অনুদানের টাকা ফেরত দিচ্ছেন অমিতাভ

সিনেমা না নির্মাণের সিদ্ধান্ত

সুপ্রভাত বিনোদন ডেস্ক »

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার আর সরকারি অনুদান প্রাপ্তি- প্রায় সমান সুখের বিষয় যে কোনও চলচ্চিত্র নির্মাতার জন্য। প্রথম ছবি ‘আয়নাবাজি’ (২০১৬) দিয়েই রাষ্ট্রীয় পুরস্কারের সুখ অনুভব করেছেন অমিতাভ রেজা চৌধুরী। বাকি ছিলো সরকারি অনুদান। সেটিও পেলেন ২০২০-২১ অর্থবছরে। হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস ‘পেন্সিলে আঁকা পরী’র পাণ্ডুলিপি জমা দিয়ে।
ছবিটি নির্মাণের জন্য ৬০ লাখ টাকার প্রথম কিস্তি ১৮ লাখ টাকা সরকারি কোষাগার থেকে এরমধ্যে জমা পড়েছে অমিতাভের অ্যাকাউন্টে। আগে থেকেই প্রস্তুত কাস্টিং, লোকেশনসহ প্রায় সবকিছু। কিন্তু মাঠে নামার আগেই অমিতাভ রেজা সিদ্ধান্ত নিলেন, ছবিটি না বানানোর। এরমধ্যে সরকারের অনুদান কমিটির সঙ্গে আলাপও করেছেন, জানিয়েছেন তার সিদ্ধান্ত। আজ এবং কালকের মধ্যে সেপ্টেম্বর মধ্যে পুরো টাকাটাই সরকারকে ফেরত দিচ্ছেন অভিমানী অমিতাভ।
এমন ঘটনা সচরাচর ঘটেনা অনুদান শাখায়। উল্টো, অনুদানের টাকা নিয়ে বছরের পর বছর ছবি না বানানোর রীতি রয়েছে এখানে। তাহলে কী কারণে বা অভিমানে এমন সিদ্ধান্ত নিলেন অমিতাভ? জবাবে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি এই খবরটি মিডিয়াকে জানাতেই চাইনি। কারণ এক অর্থে একজন নির্মাতা হিসেবে তো এটা আমার ব্যর্থতাই। কতো মানুষ অনুদান চেয়ে পান না। আর আমি পেয়েও সেটা ফেরত দিচ্ছি।’
এই নির্মাতা জানান, ‘পেন্সিলে আঁকা পরী’ ছবিটি নির্মাণের জন্য তার দশ বছরের প্রস্তুতির কথা। তিন বছর ধরে এর চিত্রনাট্য করেছেন রঞ্জন রব্বানীকে সঙ্গে রেখে। তারও আগে দুই দফা সরাসরি হুমায়ূন আহমেদের কাছ থেকে ছবিটি নির্মাণের জন্য অনুমোদন নিয়েছেন। এরপর পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে একাধিকবার এই ছবি নির্মাণের বিষয়ে পজিটিভ আলাপ হয়েছে। অবশেষে অনুদান প্রাপ্তি। কিন্তু শেষ মুহূর্তে কেন পিছিয়ে গেলেন অমিতাভ?
‘‘মূল কারণ বলার আগে একটু প্রেক্ষাপট বলি। এই ছবিটি নির্মাণের জন্য প্রথম স্যারের কাছ থেকে অনুমতি নেন নির্মাতা আবু সাইয়ীদ ভাই। একসঙ্গে দুটি। এরমধ্যে ‘নিরন্তর’ তিনি নির্মাণ করেছেন। তখনই আমি সাইয়ীদ ভাইয়ের কাছ থেকে ‘পেন্সিলে আঁকা পরী’ নির্মাণের অনুমোদন নিই। এবং আমি আবার স্যারের কাছেও যাই। তিনি চোখ বন্ধ করে আমাকে অনুমোদন দেন। তাই নয়, স্যার চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার আগে যখন দেখা করতে যাই, তখনও তিনি তাগাদা দিচ্ছিলেন, ‘ছবিটা বানাও না কেন?’ তখন ‘আয়নাবাজি’র জন্য সুযোগ করতে পারিনি। এরপর স্যার মারা গেলেন। স্বাভাবিক নিয়মেই আমি সিনেমার বিষয়টি স্যারের পরিবারের অন্য সদস্যদেরও জানাই। তারা পজিটিভ ছিলেন। তাছাড়া এই ছবিটি অনুদান নিয়ে বানাবো- তেমন একটা বাসনাও ছিলো আমার মধ্যে। সেটি পেলামও। কিন্তু শেষ পর্যন্ত স্বপ্নের ছবিটি আমি বানাতে পারছি না। এটাই হলো চরম বাস্তবতা।’’ আক্ষেপ নিয়ে বললেন অমিতাভ রেজা।
জানা যায়, হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুর পর তার সাহিত্য ও নির্মাণ বিষয়ে কিছু নিয়ম তৈরি করা হয়েছে ট্রাস্টি বোর্ড গঠনের মাধ্যমে। যে বোর্ডে হুমায়ূন পরিবারের সদস্যরা রয়েছেন। ‘পেন্সিলে আঁকা পরী’ ছবিটি অনুদান পাওয়ার পর ট্রাস্টি বোর্ডের চূড়ান্ত অনুমোদন নিতে গেলে বেশ কিছু নতুন শর্ত সামনে আসে অমিতাভ রেজার। যে শর্তগুলো মেনে ছবিটি নির্মাণ করতে গেলে ‘গল্পটি’র প্রতি অবিচার করা হবে বলে মনে করেন অমিতাভ। তার ভাষায়, ‘আমি শর্তগুলোর বিরোধিতা করছি না। নিশ্চয়ই স্যারের কর্মগুলোকে সঠিক সুরক্ষা দেওয়ার জন্যই নিয়মগুলো করা হয়েছে। তবে সেটি পালন করে এই ছবিটি বানাতে গেলে ছবিটা আর হবে না। বরং স্যারের গল্পের অবমাননা করা হবে বলে আমি সিনেমাটি না নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অনুদান কমিটির সঙ্গেও বসেছেন অমিতাভ রেজা। কমিটির সদস্যরা বার বার তাকে অনুরোধ করেছেন, সবার সঙ্গে আবার বসে একটা সুরাহা করে ছবিটি নির্মাণের। কিন্তু অমিতাভ মনে করছেন, ছবিটি নির্মাণ হলে না হবে অনুদানের টাকাগুলোর সঠিক ব্যবহার, না হবে স্যারের গল্পটির যোগ্য উপস্থাপন। তার ভাষায়, ‘সরকারি টাকা মানে জনগণের টাকা। তো সেই টাকাগুলো নিয়ে আমি জনগণের সম্পদ নষ্ট করতে চাই না। আমি স্পষ্ট দেখতে পারছি, ছবিটি শেষ পর্যন্ত বানাতে পারবো না ট্রাস্টি বোর্ডের শর্তগুলো পূরণ করতে গেলে। তারচেয়ে সরকারের টাকাটা ফেরত দেওয়াই উত্তম।’
একাধিক সূত্র বলছে, অমিতাভের এই ছবিটি না করতে পারা বা অনুদান ফেরত দেওয়ার মূল কারণ হুমায়ূন আহমেদ ট্রাস্টি বোর্ডের বড় অংকের অর্থনৈতিক শর্ত। সিনেমা নির্মাণের আগে তো বটেই, মুক্তির পরেও রেভিনিউ শেয়ার করার নানা শর্ত রয়েছে।
তবে এসব প্রসঙ্গ এড়িয়ে অমিতাভ রেজা বলেন, ‘অর্থনৈতিক বিষয়ে আমি কিছু বলবো না। সেটা তো থাকবেই। তবে হুমায়ূন আহমেদ ট্রাস্টি বোর্ডের শর্ত বা নিয়মগুলোকে আমি রেসপেক্ট করি। বাস্তবতা হচ্ছে এই, ১০ বছর ধরে প্রস্তুতি নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হওয়ার পরও ট্রাস্টি বোর্ডের নিয়মের মধ্যে থেকে ছবিটি আমি নির্মাণ করতে পারছি না। মনে রাখতে হবে, সরকার আমাকে ৬০ লাখ টাকা দিলেও এরসঙ্গে সমপরিমাণ টাকা লগ্নি করতে হবি- যদি ছবিটি প্রপারলি বানাতে চাই। সেই প্রস্তুতিও ছিলো। কিন্তু শেষে এসে যখন জানলাম শর্তগুলো- তখন আসলে নিরুপায় হয়ে গেছি। সামনে অন্ধকার দেখছিলাম। তাই ১৮ হাজার টাকা জরিমানাসহ সরকারের কাছ থেকে প্রাপ্ত ১৮ লাখ টাকা আমি ফেরত দিচ্ছি কাল-পরশু।’
বিপরীতে অমিতাভ রেজা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন তার প্রথম ওয়েব ফিল্ম ‘মুন্সিগিরি’ নিয়ে। পূর্ণিমা-চঞ্চল চৌধুরী-শবনম ফারিয়া অভিনীত এই ছবিটি ওটিটি প্ল্যাটফর্মে উন্মুক্ত হচ্ছে শিগগিরই। এদিকে নির্মাতার মুক্তিপ্রতীক্ষিত ২য় চলচ্চিত্র ‘রিক্সা গার্ল’ নিয়ে যাচ্ছেন উত্তর আমেরিকায়। ৭ থেকে ১৭ অক্টোবর মিল ভ্যালি চলচ্চিত্র উৎসবে দেখানো হবে ছবিটি। যেখানে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকছেন অমিতাভ রেজা নিজেও। ফিরেই জানাবেন নতুন নির্মাণের ঘোষণা।