অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহারে কড়াকড়ি আরোপ সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত

অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহারের ফলে জীবাণু এখন নিজেই প্রতিরোধী হয়ে উঠছে। এতে মানুষের মৃত্যু ঝুঁকিও বাড়ছে। দেশে শিশু থেকে বৃদ্ধ সব বয়সী মানুষের শরীরেই এখন অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে উঠছে জীবাণু। স্বাস্থ্য ঝুঁকির এই বিষয়টি খুবই উদ্বেগের বলে জানিয়েছেন দেশ-বিদেশের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। অনুমোদিত চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি বন্ধের আইন থাকলেও তা মানছে না কেউই। ব্যবস্থাপত্র ছাড়া যতদিন না ওষুধ বিক্রি বন্ধ হবে, ততদিন এর অপব্যবহার ঠেকানো যাবে না বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
বেশ আগে থেকেই ব্যবস্থাপত্র ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি না করার ব্যাপারে কঠোর সতর্কতা জারি করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মানা হচ্ছে না। অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহারের ক্ষেত্রে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া না হলে আগামী এক যুগের মধ্যে অসংক্রমণ ব্যাধিতে যে সংখ্যক মানুষ মারা যাবে, তার চেয়ে অ্যান্টিবায়োটিকের অকার্যকরণে মারা যাবে আরও কয়েক গুণ।
গবেষণায় দেখা যায়, বাজারজাতকৃত অ্যান্টিবায়োটিকের মধ্যে ১১টি সর্বাধিক ব্যবহৃত। এরমধ্যে ৫টি জীবাণু কর্তৃক প্রতিরোধী-যেটাকে বলা হয় রেজিস্টেন্স। এই জীবাণু প্রতিরোধীর কারণে ৩৪ ভাগ রোগী ভালো হয় না। কোন কোন ক্ষেত্রে আবার ৭২ ভাগ ভালো না হওয়ার রেকর্ডও আছে। কারণ শরীরে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের কার্যকরী ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। ডাক্তাররা ইচ্ছামতো অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ লিখছেন। অথচ কোন ওষুধটি প্রয়োজন সেটিও বিবেচনা করা হচ্ছে না। এতে জীবাণু প্রতিরোধী হয়ে উঠছে। আবার রোগীরা চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী অ্যান্টিবায়োটিক সেবনও করছেন না। দু-তিন দিন খাওয়ার পর শরীরে ভালো অনুভব করলে আর খান না। তখন শরীরে জীবাণু থেকে যায়। যা পরবর্তীতে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে ওঠে। তখন আর ওষুধ খেলেও রোগী সুস্থ হয় না। অনেকে আবার দাম বেশি বলে কিছুদিন খেয়েই কোর্স শেষ না করেই বন্ধ করে দেন।
এ হলো সরাসরি ব্যবহারের ক্ষেত্রে। অন্যদিকে পরোক্ষভাবেও মানুষ অ্যান্টিবায়োটিক অপব্যবহারের শিকার হচ্ছেন। যেমন ফার্মের মুরগি, গরু-ছাগল ইত্যাদির মাধ্যমেও মানব শরীরে যথেচ্ছ অ্যান্টিবায়োটিক প্রবেশ করে এবং শরীরে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী রোগ বিস্তার লাভ করে। এতদিন ধরে এমন অভিযোগ করে আসা হলেও কার্যকর কোনো উদ্যোগ ছিল না। তবে এবার প্রথমবারের মতো বিধিনিষেধ জারি করেছে সরকার।
এমন পরিস্থিতিতে খামারে ৩৪টি অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। একই সঙ্গে জীবন রক্ষাকারী এ ওষুধের যথেচ্ছ ব্যবহার বন্ধে ব্যবস্থাপত্র ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি করলে ২০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান করছে সরকার। এমনকি প্রাণি বা মৎস্য পালন করতে ভেটেরিনারিয়ান, প্রাণি চিকিৎসক, মৎস্য চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার না করতে জোর দেওয়া হচ্ছে।
একদম না হওয়ার চেয়ে দেরিকেও আমরা মেনে নিয়ে সরকারের এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাই এবং সে সঙ্গে এটাও প্রত্যাশা করব যে, এই সিদ্ধান্ত যেন কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ না থাকে। জনস্বার্থে বাস্তবে এর কঠিন প্রয়োগ চাই।