আবর্জনার ভাগাড় চাক্তাই খাল

sdr

নিজস্ব প্রতিবেদক »

নানা বর্জ্য-আবর্জনা পচে পানি কুচকুচে কালো হয়ে আছে। পানিতে ভাসছে পলিথিন। খালের দু’পাশে সারি সারি দোকান। আছে বসতি ও খাবারের দোকান। বাকলিয়া ও কোতোয়ালীর একটি অংশের স্থানীয়দের ও গৃহস্থালির যত আবর্জনা আছে সবই এসে পড়ছে এ খালে। আবর্জনার কারণে কিছু জায়গায় পানি প্রবাহ বন্ধ। দীর্ঘদিন পানি জমে থাকায় মশার বংশবিস্তার বাড়ছে। এ হলো চাক্তাই খালের বর্তমান চিত্র।

গতকাল দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, বাকলিয়া থেকে মিয়াখাননগর, কোরবানিগঞ্জ ও মধ্যম চাক্তাই হয়ে প্রায় চার কিলোমিটার পথ ঘুরে কর্ণফুলী নদীতে যুক্ত হওয়া খালটি এখন দূষণে-দখলে বিপন্ন।

চাক্তাই খালে ময়লার স্তুপ সম্পর্কে জানতে চাইলে চসিক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘চাক্তাই খালের সম্পর্কে আমাদের কিছু করার নেই। জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প নিয়ে যারা কাজ করছেন এটি তারা দেখভাল করছেন। একটি প্রজেক্টে কাজ চলা অবস্থায় আরেকটি প্রজেক্ট কাজ করতে পারে না। এমনকি শুষ্ক মৌসুমেও চাক্তাই পানির নিচে ডুবে আছে। এখন যদি সেখানে ময়লার পাহাড়ও হয় আমরা কিছু করতে পারছি না।’

এ খালের দখল-দূষণ নিয়ে জানতে চাইলে চাক্তাই খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন বলেন, ‘ভোগ্যপণ্যের অন্যতম বৃহত্তম পাইকারি বাজার চাক্তাই ও খাতুনগঞ্জ। বহুদিন ধরে চাক্তাই খাল দিয়ে নৌযানে করে কর্ণফুলী নদী হয়ে সারা দেশে পরিবহন করা হত নিত্যপণ্য। কিন্তু এখন তা শুধু অতীত। ১০ থেকে ১৫ বছর পর হয়তো এ খাল আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। বৃষ্টি হলে চোখের ঘুম হারাম হয়ে যায়।’

খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ী আর এম এস গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. ফজলুল করিম শাহেদ বলেন, ‘খাতুনগঞ্জের উপর সারা বাংলাদেশের মানুষ অনেকটা নির্ভর করে। তাছাড়া কর্ণফুলী আমাদের সম্পদ। কিন্তু চাক্তাই খালের করুণ পরিণতির জন্য আমরা দায়ী। আমরা সরকারের নিয়ম নীতিকে অবহেলা করছি। সবাই মিলে যদি পরিবেশ রক্ষার্থে উদ্যোগ নিই তাহলে এই খালের অস্তিত্ব রক্ষা করা সম্ভব। অন্যথায় আগামী ৫ বছর পর এই খালের অস্তিত্ব আর থাকবে না।’

দীর্ঘদিন ময়লা জমে থাকার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে ৩৫ নম্বর বক্সিরহাট ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাজী নূরুল হক বলেন, ‘চাক্তাই খালের মুখে কাজ চলছে। কোরবানিগঞ্জ ও ময়দার মিল এলাকায় খালটি সরু। তাই ময়লা জমে আছে।’

ময়লার ভাগাড়ের কারণে মশা বাড়ছে এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘হয়তো আমাদের কিছু বর্জ্য তুলে ফেলতে হবে। কয়েকদিনের মধ্যে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।’

সরেজমিনে দেখা গেছে, ডিসি রোড থেকে দেওয়ানবাজার হয়ে মাস্টারপুল পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার এলাকার খালের পাশ দিয়ে নিরবচ্ছিন্নভাবে হাঁটার সুযোগ নেই। মাস্টারপুল থেকে খালের পাড় ধরে বউবাজার এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, খাল আরো সরু হয়ে গেছে। বউবাজার থেকে পাশের এলাকা মিয়াখান নগরপুল পর্যন্ত খাল সরু। একটু দূরে ভাঙাপুল এলাকায় গিয়ে আবার খাল বেশ চওড়া, এখানে মাটি কিংবা ময়লা-আবর্জনা নেই। ভাঙাপুল থেকে মধ্যম চাক্তাই পর্যন্ত চাক্তাই খালের ভেতরে গিয়ে দেখা গেছে দীর্ঘদিন ধরে ময়লার স্তুপ জমে আছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা টোকাই দিয়ে ময়লার স্তুপগুলো সরানোর চেষ্টা করছে।

কোরবানিগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা তৌহিদুর রহমান বলেন, ‘ আশপাশের মানুষ ময়লা ফেলে। বিভিন্ন বাসা থেকে যারা ময়লা সংগ্রহ করে, তারাও মাঝে মাঝে গভীর রাতে এখানে ময়লা ফেলে যায়। বর্ষাকালে তো এখানে থাকা কষ্ট হয়। ময়লা আর দুর্গন্ধে টেকা যায় না।’