্ত ট্রেনের সামনে এসে পড়ে। ট্রেনের ধাক্কায় ট্রাকটি প্রায় ২০০ মিটার সামনের দিকে চলে যায়। এতে ট্রেনের সামনের অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ট্রাকটি দুমড়েমুচড়ে যায়। পরে জানা গেছে, রেলক্রসিংটিতে ট্রেন আসার আগে ব্যারিয়ার (প্রতিবন্ধক) ফেলা হয়নি। সেখানে নিয়োজিত গেটম্যান সাইফুল ইসলাম দায়িত্বরত ছিলেন না। দুর্ঘটনার পর থেকে তিনি পলাতক।
পত্রিকার বরাতে জানা গেছে, দুর্ঘটনায় কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার চিওড়া ইউনিয়নের শাকতলা গ্রামের যে তিনজন নিহত হয়েছেন, তাঁরা একসঙ্গে ঈদের কেনাকাটার উদ্দেশে ট্রেনের ইঞ্জিনের সামনে বসে চট্টগ্রামে যাচ্ছিলেন বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্রে জানা গেছে।
এটাও একটি অপরাধ। কারণ ইঞ্জিনের সামনে বসা বা ইঞ্জিনরুমে প্রবেশ করা সাধারণের জন্য নিষেধ। সে নিষেধ উপেক্ষা করে সেখানে লোক বসলো কীভাবে? এটা কি রেলের দায়িত্বশীল কারো চোখে পড়েনি? এই দায়িত্বহীন আচরণের জন্য সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
অন্যদিকে গেটম্যান না থাকার ঘটনাও নতুন নয়। এর আগে ২০২২ সালের ২৯ জুলাই চট্টগ্রামের মিরসরাইয়েও বড় দুর্ঘটনা হয়। বড়তাকিয়া স্টেশন এলাকায় ওই দিন দুপুরে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী মহানগর প্রভাতী ট্রেন পর্যটকবাহী একটি মাইক্রোবাসকে ধাক্কা দিয়ে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে নিয়ে যায়। এতে ১৩ জন নিহত হন। নিহতদের মধ্যে মাইক্রোবাসের চালক ছাড়া অন্যরা ছিলেন ছাত্র। এই ঘটনায় রেলের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে এই দুর্ঘটনার জন্য মাইক্রোবাসচালক ও গেটম্যানকে দায়ী করা হয়েছিল। প্রতিবেদনে বলা হয়, গেটম্যান ঘটনাস্থলে ছিলেন না। গেটম্যানের দায়িত্বে অবহেলায় চট্টগ্রাম নগরের খুলশীর ঝাউতলা রেলক্রসিংয়ে ২০২১ সালের ৪ ডিসেম্বর আরেকটি দুর্ঘটনা ঘটে। ডেমু ট্রেনের সঙ্গে বাস, অটোরিকশা ও টেম্পোর সংঘর্ষে তিনজনের মৃত্যু হয়।
এসব ঘটনার পর যথারীতি একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে কর্তৃপক্ষ কিন্তু সে তদন্ত কমিটির রিপোর্ট আজ পর্যন্ত কারো পক্ষে জানা সম্ভব হয়েছে কিনা জানা নেই। আসলে কোনোকিছুই খুব নিয়ম মেনে চলছে তা বলার সুযোগ নেই। কাজেই এক্ষেত্রেও হতাশা ব্যক্ত করা ছাড়া আর কোনো উপায় মিলছে না।