অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহার রোধে কঠোর হতে হবে

শেষ পর্যন্ত দেশে অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহার অপরাধের পর্যায়ে পৌঁছেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা। তাঁরা বলেন, সামান্য কারণে বাছবিচারহীনভাবে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। অ্যান্টিবায়োটিকের সুফল পেতে সাধারণ মানুষকে সচেতন করার পাশাপাশি পেশাজীবী চিকিৎসকদেরও সতর্ক ভূমিকা পালন করতে হবে বলে মত দেন তাঁরা।
সোমবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) মিল্টন হলে অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা বিষয়ক প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও গবেষকেরা এসব কথা বলেন। ‘জীবাণুর বিরুদ্ধে অ্যান্টিবায়োটিকের সংবেদনশীলতা’ শিরোনামের এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে বিএসএমএমইউর মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড ইমিউনোলজি বিভাগ। অনুষ্ঠানে পৃথক তিনটি মূল বক্তব্য উপস্থাপন করা হয়। এর একটিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. ফজলে রাব্বি চৌধুরী বলেন, কিছু অ্যান্টিবায়োটিক সংরক্ষিত হিসেবে বিবেচিত। এগুলো শেষ আশ্রয়স্থল। একান্ত বিপদে না পড়লে সেই অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা উচিত না; কিন্তু সামান্য কারণে এসব অ্যান্টিবায়োটিক চিকিৎসার ব্যবস্থাপত্রে লেখা হচ্ছে। এটা অপরাধ।
এর বেশি আর কতটা সতর্ক করলে দেশের চিকিৎসক, বিক্রেতা ও রোগীরা সচেতন হবে তা বুঝতে পারছি না। গবেষণায় বলা হয়েছে, ওষুধের যথেচ্ছ ও অযৌক্তিক ব্যবহার হচ্ছে। সে কারণে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ও ছত্রাক ওষুধ-প্রতিরোধী হয়ে উঠছে। তাই ওষুধ প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ও ছত্রাকে আক্রান্ত মানুষ চিকিৎসা করেও সুস্থ হয়ে উঠছেন না। মানুষ মারা যাচ্ছে। এ সমস্যা শুধু বাংলাদেশে নয়, এ সমস্যা বিশ্বজুড়ে। ২০১৯ সালে সারা বিশ্বে এই কারণে ১২ লাখ ৭০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। মনে করা হয় একই সময়ে বাংলাদেশে এই সংখ্যা ২৬ হাজারের বেশি।
অনুষ্ঠানে আইসিইউতে থাকা রোগীদের চিকিৎসায় জটিলতা নিয়েও বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা হয়। আইসিইউতে থেকে চিকিৎসা নেওয়া রোগীদের মধ্যে অ্যান্টিবায়োটিক অকার্যকর হওয়ার প্রবণতা বেশি। হাসপাতালে মানুষ একটি রোগের চিকিৎসার জন্য আসেন, এসে তাঁরা অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী অন্য রোগে আক্রান্ত হন। এটি এখন একটি বৈশ্বিক প্রবণতা।
উপস্থিত বিশেষজ্ঞগণ অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারবিধি ২০১৪ সালের পর আর হালনাগাদ না হওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেন। সে সঙ্গে সবাই মানুষকে সচেতন করার ওপরই গুরুত্ব দেন।
আসলে এক্ষেত্রে সরকার ও সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বটি বেশি। কারণ বাংলাদেশে ওষুধ বেচাকেনা শাকসবজি বেচাকেনার মতোই সহজ। অনেক মুদির দোকান কিংবা পান-সিগারেটের দোকানেও অনেক ধরনের ওষুধ পাওয়া যায়। আবার অনেক ফার্মেসিতে রেজিস্টার্ড ফার্মাসিস্টও থাকে না। ফলে যার যেমন ইচ্ছে ওষুধ কিনছে, বিক্রি করছে। কে কী বিক্রি করছে তা নজরদারি করার মতো লোকও নেই বাংলাদেশে। মানুষকে রক্ষা করতে হলে এই অরাজকতা বন্ধ করতে হবে সবার আগে। এরপর জনগণকে সতর্ক করার উদ্যোগ নিতে হবে। তা না হলে বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হবে মানবজাতিকে।