আত্মাহুতি দিবসে বক্তারা : প্রীতিলতার আত্মত্যাগ এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা

বীরকন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার এর ৮৮তম আত্মাহুতি দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষে পাহাড়তলী প্রীতিলতা ভাস্কর্যে পুষ্পমাল্য অর্পণ করা হয়।
বাসদ : বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল বাসদ চট্টগ্রাম জেলা শাখার উদ্যোগে গতকাল বীরকন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার এর ৮৮তম আত্মাহুতি দিবস উপলক্ষে পাহাড়তলী প্রীতিলতা ভাস্কর্যে পুষ্পমাল্য অর্পণ করা হয়।
এসময় উপস্থিত ছিলেন বাসদ চট্টগ্রাম জেলা সদস্য কমরেড মহিন উদ্দিন, কমরেড নুরুল হুদা নিপু, কমরেড আকরাম হোসেন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট নগর সভাপতি রায়হান উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক ঋজু লক্ষ্মী অবরোধ।
এসময় নেতৃত্ববৃন্দ বলেন, স্বদেশের মুক্তির জন্য ১৯৩২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর তৎকালীন ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণ করতে গিয়ে প্রীতিলতা জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। ইংরেজ সা¤্রাজ্যের সূর্য অস্ত যায় না গোটা দুনিয়ায় এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে উপনিবেশ কায়েমকারী বর্বর ইংরেজ সা¤্রাজ্যবাদ এই দম্ভে ছিলো অন্ধ। এ দম্ভকে গুঁড়িয়ে দিয়ে হাজার হাজার তরুণ-যুবক ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে আত্মাহুতি দিয়েছেন। কিন্তু তখনও এদেশের মানুষ কেউ চিন্তা করেনি যে বিপদসংকুল সশস্ত্র বিপ্লবের পথে নারীরা অংশগ্রহণ করতে পারে। ২২ বছর বয়সী প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার সংকল্প করেছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ নেবেন, ভাইদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মানব মুক্তির সংগ্রামে যোগ্য ভূমিকা পালব করবে।
বক্তারা বলেন, পাহাড়তলী ক্লাব আক্রমণ এবং নির্ভিক চিত্তে মৃত্যুকে বরণ করে প্রীতিলতা একটি ঐতিহাসিক ও কিংবদন্তী চরিত্রে পরিণত হয়েছেন।
বক্তারা আরো বলেন, আজ ইংরেজ নেই, নেই পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী, তবুও সমাজে অন্যায়, শোষণ, বঞ্চনা কমেনি। স্বাধীন হয়েও মানুষ পায়নি অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসাসহ বেঁচে থাকার অধিকার। যে সা¤্রাজ্যবাদী বিদেশি শাসনের বিরুদ্ধে প্রীতিলতা, সূর্যসেনরা লড়াই করেছিলেন সে সা¤্রাজ্যবাদী শক্তির কাছে আজ স্বাধীন দেশের শাসক নাতজানু। একের পর এক জাতীয় সম্পদ বিদেশি কোম্পানির কাছে ইজারা দিয়ে দেশকে সম্পদহীন করা হচ্ছে। এর সাথে রয়েছে ঘরে বাইরে মানুষের নিরাপত্তাহীনতা। প্রতিদিন বেড়ে চলেছে নারী নির্যাতন, ধর্ষণ, গুম-খুন। আতংকিত সাধারণ মানুষ। যে তরুণ-যুবকরা একদিন এ দেশের মানুষকে লড়াইয়ের পথ দেখিয়েছিলো সেই তারুণ্যেকে ধ্বংস করে বখাটে-সন্ত্রাসী, নেশাগ্রস্ত বানানো হচ্ছে। শিক্ষাকে বাণিজ্যিক পণ্যে পরিণত করে শিক্ষার অধিকার হরণ করা হচ্ছে। তাই নিছক ইতিহাস চর্চা নয়, আজকের সংকট থেকে মুক্তি পেতে প্রয়োজন প্রীতিলতাসহ অগ্নিযুগের বিপ্লবী ও বড় মানুষের শিক্ষা। সমস্ত অন্যায় ও শোষণের বিরুদ্ধে বীরকন্যার জীবন ও সংগ্রাম আগামী দিনে লড়াইয়ের প্রেরণা যোগাবে।
ধলঘাট বীরকন্যা প্রীতিলতা ট্রাস্ট : নগরীর পাহাড়তলী রেলওয়ের স্কুল সংলগ্ন ইউরোপিয়ান ক্লাবের সামনে স্থাপতি চট্টগ্রামের সাহসী অগ্নিকন্যা ও বিপ্লবী মাস্টার দা সূর্যসেনের সহযোদ্ধা বীরকন্যা প্রীতিলতার ৮৮তম আত্মাহুতি দিবস স্মরণে তার প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান ধলঘাট বীরকন্যা প্রীতিলতা ট্রাস্টের নেতৃবৃন্দ।
এসময় শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে প্রতিকৃতি চত্বরে আলোচনায় ট্রাস্টের আজীবন সদস্য বাংলাদেশ বাঙালি মূলনিবাসী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী পুলক কান্তি বড়–য়া’র সভাপতিত্বে ও ধলঘাট ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা সরিৎ চৌধুরী’র সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন দক্ষিণ জেলা যুব ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক অনুপম বড়–য়া পারু, শহীদ মৌলভী সৈয়দ স্মারক বক্তৃতা কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী স.ম জিয়াউর রহমান, সংগঠক ও সাংবাদিক বিপ্লব বিজয়, রুবেল বড়–য়া, প্রিয়তোষ চক্রবর্তী, উদয় আহমেদ, সপু বড়–য়া, দানিয়েল আলম প্রমুখ।
এসময় নেতৃবৃন্দরা বলেন, বীরকন্যা প্রীতিলতা সংগ্রামী চেতনা ও মুক্তির আলোক শিখা। তার আত্মত্যাগ বাঙালি জাতির এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা ও প্রোজ্জ্বল শক্তি। প্রীতিলতার আত্মাত্যাগ আজীবন বাঙালির মুক্তির পথ পরিক্রমায় দীপ্তশিখা হয়ে জাগ্রত রবে। বিজ্ঞপ্তি