আগামী নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট দেবেন

জনসভায় শেখ হাসিনা

নিজস্ব প্রতিবেদক »

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি আজ আপনাদের কাছে এসেছি একটা উপহার নিয়ে। ‘আজ দইজ্জ্যার তল দিয়ে (নদীর নিচ দিয়ে) গাড়ি চলে- অর্থাৎ টানেল। ‘এই টানেল যোগাযোগ ব্যবস্থায় দেশের ও আঞ্চলিক যোগাযোগে বিরাট ভূমিকা রেখে যাবে। এখন আর ঝড় বৃষ্টির অপেক্ষা করতে হবে না। নদীর তলদেশ দিয়ে এত বড় টানেল ধরে চলে যেতে পারবেন।’

তিনি গতকাল শনিবার বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধন শেষে দুপুরে আনোয়ারা উপজেলার কোরিয়ান ইপিজেড মাঠে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী ২০ মিনিট বক্তব্য প্রদান করেন।

তিনি বলেন, ‘এই টানেল হওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থায় উন্নতি হয়েছে। কক্সবাজারে যেতে এখন সময় অনেক কমে যাবে। আপনারা গত নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট দেওয়ায় এই উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখানে চট্টগ্রাম বন্দর। বারবার সিলটেশন (পলি জমা) হয়। যত ব্রিজ করব তত সিলটেশন হয়। তাই সিদ্ধান্ত হয় টানেল করে দেব। চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিন পিংকে ধন্যবাদ জানাই। চীন সফরে গিয়ে উনাকে এই টানেলের কথা বলেছিলাম।

চট্টগ্রামকে গুরুত্ব দেওয়ার কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা চট্টগ্রামে পানি শোধনাগার, স্যুয়ারেজ প্রকল্প, ফ্লাইওভার, বিদ্যুৎকেন্দ্র, অর্থনৈতিক অঞ্চল, এলএনজি টার্মিনালসহ এতো কিছু করছি, যা বলে শেষ করা যাবে না। কারণ চট্টগ্রাম হলো বাংলাদেশের বাণিজ্যিক রাজধানী। আমরা সেই হিসেবে চট্টগ্রামকে তৈরি করছি। এছাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় ভূমিহীন-গৃহহীনদের ঘর করে দিচ্ছি। ১৯৯১ সালে বিএনপি সরকার থাকা অবস্থায় যারা ঘূর্ণিঝড়ে বাড়ি হারিয়েছিলো, তাদের বাড়ি করে দিয়েছি।’

জনগণের ভোট নিয়ে আওয়ামী লীগ পুনরায় সরকার গঠন করতে চায় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খালেদা জিয়া ভোট চুরি করেছিল। এ কারণে তাদেরকে একবার ক্ষমতা ছাড়তে হয়েছিল। আমার একটাই কাজ দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন। আর কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই। নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আজ কর্ণফুলী টানেল পেয়েছেন, স্বাধীনতা পেয়েছেন, উন্নয়ন পেয়েছেন। আপনারা আমাদের কাছে ওয়াদা করেন আগামী নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে সেবা করার সুযোগ দেবেন। দেবেন কিনা হাত তুলে ওয়াদা করেন।

তিনি বলেন, ‘বাইরে থেকে আমরা ভ্যাকসিন কিনে আপনাদের বিনামূল্যে দিয়েছি। আমরা চাই আপনারা সুরক্ষিত থাকুন। শিশুদের পড়াশোনা যেন বন্ধ হয়ে না যায়, সেজন্য বছরের শুরুতে সবার হাতে নতুন বই তুলে দিচ্ছি। যারা বিদেশে যেতে চান, দয়া করে দালালকে টাকা দিয়ে বিদেশে যাবেন না। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক কোনো জামানত ছাড়া ঋণ দেবে। কর্মসংস্থান ব্যাংক করে দিয়েছি, সেখান থেকেও জামানত ছাড়াই ঋণ পাচ্ছে। এরমধ্যে বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক মন্দা। ইউক্রেন-রাশিয়ায় যুদ্ধ চলছে, স্যাংশন-পাল্টা স্যাংশন। এখন আবার ইসরাইলের ফিলিস্তিনের ওপর আক্রমণ। এজন্য জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গেছে।’

আওয়ামী লীগের লক্ষ্য জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা কি করেছি- বয়স্ক ভাতা দিচ্ছি, বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা নারী আর প্রতিবন্ধীদের ভাতা দিচ্ছি। শিক্ষা উপবৃত্তি দিচ্ছি। সবার হাতে হাতে এখন মোবাইল ফোন। ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করেছি। বহুমুখী উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। দারিদ্র্যের হার ৪১ থেকে ১৮ শতাংশে নামিয়ে এনেছি। গৃহহীনদের ঘর করে দিচ্ছি। জাতির পিতার বাংলায় একজন মানুষও গৃহহীন, ভূমিহীন থাকবে না, এটাই আমাদের লক্ষ্য।’

বিএনপি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বিএনপির আমলে মানুষ একবেলা নুনভাত খেতে পারত না। আজকে আমরা দারিদ্র্য মোকাবেলা করেছি। আমরা আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের মানুষের জন্য গৃহের ব্যবস্থা করেছি। নৌকায় ভোট দিলে হয়- উন্নয়ন, আর বিএনপি করে দুর্নীতি, মানুষ খুন। এরা খুন করা ছাড়া আর কিছু জানে না। ক্ষমতায় গিয়ে ২১ হাজার আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীকে খুন করেছিল। এই চট্টগ্রাম দিয়ে দশ ট্রাক অস্ত্র এনেছিল। গ্রেনেড হামলা করে আওয়ামী লীগের ২২ জন নেতাকর্মীকে হত্যা করেছিল।’

নৌকা মার্কায় ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া এতিমের টাকা এতিমকে না দিয়ে নিজে রেখে দেন। তার ছেলে তারেক রহমান বিভিন্ন মামলায় দ-প্রাপ্ত। দশ ট্রাক অস্ত্র মামলাসহ আরও অনেক মামলায় দ-প্রাপ্ত। সে মুচলেকা দিয়ে বিদেশে পালিয়ে গিয়েছিল। বিএনপি লুটপাট ও সন্ত্রাসে বিশ্বাসী। তারা খুন করা ছাড়া আর কিছু জানে না। আর আওয়ামী লীগ শান্তিতে বিশ্বাসী, উন্নয়নে বিশ্বাসী। আমাদের ভয় দেখিয়ে লাভ নাই। আমরা এই দেশকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত করেছি। তাই আপনারা নৌকা মার্কায় ভোট দেবেন, যেন এই ধারা অব্যাহত থাকে।’

তিনি বলেন, ‘আমিতো সব হারিয়েছি। আমি ও আমার বোন বাইরে থাকায় বেঁচে গেছি। এসে দেখি এখানে চারপাশে সব খুনি। এরপর সরকার গঠন করে চেষ্টা করছি আমার বাবার (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান) স্বপ্ন যেন পূরণ করতে পারি। আমি চাই, এই দেশে আর কোনো ভূমিহীন, গৃহহীন থাকবে না। কেউ না খেয়ে থাকবে না। আমরা আপনাদেরকে চাল-ডাল-তেল দিচ্ছি। দরিদ্র ও নিম্নবিত্তদের জন্যও আমরা ব্যবস্থা করেছি।’