কর্মকর্তার ঘুষের টাকা গুনে নেন অফিস সহকারী মমতাজ

চকরিয়া উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের ভিডিও ভাইরাল

কর্মকর্তার ঘুষের টাকা রাখছেন অফিস সহকারী মমতাজ

নিজস্ব প্রতিনিধি, চকরিয়া »

চকরিয়া উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের অফিস সহকারীর বিরুদ্ধে গুনে গুনে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘুষ নেওয়ার একটি ভিডিও ক্লিপে দেখা গেছে অফিস সহকারী মমতাজ ভুক্তভোগী একজনের কাছ থেকে ওই টাকা নিয়ে অফিসের এক কর্মকর্তার জন্য গুনে রাখছিলেন।

ভিডিওতে দেখা যায়, চকরিয়া উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে বসে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক মমতাজ বেগম গুনে গুনে ঘুষের টাকা নিচ্ছেন। সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. আমজাদ হোসেনের জন্য টাকাগুলো নিচ্ছিলেন তিনি। নিজ কার্যালয়ে বসে ঘুষের টাকা বুঝে পাওয়ার কথা সমাজসেবা কর্মকর্তাকে মোবাইল ফোনে নিশ্চিত করতেও দেখা যায় তাকে।

সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. আমজাদ হোসেন

মমতাজ বেগমের ঘুষ নেওয়ার ভিডিও অনুসন্ধান  করে দেখা যায়, এক ব্যক্তি উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তার কার্যালয়ের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক মমতাজ বেগমের অফিসকক্ষে যান। এ সময় মমতাজ বেগমকে ওই ব্যক্তি পকেট থেকে এক হাজার টাকার বেশ কিছু নোটের একটি বান্ডিল দেন। মমতাজ বেগম জানতে চান, এখানে কত দিয়েছেন? তখন ওই ব্যক্তি গুনে নিতে বললে, মমতাজ মুখে বলতে বলেন। এরপর মমতাজ টাকার বান্ডিল হাতে নেন এবং টাকাগুলো গুনতে থাকেন।

ওই ব্যক্তি মমতাজ বেগমের উদ্দেশে বলেন, ‘আমি টাকা তুলতে পারিনি। অনেক কষ্ট করে টাকা এনেছি। প্রথম কিস্তির বরাদ্দ ১ লাখ ৯২ হাজার টাকা সই না থাকায় তুলতে পারিনি।’ তখন মমতাজ বেগম ওই ব্যক্তিকে বলেন, ‘আপনি ঠকে যাবেন। আপনার প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাবে।’ তখন মমতাজ বেগমকে তিনি অনুরোধ করে বলেন, ‘আমি বেঁচে থাকলে পাবেন।’

‘এ টাকা নিলে আমাকে বকা দিবে’ জানিয়ে মমতাজ বেগম ফোন কল দিয়ে সমাজসেবা কর্মকর্তাকে বলেন, ‘স্যার (আমজাদ হোসেন) রফিক মেম্বার ৮০ হাজার দেওয়ার কথা ছিল, ৪০ হাজার দিয়েছে। স্যার, এক মাস পর আবার বিল আছে, তখন কেটে রাখতে হবে।’

ভিডিওতে ঘুষ দেওয়া ওই ব্যক্তির নাম রফিকুল ইসলাম। তিনি হারবাং ইউনিয়নের মধ্যম পহরচাঁদা এতিমখানার সভাপতি ও সাবেক ইউপি সদস্য। এ ব্যাপারে তিনি সমাজকল্যাণমন্ত্রী, সচিব, দুদকসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

ভুক্তভোগী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ভিক্ষুকদের সেলাই মেশিন দিবে বলে আমার কাছে ৫ হাজার টাকা চাঁদা চেয়েছিল চকরিয়া সমাজসেবা অফিসার। এ চাঁদা দিতে না পারায় ২০২৩ সালের ২৬ ডিসেম্বর এতিমখানা পরিদর্শন করে।

পরদিনই আমি অফিসে যাই, কেন এসেছি জানতে চেয়ে বকাবকি শুরু করে, ‘জরিপ ও বিলের সময় দেখিয়ে ছাড়ব’ বলে হুমকি দেয়। ২০২৩ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসের বিল দাখিল করলে আমাকে বলে, পরিদর্শন কর্মকর্তা বিল না দিতে বলেছে।’

রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সমাজসেবা কর্মকর্তা আমজাদ হোসেন ও অফিস সহকারী মমতাজ বেগমের সঙ্গে তিন দফা বৈঠক করি। ২০২৩-২৪ সালের এতিমখানার বরাদ্দ প্রথম কিস্তি ১ লাখ ৯২ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকা তাদের ঘুষ দিতে হবে। অন্যথায় এতিমখানার টাকা ফেরত পাঠিয়ে দেবে। তাদের কথায় রাজি হয়ে চেক গ্রহণ করি। চলতি মাসের ৮ তারিখ সমাজসেবা অফিসে গিয়ে দুপুর ১২টার দিকে অফিস সহকারী মমতাজ বেগমকে ৪০ হাজার দিই। এ টাকা গুনে নেওয়ার সময় জানতে চান, বাকি ৪০ হাজার কোথায়? এরপর ক্ষিপ্ত হয়ে আমজাদ হোসেনকে ফোন করে বলে, রফিক মেম্বার আমার সঙ্গে বাটপারি করেছে, দ্বিতীয় কিস্তির সময় ৪০ হাজার টাকা রেখে দেব।’

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, চকরিয়া উপজেলায় সমাজসেবার তালিকাভুক্ত ২৮টি এতিমখানা রয়েছে। উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মোহাম্মদ আমজাদ হোসেন এতিমখানা অডিট করতে গেলে ১০ হাজার টাকা ঘুষ নেন। এ টাকা না দিলে অডিট না করেই চলে আসেন। এতিমখানা, বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা ও উপবৃত্তির উত্তোলনের সময় ঘুষ দিতে হয়। ঘুষ লেনদেন ছাড়াও এ কর্মকর্তার দুর্ব্যবহার করা হয়।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে গতকাল চকরিয়া উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে গেলে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক মমতাজ বেগমকে পাওয়া যায়নি। তার মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি। এসএমএস পাঠানো হলেও সাড়া দেননি।

অফিসকক্ষে ঘুষ লেনদেনের বিষয়ে জানতে চাইলে  চকরিয়া  উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আমজাদ হোসেন  বলেন, ‘টাতা নিয়েছেন অফিস সহকারী। আমি তাকে টাকা নিতে বলিনি। আপনি একটু আমার অফিসে আসেন। আপনাকে বিষয়টি বুঝিয়ে বলব। আসলে বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কক্সবাজার জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক হাসান মাসুদ বলেন, আমি ‘এ ধরনের একটি অভিযোগ পেয়েছি। এ ব্যাপারে তদন্ত চলছে। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।